ব্রাজিল: ফুটবল এবং গণপ্রতিবাদ
২২ জুন ২০১৩আরব বসন্ত থেকেই তা বোঝা গিয়েছিল অথবা বুঝতে পারা উচিত ছিল যে এ এক নতুন যুগ৷ এ যুগে মানুষজন অন্যভাবে, অন্য উপায়ে একত্রিত হয়৷ এবং একত্রিত হবার পর সেই আন্দোলন যে কোন দিকে যাবে অথবা মোড় নেবে, তা আগে থেকে বলার কোনো উপায় নেই৷ উদাহরণ: তুরস্কে যা ঘটছে৷ উদাহরণ: ব্রাজিলে কনফেড কাপ উপলক্ষ্য করে যা ঘটছে৷
কনফেড কাপে যারা সারা বিশ্ব থেকে খেলতে এসেছে, সেই নামি-দামি প্লেয়ারদেরও শুনতে হচ্ছে, ভাবতে হচ্ছে, বলতে হচ্ছে, পথের প্রতিবাদ সম্পর্কে তারা তাদের এয়ারকন্ডিশন্ড হোটেলে বসে কি ভাবছে; মাঠের গরমে, খেলার উত্তেজনার মধ্যে কি ভাবছে৷ ফুটবল এমন একটা খেলা, যা জীবনের অঙ্গ হয়ে যায়৷ প্রতিবাদও জীবনের অঙ্গ৷ কাজেই সে-ই বা ফুটবল থেকে বাদ পড়বে কেন? সেনাপুলিশ মোতায়েন করে তাকে স্টেডিয়ামের বাইরে রাখার প্রচেষ্টা করে কোনো লাভ নেই৷
আবেগ-অনুভূতি বলতে যেমন ফুটবল, তেমনই দেশপ্রেম বোঝাতেও
ব্রাজিলের কথাই ধরা যাক৷ জাতীয় একাদশের খেলোয়াড়দের মধ্যে দানি আলভেজ, দাভিদ লুইজ, হাল্ক এবং ফ্রেড, সকলেই প্রতিবাদী জনতাকে সমর্থন করে মতপ্রকাশ করেছেন৷ ‘একজন শিক্ষকের মূল্য কি নেইমারের চেয়ে কম?' জনতা এই প্রশ্ন তোলার পর ব্রাজিলের সকল আশা, সকল ভরসার নেইমারকেও ইনস্টাগ্রামে সরাসরি অভিযোগ করতে দেখা গেছে: সরকার নাকি ব্রাজিলের জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না৷
গত বুধবার ফর্তালেজা স্টেডিয়ামের পরিবেশটা ছিল বৈদ্যুতিক৷ বাইরে ১৫ হাজার প্রতিবাদী জনতার সমাবেশ৷ ভিতরে ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত বাজানো শেষ হবার পরেও প্লেয়াররা এবং ফ্যানরা গেয়ে চলেছেন সেই গান৷ ৬০ হাজার মানুষের কণ্ঠ থেকে দেশপ্রেমের অনুভূতি৷ চেলসির ডিফেন্ডার লুইজ পরে বলেন: এটা ছিল তাঁর জীবনের সুন্দরতম মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি৷ ক্যাপ্টেন থিয়াগো সিলভা চোখ বুজে, আকাশের দিকে মুখ তুলে গান গেয়ে চলেছেন৷ তরুণ মিডফিল্ডার অস্কারের চোখে জল৷
সাবধানের মার নেই
অন্য দেশের প্লেয়ারদেরও ভাবতে হচ্ছে৷ উরুগুয়ের স্ট্রাইকার দিয়েগো ফরলান বলেছেন, বিশ্বকাপের দরুণ সারা দুনিয়ার চোখ ব্রাজিলের দিকে৷ কাজেই ব্রাজিলের জনগণের পক্ষে এটাই প্রতিবাদ জানানোর সেরা সময়৷ উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজ আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ জানানোর ‘‘অধিকারের'' কথা বলেছেন৷ অপরদিকে নাইজিরিয়ার কোচ ফুটবলকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার পক্ষপাতী৷ মেক্সিকোর কোচ তাঁর প্লেয়ারদের বাইরের ঘটনাবলী থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন৷ সাবধানীদের দলে অবশ্যই ফিফার প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার-এর নাম করতে হবে, যিনি কনফেড কাপ আর পথের প্রতিবাদের মধ্যে কোনো ‘‘ক্রসওভার'' চান না৷
ব্লাটার হয়ত ভাবছেন: এ তো শুধু কনফেড কাপ৷ এরপর বিশ্বকাপ এলে কি হবে?
এসি/ডিজি (এএফপি)