ব্রিটিশ কূটনীতিকদের পাশে ‘কোণঠাসা' জনসন
১২ জুলাই ২০১৯ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগের ফলে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বরিস জনসন৷ মঙ্গলবার টেলিভিশন বিতর্কে তিনি সমর্থন না জানানোর ফলেই রাষ্ট্রদূত কিম ড্যারক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, বিভিন্ন মহলে এমন অভিযোগ উঠেছে৷ সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে সংকটের সময় দেশের কূটনীতিকদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত নন, এমন একটা ধারণা প্রার্থী হিসেবে জনসনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে৷ এমনকি টোরি দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে৷ বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জনসনের ঘনিষ্ঠতা ও তাঁর প্রতি ‘আনুগত্য' ব্রিটেনের স্বার্থ খর্ব করতে পারে বলে অভিযোগ উঠছে৷
এমন পরিস্থিতিতে কোণঠাসা জনসন চাপের মুখে গোটা বিশ্বে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করলেন৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি ডনাল্ড ট্রাম্প-এর সামনে বলিষ্ঠ অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার এক নির্বাচনি সভায় তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক বর্তমান যুগের সবচেয়ে কৌশলগত বাস্তব৷ কিন্তু তিনি নিজে আগেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-এর সমালোচনা করেছেন, প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও করবেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জনসন বৈশ্বিক উন্নয়ন ও ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন বলে মনে করিয়ে দেন৷
ব্রিটেনের জনপ্রিয় ‘সান' সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বরিস জনসন গোটা ঘটনায় নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ ড্যারক-এর পদত্যাগের জন্য তাঁকে যেভাবে দায়ী করা হচ্ছে, সেই বিষয়টিকে তিনি ‘অদ্ভুত' হিসেবে তুলে ধরেন৷ জনসন বলেন, কিম ড্যারক-এর সঙ্গে তিনি অনেক বছর কাজ করেছেন এবং তাঁর বড় সমর্থক৷
জনসন-এর প্রতিদ্বন্দ্বী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট শুরু থেকেই কিম ড্যারক-এর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থরক্ষায় প্রয়োজনে কড়া অবস্থান নিতে প্রস্তুত৷ বৃহস্পতিবার তিনি ব্রিটিশ কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে কোনো ভয়ভীতি ছাড়া ভবিষ্যতেও খোলামেলাভাবে মত প্রকাশ করে যাবার আহ্বান জানান৷ হান্ট বলেন, একমাত্র ব্রিটেনের সরকার জাতীয় স্বার্থে কূটনীতিকদের নিয়োগ করেন৷
ব্রিটেনের বিরোধী লেবার পার্টিও বরিস জনসন-এর কড়া সমালোচনা করেছে৷ দলের পক্ষ থেকে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী টেরেসে মে-র উদ্দেশ্যে কার্যভার হস্তান্তরের আগেই ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ লেবার দলের মতে, ক্ষমতায় এসে জনসন যাতে পছন্দের প্রার্থীকে এই পদে নিয়োগ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে এমনটা করা প্রয়োজন৷ তবে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ড্যারক-এর উত্তরসূরী খোঁজা কঠিন হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, ব্রিটেন নীতিগতভাবে কূটনীতিকদেরই রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করে৷ নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত নেন৷ রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিত্বকে এমন পদে নিযুক্ত করা হয় না৷ বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে সেই রীতি ভঙ্গ করে তিনি ব্রেক্সিটপন্থি ও ট্রাম্প-এর পছন্দের কোনো ব্যক্তিকে ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করতে পারেন৷ এ ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট পার্টির নেতা মাইকেল ফারাজ-এর নাম বার বার উঠে আসছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এপি)