‘অলীক’ স্বপ্ন দেখছেন টেরেসা মে
৪ অক্টোবর ২০১৮ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিদায়ের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ব্রিটেনের সরকার ততই তার নিজস্ব অবস্থান আঁকড়ে ধরছে৷ মঙ্গলবার বার্মিংহাম শহরে ক্ষমতাসীন টোরি দলের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আবার তাঁর ‘চেকার্স’ পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, দল ও দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড় দিতেই হবে৷ এমনকি শেষ পর্যন্ত ইইউ-র সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া না হলেও আতঙ্কের কোনো কারণ দেখছেন না মে৷ তাঁর মতে, প্রথমদিকে কিছুটা অসুবিধা হলেও ব্রিটেন অবশ্যই সেই ধাক্কা সামলে নেবে৷ মোটকথা, যাবতীয় আশঙ্কা সত্ত্বেও ব্রেক্সিট সম্পর্কে এক ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরলেন মে৷
বিশেষ করে নিজের দলের মধ্যে তাঁর বিরোধীদের কোণঠাসা করতে টেরেসা মে যত বেশি সম্ভব সমর্থন আদায় করতে বদ্ধপরিকর৷ মঙ্গলবার নাচতে নাচতে মঞ্চে প্রবেশ করে নিজেকে নিয়ে মস্করা করে তিনি পরিবেশ কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করেন৷ দলের মধ্যে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা এখনো তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা না করলেও নেতা হিসেবে টেরেসা মে সেই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারছেন না৷
টেরেসা মে সরকারের ‘চেকার্স’ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করার পর শুধুমাত্র পণ্যের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপের বাজারে থেকে যাবে৷ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে জাতীয় নীতি প্রণয়নে কোনো বাধা থাকবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু থেকেই এমন প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছে৷ এই রাষ্ট্রজোটের অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য, অর্থ, পরিষেবা ও মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো রকম বাধা নেই৷ এই মৌলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে কোনোরকম আপোশ মেনে নিতে প্রস্তুত নয় ব্রাসেলস৷ অর্থাৎ, ব্রিটেনকে হয় পুরোপুরি এই শুল্ক-জোটে অংশ নিতে হবে, কিংবা তার বাইরে থাকতে হবে৷ তাই অস্ট্রিয়ার সালৎসবুর্গ শহরে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ‘চেকার্স’ পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন৷
আগামী ১৮ই অক্টোবর ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে নৈশভোজে ইইউ নেতারা টেরেসা মে-কে ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য পেশ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ প্রথমে বিচ্ছেদের খুঁটিনাটি বিষয়, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে চান তাঁরা৷ অক্টোবর মাসে দুই পক্ষ ঐকমত্যে না পৌঁছালে আগামী বছরের মার্চ মাসে কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হতে চলেছে৷ ফ্রান্স সেই পরিস্থিতির প্রস্তুতি হিসেবে আইনের একটা খসড়াও তুলে ধরেছে৷
ঘরে-বাইরে চাপের মুখে টেরেসা মে আত্মরক্ষার নতুন কৌশল গ্রহণ করছেন বলে দাবি করেছে ব্লুমবার্গ নেটওয়ার্ক৷ শেষ পর্যন্ত ইইউ-র সঙ্গে চুক্তি সম্ভব হলেও নিজের দলের মধ্যে বিরোধীরা তা বানচাল করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি৷ সে ক্ষেত্রে চরম অরাজকতা দেখা দেবে৷ তাই মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেই চুক্তি সংসদে অনুমোদন করাতে চান তিনি৷ ব্রিটেনের চূড়ান্ত সম্মতির পর ইইউ'র বাকি সদস্য দেশগুলিকেও নিজেদের সংসদে সেই চুক্তি অনুমোদন করতে হবে৷ তবেই ২০১৯ সালের মার্চ মাসে কোনো বিঘ্ন ছাড়াই ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করতে পারবে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)