‘লোকসান হবে যুক্তরাজ্যের’
৩১ জানুয়ারি ২০১৮গোপন এ রিপোর্টটি প্রস্তুত করা হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের ব্যবহারের জন্য, কিন্তু সোমবার তা ফাঁস হয়ে যায়৷ বাজফিড নিউজের খবর অনুযায়ী রিপোর্টে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার ফলে যাবতীয় ব্রিটিশ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
এ খবর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সরকারের পক্ষে আরো একটি বিড়ম্বনা হয়ে উঠেছে, কেননা মে সরকার এর আগেই অন্যান্য ইইউ নেতাদের কাছ থেকে সমালোচনা শুনেছেন যে, লন্ডনের কোনো সঙ্গতিপূর্ণ ব্রেক্সিট নীতি নেই৷
বাজফিড নিউজের খবর অনুযায়ী রিপোর্টে বলা হয়:
- ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ‘ইইউ এক্সিট অ্যানালিসিস – ক্রস হোয়াইটহল ব্রিফিং' শীর্ষক রিপোর্টটিতে তিনটি সম্ভাব্য ব্রেক্সিট সিনারিও-র দিকে নজর দেওয়া হয়েছে;
- প্রোজেকশনে দেখা যাচ্ছে যে, ব্রিটেন যদি ব্রাসেলসের সঙ্গে একটি ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্রেক্সিট পরবর্তী ১৫ বছরে আট শতাংশ অবধি কমে যেতে পারে;
- সবচেয়ে ভালো সিনারিও-র ক্ষেত্রে, অর্থাৎ ব্রিটেন যদি ইইউ-এর সদস্য না হয়েও ব্লকের সিঙ্গল মার্কেটে থাকতে পারে, সে পরিস্থিতিতেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশ কমবে;
- যুক্তরাজ্য যদি ইইউ-এর সঙ্গে একটি সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারে, কিন্তু ইইউ-এর একক বাজার ও শুল্ক সংঘের বাইরে থেকে, সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হ্রাস ঘটবে বর্তমানে যা ধরা হচ্ছে, তার চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি;
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও অপরাপর দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বটে, কিন্তু ইইউ থেকে যে পরিমাণ আয় হতো, সে লোকসান মেটানো এই বহির্বাণিজ্যের পক্ষে সম্ভব হবে না;
- একমাত্র কৃষি ছাড়া ব্রিটেনের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি বিভাগের উপর ব্রেক্সিটের নেতিবাচক ফলশ্রুতি ঘটবে ও আন্তর্জাতিক অর্থবাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের মর্যাদার আন্তরিক ক্ষতি ঘটবে;
- ব্রিটেন ইইউ ছাড়ার পর ব্রিটেনের অর্থনীতি যে নেতিবাচক মোড় নিতে পারে, সে বিষয়ে আগেও একাধিক রিপোর্টে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে৷
সরকারি তরফে রিপোর্টের কথা অস্বীকার করা হয়নি
‘ডিপার্টমেন্ট ফর এক্সিটিং দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন' – বা ব্রেক্সিট সংক্রান্ত সরকারি বিভাগ – রিপোর্টটির সত্যতা অস্বীকার না করলেও, রিপোর্টের বক্তব্য সম্পর্কে কোনোরকম মন্তব্য করতে অরাজি৷ বাজফিড নিউজ-কে যিনি খবরটি প্রদান করেন, সেই সূত্র রিপোর্টটি প্রকাশ না করার কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘‘রিপোর্টটি লজ্জাকর৷''
মঙ্গলবারের মধ্যেই একাধিক ব্রিটিশ সাংসদ সরকারের প্রতি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টটি প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ লেবার এমপি এবং ‘লিভ ওয়াচ' নামের ব্রেক্সিট ওয়াচডগ গোষ্ঠীর সভাপতি চুকা উমুন্না সরকারের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করেছেন৷
সরকার কিন্তু রিপোর্টটি প্রকাশ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র এক মুখপাত্র বলেছেন, রিপোর্টটিতে শুধুমাত্র একটি ‘‘আংশিক'' মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং সরকার যে ইইউ-এর সঙ্গে আলোচিত ও সমন্বিত ব্রেক্সিটের পন্থা সন্ধান করছেন, রিপোর্টে তা বিবেচনা করা হয়নি৷
সংসদে প্রদত্ত মন্তব্যে ব্রেক্সিট মন্ত্রী স্টিভ বেকার রিপোর্টটিকে ‘‘প্রাথমিক বিশ্লেষণের বাছাই ব্যাখ্যা'' বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমাদের প্রস্থান ব্যাহত করার জন্য'' রিপোর্টটি ফাঁস করা হয়েছে৷ বেকার সাংসদদের সাবধান থাকতে বলেন, কেননা এযাবৎ বহু ব্রেক্সিট বিশ্লেষণ ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে৷
কোণঠাসা
ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ ও ইইউ-এর সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হওয়ার মধ্যে ২১ মাসের একটি ক্রান্তিকালের ব্যবস্থা রেখেছে ইইউ-এর বাকি ২৭টি সদস্যদেশ – এই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘ইইউ এক্সিট অ্যানালিসিস – ক্রস হোয়াইটহল ব্রিফিং' শীর্ষক রিপোর্টটি ফাঁস হয়ে যায়৷ ইইউ-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্রিটেন ঐ ২১ মাসের ক্রান্তিকালে সদস্য হিসেবে তার যাবতীয় সুযোগসুবিধা বজায় রাখতে পারবে, কিন্তু কোনো নতুন ইইউ আইন রুখতে বা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারবে না৷
উদ্বেগ কী নিয়ে এবং কেন?
২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ব্রিটেন ইইউ পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেবার পর দ্বীপরাজ্যটিতে যে গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে, এই রিপোর্ট তার আরো একটি প্রতিফলন৷ ব্রেক্সিট নয়, শুধুমাত্র ব্রেক্সিট সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি হিসেবে ইউরো ও ডলারের তুলনায় ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম পড়েছে; ২০১৭ সালের শেষ তিন মাসে ব্রিটিশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল আধ শতাংশ; লন্ডনে অস্থাবর সম্পত্তির বাজারে তেজি কমতে বসেছে; সম্প্রতি মনার্ক বিমান পরিবহণ সংস্থা বা ক্যারিলিয়ন আউটসোর্সিং পরিষেবা সংস্থা দেউলিয়া হওয়ার কারণ হিসেবেও অনেকে ব্রেক্সিটকে দোষী করছেন৷
এই পরিস্থিতিতে নতুন রিপোর্টটি ফাঁস হওয়ায় সবচেয়ে ‘নরম' ব্রেক্সিট, এমনকি ব্রেক্সিট নিয়ে একটি দ্বিতীয় গণভোটের দাবি আরো জোরদার হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)