ব্লগার অনন্ত হত্যা
৯ জুন ২০১৫তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি-র ইন্সপেক্টর আরমান আলী ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘ফটো সাংবাদিক ইদ্রিস আলী কোনো না কোনোভাবে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানেন৷ তিনি হত্যাকাণ্ডের কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনন্ত দাসের পড়ে থাকা রক্তাক্ত দেহের ছবি তুলেছেন৷''
১২ই মে সকালে খুন হন অনন্ত বিজয় দাস৷ আর ১৩ই মে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক সুবজ সিলেট-এ খুনের ঘটনার এই ছবিটি ছাপা হয়৷ সিলেটের সুবিদবাজারে দুর্বৃত্তরা অনন্তকে কোপানোর পর কয়েক মিনিট তাঁর দেহ মাটিতে পড়েছিল৷ সেই অল্প কয়েক মিনিটে তোলা একটি ছবি ইদ্রিসের পত্রিকা সবুজ সিলেটে ছাপা হয়৷ ছবিতে দেখা যায় নিজ বাসার সামনে মাটিতে পড়ে আছে অনন্ত দাসের রক্তাক্ত দেহ৷ মাথা থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত৷ পাশেই বসে আহাজারি করছেন অনন্তের বোন৷ ছবির ক্যাপশনে বলা হয় ফেসবুক থেকে সংগৃহীত৷
কিন্তু পুলিশের দাবি ফেসবুকে ওই ছবির কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি৷ সিআইডি-র দাবি, ‘‘ফেসবুকের সূত্র দিয়ে ছাপা হওয়া ছবিটি তুলেছিলেন জাতীয় দৈনিক সংবাদ এবং স্থানীয় দৈনিক সবুজ সিলেটের ফটো সাংবাদিক ইদ্রিস আলী৷ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই রোববার রাতে নিজ বাসা থেকে ইদ্রিসকে আটক করা হয়৷'' আটকের পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ সোমবার দুপুরে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাঁকে৷
রিমান্ডের আবেদনে অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডি-র পরিদর্শক আরমান আলী বলেছেন, ‘‘হত্যাকাণ্ডের সময় ইদ্রিস আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল৷ পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবিটি ঘটনাস্থল থেকে ইদ্রিস তুলেছেন৷'' ইদ্রিস হত্যাকাণ্ডের সাথেসাথেই কিভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেন, কারা তাকে এ খবর দিলো রিমান্ডে এ সব ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিআইডি আদালতে রিমান্ড আবেদন জানায়৷
রিমান্ড আবেদনে সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী আরো উল্লেখ করেন, ‘‘মামলার তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও বিভিন্ন সোর্সের পাওয়া তথ্যে প্রতীয়মান হয় আসামি মো. ইদ্রিস আলী এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত৷ তিনি একজন ‘‘জঙ্গি অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য৷''
ইদ্রিসের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ইদ্রিস মাদ্রাসায় আলিম পর্যন্ত পড়াশোনা করে দৈনিক সংবাদ-এর সিলেটের ফটো সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন৷ স্থানীয় দৈনিক সবুজ সিলেট-এর ফটো সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করতেন৷ তবে ইদ্রিসের গ্রেপ্তার নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
তদন্ত কর্মকর্তা আরমান আলী জানান, ‘‘ইদ্রিসকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে এখন তা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না৷''
গত ১২ই মে সকালে কর্মস্থলে যেতে বাসা থেকে বের হয়ে সিলেটের সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকার চৌরাস্তা মোড়ে পৌঁছালে অনন্তকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ ঘটনার দিন রাতে সিলেটের বিমানবন্দর থানায় অনন্তের বড় ভাই বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ ২৫শে মে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়৷ গত শুক্রবার থেকে ঢাকার সিআইডি-র একটি তদন্ত দল সিলেটে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত শুরু করে৷