ব্লগারদের হত্যার হুমকি এবং তারপর...
১ জুন ২০১৫ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান'-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অনন্য আজাদকে ফেসবুকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷
এরপর ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া'-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হত্যার হুমকি পাওয়ার পর তিনি এখন দেশ ত্যাগের চিন্তা করছেন৷
ঢাকার রাস্তায় হাঁটার সময় নিরাপত্তার খাতিরে অনন্য আজাদ হেলমেট পরছেন বলেও ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া'-র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আজাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গেলে সেরকম একটি ছবির দেখা পাওয়া যাবে৷ ১৩ই মে প্রকাশ ঐ ছবিটি শেয়ার করে আজাদ লিখেছেন, ‘‘নিজের নিরাপত্তা নিজেরই নিশ্চিত করতে হবে৷''
এদিকে, ইসলামপন্থিদের তৈরি করা হিটলিস্টে সবাক পাখি'রও নাম রয়েছে৷ এ ব্যাপারে কদিন আগে এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি তিনি তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেছেন৷ সেখানে তিনি হিটলিস্টকে ‘ফাউল তালিকা' বলে আখ্যায়িত করেন৷ এরপর ঐ সাংবাদিক তাঁকে নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘...এই দেশে কেবল ঐ ৮৪ জনই হুমকির মুখে নাই৷ প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী, সমাজকর্মী, লেখক, এমনকি আপনার মতো সাংবাদিকরাও হুমকির মুখে৷ আসলে পুরো দেশটাই হুমকির মুখে৷ আমি সবার নিরাপত্তা চাই৷ এমনকি যেসব কিশোর, যুবক ব্রেইন ওয়াশড হয়ে চাপাতি হাতে রাস্তায় নেমেছে, আমি তাদেরও নিরাপত্তা চাই৷ আমি চাই তারা যেন খুনি না হয়, এ জন্য রাষ্ট্রের কর্মসূচি থাকুক৷ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা চাই৷''
বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে সবাক পাখি জানান, ‘‘... যারা খুন করছে, তারা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য এটা করছে৷ আমি এই আতঙ্ক গ্রহণ করছি না৷ এই আতঙ্ক প্রত্যাখ্যান করছি৷ ... আমি বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করিনি, নতুন নম্বর নিইনি৷ দেশটা আমাদের, এই দেশে আমরা থাকবো৷''
সবাক পাখির এই স্ট্যাটাসে অনেকে মন্তব্য করেছেন৷ যেমন মাহফুজ কাজল লিখেছেন, ‘‘পালিয়ে যান৷ এইসব আবেগ দিয়ে এদেশে বিপদ ছাড়া কিছু পাবেন না৷ মরবেন, আর মারবেন পুরা ফ্যামিলিটাকে৷ আমরা দুইদিন ফেসবুক ঝড় দেখব, তারপর হন্যে হয়ে আবার সানি লিওন খুঁজবো৷ যতই আশাবাদী হন, যতই ভালোর অপেক্ষা করেন, এদেশ আরও খারাপই হবে৷ আমরা আর রাজীব-অভিজিৎ- অনন্ত-র পরিণতি দেখতে চাই না৷''
বাংলাদেশে ব্লগারদের হুমকি পাওয়া নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ভাইস নিউজ৷
সাংবাদিক ও ব্লগার শামীমা মিতু ‘ব্লগার হত্যা, ধর্মানুভূতি ও সোজাসাপ্টা কিছু কথা' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখেছেন৷ সেখানে একেক পর এক ব্লগার হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্র যদি সত্যি মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরেপেক্ষ নীতি বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে রাষ্ট্রকে এ ধরনের নৃশংস খুনের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে, খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷ ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জামায়াত-হেফাজত তোষণের দ্বৈতনীতি নিয়ে দেশ চালালে এ দেশের পরিণতি পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতোই হবে৷ আর এমন আশঙ্কাই দিন দিন তীব্র হচ্ছে!''
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ