যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিষিদ্ধের দাবি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কথা বলা হয়েছে তিনজন বাংলা ব্লগারের সঙ্গে, যারা শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই রয়েছেন৷
শাহবাগের আন্দোলনকারীদের মূল দাবি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে কিছু মহল৷ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্লগার সম্পর্কে নেতিবাচক বিভিন্ন কথা ইন্টারনেটে প্রকাশ করে শাহবাগের মূল দাবিকে আড়াল করার চেষ্টাও করা হচ্ছে৷ এসবের প্রেক্ষিতে গত উনিশে ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চ থেকে একটি ঘোষণা প্রদান করেন ব্লগারস অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার৷ তিনি জানান, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট করার দাবির বাইরে গণজাগরণ মঞ্চের অন্য কোনো দাবি নেই৷''
ইমরানের মন্তব্য
গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এই ঘোষণার পর ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে ইমরান এইচ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়৷ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কিসের ভিত্তিতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলা হচ্ছে? ইমরান বলেন, ‘‘যেহেতু জামায়াত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে৷ একজনের ফাঁসির রায় হয়েছে, আরেকজনের বিচার প্রক্রিয়াধীন আছে৷ আমরা চাচ্ছি, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে এই দলটিকে (জামায়াত-শিবির) নিষিদ্ধ করা হোক৷''
উল্লেখ্য, গত পাঁচই ফেব্রুয়ারি এই ব্লগারস অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের ডাকেই সমাবেশ শুরু হয়েছিল শাহবাগে৷ সেদিন যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় প্রদান করা হয়৷ কিন্তু সাধারণ জনতা মোল্লার জন্য যাবজ্জীবন শাস্তি যথেষ্ট মনে করেনি৷ তাই শাহবাগে অবস্থান শুরু করে সবাই৷ সেই অবস্থান কর্মসূচি এখন চলছে৷
আরিফ জেবতিকের মন্তব্য
শাহবাগের এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধ, যুদ্ধাপরাধ৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের এখন বক্তব্য নেই৷ আমরা সবাই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাস্তায়৷''
এখানে বলা প্রয়োজন, গত ১০ই ফেব্রুয়ারি শাহবাগের আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে তাদের ছয় দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করে৷ এতে তৃতীয় দাবিটি ছিল, ‘‘জামায়াত-শিবিরসহ ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ ও গৃহযুদ্ধের হুমকি দাতা জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা৷'' (দৈনিক জনকণ্ঠ, ১১ ফেব্রুয়ারি)
আরিফ জেবতিক বলেন, এই দাবিটি লেখার সময় শব্দ চয়নে কারিগরি ভুল ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘শব্দ চয়নে কারিগরি ভুল ছিল৷ এটা ‘ধর্মের নামে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি...' এভাবে হওয়ার কথা ছিল৷''
ডয়চে ভেলের সেরা বাংলা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার বিজয়ী এই ব্লগার বলেন, ‘‘শাহবাগের আন্দোলনের পেছনে কোন বড় নেতা নেই৷ এটার পেছনে অনেক মানুষ, অনেক তরুণ রয়েছেন, তারা তাদের মতো আন্দোলন করছেন৷ প্রফেশনাল রাজনীতিবিদরা এটা করে না৷ ফলে অনেক ধরনের টেকনিক্যাল টার্ম ওরা বুঝতে পারছে না৷ কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ অনেক বড় শক্তি, রাজনৈতিক শক্তি৷''
আসিফ মহিউদ্দিনের মক্তব্য
শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন আরো অনেক ব্লগার৷ এদের একজন আসিফ মহিউদ্দীন৷ গত মাসে উত্তরায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি৷ কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এই ব্লগার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম রাজনীতির বিরোধী আমি৷ কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনে আমাদের দাবি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে৷ এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে আমার দাবিও সেটাই৷''
ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার একটি বিভাগে ‘ইউজার প্রাইজ' জয়ী আসিফ বলেন, ‘‘তাদের (জামায়াত-শিবির) বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মত বড় অপরাধের অভিযোগ আছে এবং কোন ব্যক্তিগত উদ্যোগে তারা যুদ্ধাপরাধ করেনি৷ তারা দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং গণধর্ষণ করেছে, গণহত্যা করেছে৷ এই কাজগুলো আমরা যদি সামনে নিয়ে আসি, তাহলেই তাদেরকে নিষিদ্ধ করা যায়৷''
উল্লেখ্য, গত পাঁচই ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জামায়াতের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে৷ সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন কর হয়েছে৷ ফলে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতকে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ রয়েছে৷