1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাষ্ট্রীয় নির্লিপ্ততা, উদ্বিগ্ন ব্লগাররা'

সমীর কুমার দে, ঢাকা১ জুন ২০১৫

একজন খুন হওয়ার পর, আসামী গ্রেপ্তারের আগেই খুন হচ্ছেন আরেকজন৷ এমন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতিকেই দায়ী করছেন সবাই৷ সর্বশেষ ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে এখনও৷

https://p.dw.com/p/1FaCN
Bangladesch Proteste gegen den Mord an den Blogger Ananta Bijoy Das
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় নির্লিপ্ততা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমি অদক্ষ বলবো না৷ তারা তো অনেক ভালো কাজ করছে! তাই কেন তারা ব্লগার হত্যাকারীদের ধরছে না – সেটা আমারও প্রশ্ন৷ তবে রাষ্ট্রযন্ত্র যদি ব্লগার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে আন্তরিক হতো, তাহলে অবশ্যই খুনিরা ধরা পড়ত৷ রাষ্ট্রযন্ত্রের আন্তরিকতা তো দূরে থাক, উল্টো তারা ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সঙ্গে আপস করে৷ কখনও কখনও বৈঠকও করে৷ তাহলে এরা উৎসাহী হয়ে হত্যাকাণ্ড তো ঘটাবেই৷''

পরপর কয়েকজন ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী ও ভাষাতত্ত্ববিদ ড. হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদকে ক্রমাগত হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে মৌলবাদী জঙ্গিরা৷ তিন সপ্তাহ আগে থেকে তাঁর ফেসবুক আইডিতে এ হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ সর্বশেষ, ২২শে মে দুপুরে অকথ্য ভাষায় অনন্য আজাদকে গালিগালাজ করা হয় এবং তাঁর মাথা কেটে রাজু ভাস্কর্যে ঝুলিয়ে রাখার হুমকি দেওয়া হয়৷ এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনের দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান' গত ২৮শে মে ‘বাংলাদেশ ব্লগার নেমড অন হিটলিস্ট ওয়ার্নড: ইউ উইল বি নেক্সট' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এরপর গত ৩০শে মে ভারতের দৈনিক ‘দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া' প্রায় একই শিরোনাম করে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷

ড. হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদও তাঁর বাবার অনুসারী৷ তিনিও ধর্মীয় উগ্রপন্থার কট্টর সমালোচক৷ এদিকে, যে ৮৪ জন ব্লগারকে হত্যার তালিকা তৈরি করা হয়েছে, সে তালিকায় অনন্য আজাদের নাম রয়েছে৷ উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে এক দল ধর্মীয় মৌলবাদী ৮৪ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে তাদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানায়৷ এ পর্যন্ত যতজন ব্লগার খুন হয়েছেন, তাঁদের সবাই এই ৮৪ জনের তালিকায় ছিলেন৷ সর্বশেষ গত ১২ই মে অনন্ত বিজয় দাস নামে মুক্তচিন্তার এক ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখককে সিলেটে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ তিনি হচ্ছেন চতুর্থ ব্যক্তি, যাঁকে একই কায়দায় রাস্তায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ ২০১৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রথম আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে হত্যা করা হয়েছিল৷

অনন্য আজাদ গার্ডিয়ানকে জানান, ‘‘গত মার্চ মাসে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যার পর অনেকেই আমাকে লেখালেখি থেকে বিরত থাকতে বলেছেন৷ কিন্তু আমি লেখালেখি বন্ধ করব না৷'' এ ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন কিনা জানতে চাইলে অনন্য আজাদ বলেন, ‘‘না, এ দেশে জিডি করে কিছু হয় না৷ তাছাড়া নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি মোটেই চিন্তিত নই৷'' তিনি জানান, তিনি তাঁর লেখা চালিয়ে যাবেন এবং এ হুমকির কারণে মোটেই ভীত নন তিনি৷

ধর্মীয় মৌলবাদের সমালোচনা করায় এর আগে চারজন ব্লগারকে হত্যা করা হয় বাংলাদেশে৷ তাই বর্তমানে অনেক ব্লগারই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ ধর্মীয় মৌলবাদীদের দেয়া ৮৪ জনের তালিকায় থাকা একজন ব্লগার সোমবার ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ‘‘লেখালেখি তো বন্ধ করা সম্ভব নয়, রক্তের সঙ্গে এটা মিশে গেছে৷ নিজের ‘আইডি' পরিবর্তন করে লিখছি৷ তবে তারপরও ওরা বুঝে যাবে৷ আসলে সরকার আন্তরিক হলে জঙ্গিরা ভয় পেত৷ কিন্তু সরকারের আন্তরিকতা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই লেখালেখি করছি৷ কপালে যা আছে, তাই হবে৷''

অপর একজন ব্লগার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সংখ্যা যে বাড়ছে, তা এখন দৃশ্যমান৷ কারণ এর মধ্যে বেশ কয়েকজন জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস সদস্য আটক হয়েছে বাংলাদেশে৷ এর অর্থ, আরো অনেক আইএস সদস্য দেশে আছে৷ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের যখন পুলিশ গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে, তখন আইএস-এ যোগ দেয়ার প্রবণতা ভালো আলামত না৷ উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সদস্যরা আইএস-এ যোগ দিচ্ছে৷ এর মধ্যে যারা ধরা পড়েছে তাদের একজন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছেলে, আরেকজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার ছেলে৷ এতে বোঝা যাচ্ছে, উচ্চ শিক্ষিত পরিবারেও ধর্মীয় উগ্রবাদীতা আছে৷''

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে৷ পুলিশ আন্তরিকতা নিয়ে তদন্ত কাজ করছে৷ মনে রাখতে হবে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো অন্য হত্যাকাণ্ডগুলোর মতো না৷ জঙ্গিদের যারা খুন করতে আসে তারা ধর্মীয়ভাবে অন্ধ! ফলে অন্যদের ব্যাপারে কোনো তথ্যই দিতে পারে না৷ এ জন্যই এদের মূল ‘চেইন' খুঁজে বের করতে সময় লাগছে৷ তবে কেউই ধরাছোয়ার বাইরে থাকবে না৷''

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ব্যানারে জঙ্গিরা একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছিল৷ এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ করায় এখন ভিন্ন নামে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷ আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা নিয়েছি৷''

তাই শিগগিরই এদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন মনিরুল ইসলাম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য