ব্ল্যাক নাইট জঙ্গিরা সন্ত্রাস বাড়াচ্ছে পাকিস্তানে
১৩ অক্টোবর ২০১১গত জুন মাসের একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক৷ আফগানিস্তান পাকিস্তান সীমান্তের ডেরা ইসমাইল খান এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে একদল ব্যাঙ্ক ডাকাত একটি ব্যাঙ্ক লুঠ করে৷ ব্যাঙ্কে ডাকাতি করতে গিয়ে তারা বেশ কয়েকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে, তারপর লুঠের অর্থ নিয়ে তারা যখন গাড়িতে একটি সেতু পেরিয়ে আফগানিস্তানে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখনই পুলিশের চ্যালেঞ্জ৷ পুলিশের সঙ্গে লড়াইতে তালেবান জঙ্গিদের সকলেই মারা পড়ে৷ লুঠের টাকাও ফিরে যায় ব্যাঙ্কে৷
ঘটনা এখানেই শেষ নয়৷ দশদিনের মধ্যে সেই ডেরা ইসমাইল এলাকার একটি পুলিশ চৌকিতে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী জোড়া মানববোমা পাঠায় তালেবান৷ কারণ অবশ্যই সেই ব্যাঙ্ক ডাকাতদের হত্যার বদলা৷ বিস্ফোরণে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িটি বিদ্ধস্ত হয়৷ নিহত হন নয়জন পুলিশ অফিসার৷
এভাবেই কাজ করছে ব্ল্যাক নাইট গ্রুপ৷ হাকিমুল্লা মেসুদ আর ওয়ালিউর রেহমান মেসুদের নেতৃত্বে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ হল বিশেষ করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাঙ্ক ডাকাতি, অপহরণ, তোলাবাজি, এসবের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা৷ কারণ, বিশ্বজুড়ে হাওয়ালা এবং অন্যান্যভাবে অবৈধ উপায়ে অর্থ এদেশ থেকে ওদেশে পাঠাবার রাস্তা ক্রমশ বন্ধ হয়ে এসেছে নানান আইনি কারণে৷ কিন্তু জঙ্গিবাদকে চালাতে গেলে বা নিত্যনতুন অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র হাতে রাখতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন৷ সেই অর্থ উপায়ের সহজ রাস্তা হল এইসব অপরাধমূলক কাজকর্ম৷ যে কাজে এই আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্ল্যাক নাইট জঙ্গিরা বেশ দড় হয়ে উঠেছে৷
দড় যে তারা হয়ে উঠেছে, ব্ল্যাক নাইটের সাম্প্রতিক কিছু কাজকর্মের খতিয়ান দেখলেই তা বেশ বোঝা যাবে৷ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ আমীর রানা সংবাদসংস্থা এপিকে এই জঙ্গিদের কার্যকলাপ প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে বলছেন, অপহরণ থেকেই এই ব্ল্যাক নাইট বিপুল অর্থ উপার্জন করে চলেছে৷ সচরাচর যাঁকে অপহরণ করা হচ্ছে, তাঁর দাম বুঝে দেড় লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ ডলার পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করে এই জঙ্গিরা৷ যেমন, গত জুলাই মাসে এক সুইস দম্পতিকে তারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে পাকিস্তান থেকে৷ তাঁদের ভাগ্যে কী আছে এখনও অজানা৷ এরকম আরও কিছু পণবন্দি তাদের ডেরায় অপেক্ষায় রয়েছে৷ কয়েকজনকে মুক্তি দিয়ে বিপুল অর্থ তারা মুক্তিপণ হিসেবে উপার্জন করেছে৷ লাহোরের প্রাদেশিক গভর্নরের পুত্র শাহবাজ তাসিরকে তারা অপহরণ করে নিয়ে যায় কিন্তু মুক্তিপণের অর্থ সময়মত না দেওয়ায় তাঁকে হত্যা করে৷
আমীর রানা আরও জানাচ্ছেন, পাকিস্তানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারের ওপর যে সাধারণ মানুষের তেমন আস্থা নেই, তা বুঝে গেছে ব্ল্যাক নাইট৷ পাকিস্তানের ধনী সম্প্রদায় অপহরণের জন্য তাই তাদের সহজ টার্গেট৷ এছাড়া ব্যাঙ্ক লুঠ তো রয়েছেই৷ শুধুমাত্র করাচি শহরে এ বছরে এ পর্যন্ত চারটি ব্যাঙ্কে ডাকাতি হয়েছে, যার মোট পরিমাণ ২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ পুলিশের সন্দেহ, এই কাজগুলি সবই তালেবানের৷
তালেবান নিজেরাও জানাচ্ছে এই খবরের সত্যতা৷ পাকিস্তানি তালেবানের নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জঙ্গি সংবাদসংস্থা এপি'র কাছে জানায়, পাকিস্তানে বা আফগানিস্তানে মুসলমান ব্যতীত যে সমস্ত অন্য ধর্মের মানুষজন আসেন, সচরাচর তাদের অপহরণ করার জন্য টার্গেট করা হয়৷ আর ব্যাঙ্ক লুঠের যুক্তি আরও স্পষ্ট৷ ইসলাম ধর্মে সুদ নেওয়া বা সুদ দেওয়া দুই-ই অপরাধ৷ আর ব্যাঙ্ক ঠিক সেই কাজটিই করে৷ সুতরাং ব্যাঙ্ক লুঠ৷
ব্ল্যাক নাইট গোষ্ঠী এভাবেই ক্রমশ আরও বিভীষিকা তৈরি করে চলেছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ