বড়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেই তদন্তে ধীরগতি?
২৬ আগস্ট ২০২০একটার পর একটা তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু তারপরও প্রকৃত ঘটনা জানা যায় না৷ আর প্রতিকার পাওয়া গেলেও তাতে বছরের পর বছর লেগে যায়৷
গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তার বাড়ি থেকে ‘কথিত’ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর জেলা প্রশাসকের অফিসেই তাকে নির্যাতন করা হয়৷ নির্যাতনের পর আধা বোতল মদ ও কয়েক গ্রাম গাঁজা দিয়ে মামলা ও কারাগারে পাঠানো হয় আরিফুলকে৷ এই ঘটনায় মোট তিনটি প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি হয়ছে৷ কিন্তু এখনো কোনো চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷
শুধুমাত্র তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে তার অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এবং দুই সহকারি কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়৷ ওই ঘটনায় কুড়িগ্রামে একটি মামলাও করেছেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম৷ কিন্তু সেই মামলায় এখনো চার্জশিট দেয়া হয়নি৷ জেলা প্রশাসকসহ অন্য আসামিরা জামিনও নেননি৷ আরিফুল জানান, ‘‘মামলার তদন্তে আমি তেমন কোনো অগ্রগতি দেখছিনা৷ আমাকে এখন নানা ভাবে চাপ ও প্রলোভন দেয়া হচ্ছে মামলা প্রত্যাহারের জন্য৷’’
জামালপুরের সেই জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্ত এখনো চলছে৷ গত বছরের আগস্টে তার অফিসের এক নারী কর্মচারীর সঙ্গে তার অনৈতিক কাজের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তাকে প্রত্যাহার ও পরে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷ সেই নারী কর্মচারীকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷
চট্টগ্রামে পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু আক্তারকে ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷ ঘটনার পর সারাদেশে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়৷ পুলিশও তদন্ত শুরু করে জোরেশোরে৷ কিন্তু সেই তদন্তে এখন ভাটার টান৷ কারণ তদন্তের এক পর্যায়ে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে৷ তিনিই আবার এই হত্যা মামলার বাদী৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে এসপি বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়৷ কিন্তু মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি৷ মামলার এখনকার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এডিশনাল এসপি মো. মঈন উদ্দিন জানান, ‘‘এই মামলার তদন্ত শেষ হতে আরো সময় লাগবে৷ আমি তদন্তের নতুন দায়িত্ব পেয়েছি৷ সব কিছু দেখতে হবে৷’ এই মামলায় এপর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও চারজন এরইমধ্যে জামিন পেয়েছেন৷ বাবুল আক্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শুরুতে মিতুর বাবা বাবুল আক্তারের পক্ষে অবস্থান নেন৷ এখন আবার গ্রেপ্তার করতে বলছেন৷ তার উচিত তদন্তকারীদের ওপর আস্থা রাখা৷ বাবুল আক্তারতো এই মামলার বাদী৷ আমরা তো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবই৷’’
পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান মিজান ও দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বহুল আলোচিত ঘুস কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের মামলার বিচার শুরু হয়েছে গত ১৯ আগস্ট৷ গত বছরের ১৬ জুলাই ৪০ লাখ টাকা ঘুস লেনদেনের অভিযোগে মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক শেখ ফানাফিল্যা৷ ঘুস কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর খন্দকার এনামুল বাছির ও ডিআইজি মিজানুর রহমান ওরফে মিজান সাময়িক বরখাস্ত হন৷ ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে আরো একটি দুর্নীতির মামলার তদন্ত চলছে৷ তিনি এখন কারাগারে আছেন৷ দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরও কারাগারে আছেন৷
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও এসআই লিয়াকতকে আইনের আওতায় ও রিমান্ডে নিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে৷ আর ওই ঘটনায় কক্সবাজারের এসপি মাসুদ হোসেনকে দায়ী করা হলেও তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ তিনি বহাল তবিয়তে আছেন৷ তিনি অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমার যা বলার তদন্ত কমিটির কাছেই বলব৷’’ জানা গেছে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার আগে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷
এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘যার দায় তাকে নিতে হবে৷ কাউকে রক্ষায় কোনো ধরনের পেশাগত চাপ সৃষ্টি করা হয় না৷ ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অন্য কেনো ধরনের সম্পর্কের কারণে কারুর প্রতি কারুর সহানুভূতি থাকতে পারে৷’’
২৭ জুনের ছবিঘরটি দেখুন...