1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-পাক সম্পর্কে নয়া মোড়

১৪ এপ্রিল ২০১৮

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন তলানিতে৷ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষ, গোলাগুলি বিনিময় বেড়েই চলেছে৷ হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ গত ১৫ বছরে এটাই সম্ভবত দু'দেশের সম্পর্কের কালো অধ্যায়৷

https://p.dw.com/p/2w1B9
Indien Verteidigungsmesse in Chennai
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Bhan

দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এত অবনতি গত ১৫ বছরে আর হয়নি৷ বিভক্ত কাশ্মীরের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লংঘন, গুলিবর্ষণ ক্রমশই বেড়ে চলেছে শঙ্কাজনকভাবে৷ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের জন্মলগ্ন থেকেই কাশ্মীর নিয়ে বিবাদ তুঙ্গে ওঠে৷ কাশ্মীরের পূর্ণ অধিকার কায়েম করতে দু'পক্ষই মরিয়া৷ তাই নিয়ে প্রথম যুদ্ধ বাঁধে ঐ বছরেই৷ পাকিস্তানি সেনার মদতে উপজাতি হামলা হয় কাশ্মীরে৷ কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম হলেও মহারাজা হরি সিং ছিলেন হিন্দু৷ তাঁর আমন্ত্রণেই ভারতীয় সেনা সেই হামলা প্রতিহত করে৷ কাশ্মীর বিভক্ত হয়৷ তিনভাগের দুই ভাগ ভারতের নিয়ন্ত্রণে এবং একভাগ পাকিস্তানের৷ কিন্তু পুরো কাশ্মীর দখলের দাবিতে উভয় দেশই অবিচল৷ সেই যুদ্ধবিরতি রেখা, যা আজকের কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা, তার উভয় দিকেই দু'দেশের সামরিক উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো৷ তাই দ্রুত বাড়ছে নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন আর গোলাগুলি বর্ষণের ঘটনা৷

দু'দেশের তরফে হতাহতের যে সংখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তারমধ্যে বিস্তর ফারাক৷ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা কার্যত অসম্ভব৷ তবে দুই দেশই স্বীকার করেছে, সংঘর্ষের ঘটনা গত দু'বছরে অনেক বেড়েছে৷ চলতি বছরে আরও বেশি৷ ভারতের পক্ষে বলা হয়, ২০১৫ সালে পাকিস্তানের অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা যেখানে ছিল ১৫২, সেটা ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬০-এ৷ দিল্লির মতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই হয় ৩৫১টি নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের ঘটনা৷ অন্যদিকে পাকিস্তানের হিসেব মতো ভারতের দিক থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের ২০১৭ সালেই হয় ১৯৭০, তার আগের বছরে ছিল ১৬৮৷ আর ২০১৮-এর মার্চেই হয় ৪১৫টি ঘটনা৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর ভারত-পাক অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন সংক্রান্ত রিপোর্টের লেখক হ্যাপিমন জ্যাকব উভয় দেশের মিডিয়াতে প্রকাশিত খবরাখবর মনিটার করে, ফিল্ড সমীক্ষা করে, দুই দেশের শীর্ষ স্থানীয় মিলিটারি অফিসারদের সাক্ষাৎকার নিয়ে যে রিপোর্ট দেন, তাতে তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদের মতে, পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের দিক থেকে গোলাগুলি বর্ষণের ঘটনা অনেক বেশি৷ ভারতের গোলাগুলি বর্ষণের ক্ষমতা বেশি, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা মোতায়েন সংখ্যা বেশি এবং সীমান্ত চৌকির সংখ্যাও বেশি৷ ভারতের প্রায় পাঁচ লাখ সেনা মোতায়েন রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের মাত্র ৫০ হাজার থেকে এক লাখের মতো৷ বলা বাহুল্য, উভয় দেশের তরফেই এই সংখ্যা স্বীকার করা হয়নি৷ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ বাড়ার একাধিক কারণ আছে যা জটিল এবং একের সঙ্গে অন্যটা জড়িত৷

গত বছরের রিপোর্টে জ্যাকবের বক্তব্য, দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যে যখন গঠনমূলক আলোচনা চলছিল তখন নিয়ন্ত্রণরেখা অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল৷ ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী বড়দিনের সময় হঠাৎ করেই সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আতিথ্য গ্রহণ করেন৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়৷ পরিতাপের বিষয়, সেটা স্থায়ী হয়নি৷ আলোচনার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়৷ দেখা দেয় এক প্রতিকূল আবহাওয়া৷ সেই আগুনে ঘি ঢালে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবং সেটা দমনে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত তত্পরতা৷ আশির দশকের শেষের দিক থেকে অশান্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর পরিস্থিতি৷ হতাহত হয় কয়েক হাজার৷ এজন্য অবশ্য দিল্লি ও ইসলামাবাদ একে-অপরকে দায়ী করে৷ এর অভিঘাত পড়ে দু'দেশের রাজনীতিতে৷

অমূল্য গাঙ্গুলি

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ নিবারণের আশু সম্ভাবনা আছে কিনা সে সম্পর্কে প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘মনে হয় না, আশু সমাধান হবে৷ ভারতের দিক থেকে বলা ভালো মোদী নিজের উদ্যোগে লাহোরে গিয়েছিলেন৷ উরি কাণ্ডে একটা সমাধানের চেষ্টা হয়েছিল৷ কিন্তু সবাই জানে, পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা অসামরিক সরকারের হাতে যতটা আছে, তারচেয়ে বেশি আছে আর্মির হাতে৷ সব শান্তি প্রয়াসেই বাগড়া দিয়ে এসেছে আর্মি৷ লাহোরে মোদীর যাওয়াটাও নাকি পাকিস্তানি আর্মির মনঃপুত ছিল না৷ যদিও নওয়াজ শরিফের দিক থেকে আন্তরিকতার ত্রুটি ছিল না৷ মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে শরিফ দিল্লি এসে বলেছিলেন, এই রকম যাওয়া-আসা চলতে থাকবে দু'দেশের স্বার্থে৷

কাশ্মীর পরিস্থিতি যেভাবে বিষাক্ত হয়ে উঠছে তাতে দিল্লির কাশ্মীর নীতিতে যথেষ্ট ভুলচুক আছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘এই যেমন দীনেশ শর্মাকে কাশ্মীর শান্তি মিশনে পাঠানো হয়েছিল৷ এখন আর কোনো সাড়াশব্দ নেই৷ জম্মু-কাশ্মীরে এখন বিজেপি-পিডিপি জোট সরকার৷ তাতেও সুবিধা হচ্ছে না৷ দিলীপ পাড়গাঁওকার কমিটি সুপারিশ করেছিলেন কাশ্মীরে সেনা উপস্থিতি কম করার, মানবাধিকার কেসগুলির নিষ্পত্তি করার৷ তা হয়নি৷ তার উপর কাশ্মীরে ছররা গুলি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুনবিতর্ক৷ এই ছররাগুলি ভারতের অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয় না৷ দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন তুলে নেওয়ার দরকার ছিল৷ কংগ্রেস শাসনে একবার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী তা মানেনি৷ এটা অন্তত সাময়িকভাবে তুলে নিলেও একটা ভালো সংকেত যেত৷ তার উপর কাশ্মীরি জঙ্গিনেতা বুরহানওয়ানিকে গ্রেপ্তার না করে গুলি করে মারাও ভুল হয়েছিল৷ রাতারাতি তাঁকে হিরো বানিয়ে দেওয়া৷ এইসব ভুল কাশ্মীরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য দায়ী৷ পাকিস্তানকে ঠিক দোষ দেওয়া যায় না৷ পাকিস্তানের দিক থেকে উসকানি তো থাকতেই পারে৷''

পাকিস্তানে এ বছরই সাধারণ নির্বাচন৷ আগামী বছর ভারতে৷ ঘৃণা ও বিদ্বেষকেই হাতিয়ার করতে চাইছে দু'দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব৷ আর এর বলি হতে হচ্ছে দু'দিকের সাধারণ কাশ্মীরি জনগণকে৷ থাকতে হচ্ছে ভীতির আবহে৷ দুই দেশের কূটনৈতিক মহলেরও এক ধারণা৷ কিন্তু বিশ্বের কোনো দেশই এই নিয়ে নাক গলাতে রাজি নয়৷ জাতিসংঘ পর্যন্ত নীরব৷ যদিও ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মিশন নিয়ন্ত্রণ রেখাতে উপস্থিত৷ জনৈক পশ্চিমা কূটনীতিক মনে করেন, এটা স্রেফ কাশ্মীর প্রশ্ন নয়, এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রশ্ন৷ পরমাণু যুদ্ধের আশংকা৷ উদীয়মান শক্তি হিসেবে ভারতের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ১৩০ কোটি মানুষের পণ্য বাজারের দিকে তাকিয়ে ভারতের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি চায় না৷ কাশ্মীর নিয়ে অযথা হৈ চৈ না করলে প্রাণহানি কম হবে৷

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি

পাঠক, ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলার থাকলে নীচের ঘরে লিখতে পারেন৷