ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্নিপরীক্ষা
৩০ জুলাই ২০১৩ঢাকা ভালো করেই জানে, স্থলসীমা চুক্তির জন্য সংসদের অনুমোদন পেতে পাশ করাতে হবে সংবিধান সংশোধন বিল দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে৷ যেহেতু এটা ভারতীয় ভূখণ্ড বিনিময়ের প্রশ্ন৷ আর তার আসল চাবিকাঠি আছে বিজেপি নেতৃত্বের হাতে৷ তাই বিজেপি যাতে ঐ বিল সমর্থন করে. তার জন্য দিল্লিতে এসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে আলোচনা করেন৷ বরফ না গললেও এইটুকু আশ্বাস পাওয়া গেছে যে বিজেপিও চায় বাংলাদেশের বন্ধুত্ব৷ তবে এ বিষয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে৷
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, গণতন্ত্রে একটা বিরুদ্ধমত থাকতেই পারে৷ কিন্তু জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে প্রত্যেক দেশকেই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার ঊর্ধ্বে উঠতে হয়৷ বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়৷ স্থলসীমা এবং তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে বিজেপির মনোভাব সদর্থক৷ তবে চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে তা সংসদে পাশ করানো৷ নাহলে বাংলাদেশের নির্বাচনে তার হতাশাজনক প্রভাব পড়তে পারে, বলেন দীপু মনি৷
হাসিনা সরকারের জমানায় দুদেশের মৈত্রী সম্পর্কের যে সুফল পাওয়া গেছে, সেটা যাতে স্থায়ী হয়, তার জন্য তিনি ভারতের জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানান৷ উল্লেখ্য, স্থলসীমা চুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলকে সিপিএম সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত৷ দলের মতে, এই চুক্তিতে দুদেশের স্বার্থই জড়িত৷ তিস্তা নদীর জল বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনার পর তার মীমাংসা হয়ে গেছে৷ আপত্তি স্রেফ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের৷ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, উত্তরবঙ্গের মানুষ এই চুক্তি মেনে নিলে তাঁর আপত্তি নেই৷
এদিকে ভারতেও সাধারণ নির্বাচনের আর দেরি নেই৷ তার প্রেক্ষিতে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখ৷ দিল্লির বাংলাদেশ হাই কমিশনার তারিক করিম গত সপ্তাহে গান্ধীনগরে এক আলোচনাসভায় যোগ দিতে গিয়ে মোদীর সঙ্গে দেখা করে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো মজবুত করার বিষয়ে কথা বলেন৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই সাক্ষাৎকারকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন – বিশেষ করে স্থলসীমা চুক্তিতে বিজেপির সমর্থন লাভে৷
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসিনা সরকার যখন বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরিচয় তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন, তখন ভারতের প্রধান বিরোধী দলের উচিত হবেনা সংকীর্ণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জালে নিজেদের আটকে রাখা৷ এতে ভারতের ক্ষতি হবে৷ প্রতিবেশী দেশে মৌলবাদী সরকার কখনই কাম্য নয় ভারতের৷ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে সহজ পরিবহনের সুবিধা ফলপ্রসূ হবেনা৷ মোটকথা, স্থলসীমা ও তিস্তা চুক্তি কার্যকর না করতে পারলে মনমোহন সিং সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক মজবুত করতে যে কূটনৈতিক বিনিয়োগ করেছে, তা মাঠে মারা যাবে৷