দিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২৬ জুলাই ২০১৩বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির দিল্লি আসা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে ভাষণ দেয়া হলেও, এ সফরের আসল লক্ষ্য ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তির বাস্তবায়নে যাতে আর দেরি না হয়, তার জন্য শেষ চেষ্টা করা৷ সেজন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের বুঝিয়ে বলা যে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কেন এই চুক্তি দু'দেশের মৈত্রী সম্পর্কের পক্ষে জরুরি৷
এই চুক্তি রূপায়নের প্রধান সমস্য হলো, যেহেতু বিষয়টিতে ভূখণ্ড হস্তান্তরের প্রশ্ন জড়িত তাই এ জন্য সংবিধান সংশোধন করতে বিল আনতে হবে সংসদে এবং সেই সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করাতে হবে সংসদের উভয়সভায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে৷ বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলি ভোট দিতে নাও পারে৷ যদিও বিলটি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে এবং সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে ঐ বিল পেশ করা হবে বলে ভারত-বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র সচিব স্তরের সাম্প্রতিক বৈঠকে ঢাকাকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি৷
স্থলসীমা চুক্তি নিয়ে বিরোধী দলগুলির আপত্তি কোথায়? ভূখণ্ড হস্তান্তরে যুক্ত ভারতের চারটি রাজ্য৷ আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ৷ প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ছাড়াও আপত্তি আছে আসামের এজিপি (অসম গণপরিষদ ) এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের৷ বিজেপির যুক্তি: ২০১১ সালের ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তি অসম ও একপেশে৷ ভারতকে যেখানে ছাড়তে হবে ১৩ হাজার একর জমি, সেখানে বাংলাদেশ ছাড়বে মাত্র তিন হাজার একর৷ দশ হাজার একর বাড়তি জমির ক্ষতিপূরণ হবে কীভাবে? তাই সংসদে জমি জরিপের ম্যাপ পেশ করার পর তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার কথা বলেছে বিজেপি৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করেন, এই চুক্তি কার্যকর করার রাজনৈতিক কৃতিত্বটা পুরোপুরি মনমোহন সিং সরকারকে ছেড়ে দিতে নারাজ বিজেপি৷
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতে, বিষয়টি যতটা ভূখণ্ডের তার চেয়ে বেশি মানবিক৷ সেখানে থাকা মানুষজনদের অকথ্য দুঃখকষ্টের৷ সেখানে না আছে রাস্তাঘাট, না আছে পানীয় জল, না আছে শিক্ষা, চিকিৎসা আর বিদ্যুতের সুবিধা৷
একই রকম আপত্তি তৃণমূল কংগ্রেসের৷ ছিটমহল বিনিময়ে উত্তরবঙ্গের ১০ হাজার একর জমি চলে যাবে বাংলাদেশে৷ দ্বিতীয়ত, ছিটমহল বিনিময়ের পর দলে দলে শরণার্থী আসবে পশ্চিমবঙ্গে৷ তার বিপুল দায়ভার সামলাবে কে? সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সম্মতি আদায় করাও এক সমস্যা হতে পারে কেন্দ্রের৷
সমস্যার শেষ এখানেই নয়৷ সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ তাই বিলে বিজেপির সমর্থনের আশায় রাজ্যসভায় বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ডা. দীপু মনি৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেও কাজে লাগাবেন তিনি৷
দুশ্চিন্তা উভয়দেশেরই৷ মনমোহন সিং সরকারের মতে, বাংলাদেশে নির্বাচনের দেরি নেই৷ সুতরাং, এই চুক্তি কার্যকর করার এটাই সঠিক সময়৷ শেখ হাসিনা সরকার নিরাপত্তসহ ভারতের স্বার্থ যেভাবে দেখে এসেছেন, তাতে এই চুক্তি রূপায়িত হলে ভোটে হাসিনা পাবেন বাড়তি সুবিধা৷ সংবিধান সংশোধন বিলের মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমা চিহ্নিতকরণ এবং ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় চুক্তিকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হবে৷ বৈধতা দেয়া হবে ২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সই হওয়া ছিটমহল হস্তান্তরকেও৷
উল্লেখ্য, ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে ১১১টি ভারতের এবং ৫১টি বাংলাদেশের৷ ঐ সব ছিটমহলে বসবাসকারী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ তাঁদের ইচ্ছামতো জায়গায় থাকতে বা যেতে পারবে৷ আশঙ্কা, সংসদের এই অধিবেশনে সংবিধান সংশোধনী বিল যদি পাশ না হয়, তাহলে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা স্থলসীমা ইস্যু অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়ে থাকবে ‘কফিনবন্দি'৷