পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প
২৪ অক্টোবর ২০১৩এরপর উৎপাদন ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে ১৬০ মেগাওয়াট পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে দক্ষিণ গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পর ‘শাট-ডাউন' করা হয়, যেন প্রকৌশলীরা টারবাইন এবং জেনারেটরের সুসংহত সিস্টেম চেক-আপ করে দেখতে পারেন৷
প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াট৷ পূর্ণ ক্ষমতায় পৌঁছবে ধাপে ধাপে৷ সব উপকরণ ও সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করা সাপেক্ষে প্রথম ধাপে ৫০০ মেগাওয়াট, পরের ধাপে ৭৫০ মেগাওয়াট এবং তারপর ১,০০০ মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়া হবে৷
বাণিজ্যিকভাবে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছতে সময় লাগবে আরও মাস খানেক৷ কুড়ানকুলাম থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক পাবে তামিলনাড়ু৷ এই রাজ্যের বিদ্যুৎ ঘাটতি চরমে৷ ঘর বাড়িতে, শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ ছাঁটাই হওয়ায় মানুষের অশেষ দুর্ভোগ৷
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধী ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসামরিক পরমাণু চুক্তির অধীনে ভারতকে দেয়া হয় দুটি পরমাণু চুল্লি৷ দীর্ঘ ২৪ বছর পর প্রথমটি চালু হয়৷ দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণকাজ চলছে৷ সম্ভবত আগামী বছর তা চালু হবে৷ খরচের বহর এপর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা৷
এই বিলম্বের অন্যতম কারণ যন্ত্রাংশ না পাওয়া এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে স্থানীয় লোকজনদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ৷ জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের দুর্ঘটনার পর তা আরো তীব্র আকার ধারণ করে৷ কেন্দ্রের কাজকর্ম বন্ধ রাখতে হয়৷ সরকার এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবার পর ২০১২ সাল থেকে আবার কাজ শুরু হয়৷ ২০১০ সালে রাশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুটিনের দিল্লি সফরে যে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছিল তার রূপায়নে ভারত দায়বদ্ধ, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং৷ বাধাগুলি দুর করার চেষ্টা করা হবে যাতে কুড়ামকুলামে তিন এবং চার নম্বর চুল্লির কাজ শুরু করা যায়৷ কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর বর্তমান মস্কো সফরে আরো দুটি পরমাণু চুল্লি সরবরাহ চুক্তি সই হবে৷ কূটনৈতিক মহলের মতে, পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কারণে তা হয়নি৷
জটিলতা বলতে রাশিয়া চেয়েছিল ১ এবং ২ নম্বর চুল্লি যেমন দায়বদ্ধতা আইনের বাইরে ছিল, তেমনি তারই জের টেনে তিন ও চার নম্বর চুল্লিও দায়বদ্ধতা আইনের আওতার বাইরে থাক৷ ড. সিং যদি তাতে রাজি হতেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সকেও তার বাইরে রাখতে হতো৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েও তা ঝুলে আছে দায়বদ্ধতা আইনের কারণে৷ দায়বদ্ধতা বলতে বোঝায় পরমাণু কেন্দ্রে দুর্ঘটনা হলে যে কোম্পানি সেই সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল, তাকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে চুল্লি সরবরাহকারী দেশগুলি তাদের বিক্রয় মূল্য অনেক বেশি চাইতে পারে৷
চুল্লি সরবরাহকারী রাশিয়ান কোম্পানি ‘রোশাটম' অবশ্য বলেছে এই ধরণের চুল্লি বিশ্বে সবথেকে নিরাপদ৷ এতে অনেক বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা আছে যাতে সুনামিজনিত ফুকুশিমা চুল্লির মতো দুর্ঘটনা সামলাতে পারে৷ কাজেই ভয়ের কিছু নেই৷