1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে সমকামিতা অবৈধ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা১২ ডিসেম্বর ২০১৩

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বিরোধী আইনি ধারাটি রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দিল সরকার এবং সংসদকে৷ ফলে আপাতত খারিজ হলো সমলিঙ্গের সম্পর্কের বৈধতা৷

https://p.dw.com/p/1AXHW
ছবি: ParisPhoto/Fotolia

অনেকেই বলছেন, ২০০৯ সালে সমলিঙ্গের সম্পর্ককে আইনি বৈধতা দিয়ে ঐতিহাসিক যে রায় দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট, তা থেকে ফের পিছু হাঁটা হলো সুপ্রিম কোর্টের এই ফয়সালায়৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, অ্যানাল সেক্স বা পায়ু মৈথুন শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এই অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে৷ কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট সমকামিতার থেকে অপরাধধর্মিতাকে বিযুক্ত করে জানিয়েছিল, যদি দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ পারস্পরিক সম্মতিতে এবং ব্যক্তিগত পরিসরে শারীরিকভাবে মিলিত হয়, তা হলে সেটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে না৷ ভারতের সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীরা দিল্লি-সহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় বেরিয়ে রীতিমত উৎসব করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের ওই ঐতিহাসিক রায়ের পর৷

কিন্তু উল্টোদিকে একাধিক ব্যক্তি এবং সামাজিক সংগঠন, যারা সমকামিতার বিরোধী, তারা দিল্লি হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল৷ আপত্তি জানিয়ে আপিল করেছিল মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, উৎকল ক্রিশ্চিয়ান কাউন্সিল, অ্যাপোস্টলিক চার্চেস অ্যালায়েন্স-এর মতো বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন৷ বিজেপি নেতা প্রয়াত বি পি সিঙ্ঘল চ্যালেঞ্জ করেছিলেন রায়টিকে, যাকে তিনি অবৈধ, অনৈতিক এবং ভারতীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে চিহ্নিত করেছিলেন৷ এরকম একাধিক আপিল মামলার শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে এবং মাস ঘুরে বছর গড়িয়ে যায় আদালতের, প্রতিটি কেসের সওয়াল জবাব শুনতে শুনতে৷

গত বছরের মার্চ মাসে এই মামলাগুলির সম্মিলিত রায়দানের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত রায় ঘোষণা থেকে বিরত থাকে সুপ্রিম কোর্ট৷ শুনানি চলাকালীন দিল্লি হাইকোর্টের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ উঠেছিল যে, সমকামিতা সম্পর্কে আদালত তার এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছে৷ সেই প্রসঙ্গ টেনে সুপ্রিম কোর্ট রীতিমত তিরস্কার করে কেন্দ্রীয় সরকারকে যে কেন সমকামিতার বিষয়টিকে এত লঘু করে দেখছে সরকার এবং কেনই বা বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়নি! উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য ছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে সমকামিতা বিরোধী ৩৭৭ নং ধারাটি ব্রিটিশ আমলের আইন৷ বর্তমান ভারতীয় সমাজ কিন্তু সমকামিতা সম্পর্কে অনেক বেশি সহনশীল৷

অথচ অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, দিল্লি হাইকোর্টে এই সরকারপক্ষেরই বক্তব্য ছিল, সমকামিতা অবশ্যই অপরাধ কারণ এটা অস্বাভাবিক, অনৈতিক এবং বিকৃত মানসিকতার ফসল! এই দ্বিচারিতার কারণেই সম্ভবত সুপ্রিম কোর্ট এবার যথার্থ সিদ্ধান্তে বিষয়টি আইনি বিবেচনার আওতা থেকে সরিয়ে আইন প্রণেতাদের কাছে পাঠিয়ে দিল৷ সঙ্গত কারণেই যে, যতক্ষণ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারাটি বহাল রয়েছে, সমস্ত আদালত সেই আইনি ধারা মেনে চলতে বাধ্য৷ সুতরাং এটা আইনসভার বিবেচনার বিষয়, সমকামিতাবিরোধী ৩৭৭ ধারা দণ্ডবিধিতে থাকবে কি না৷ যদি না রাখতে হয়, তা হলে সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে সংসদে বিল এনে, আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছে আইনি ধারাটির বিলোপ করতে হবে৷

যদিও সুপ্রিম কোর্টের এই সুচিন্তিত মতামত সকলের কাছে ঠিক সংকেত সম্ভবত পাঠাচ্ছে না৷ কারণ অনেক সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে যে ভারতে সমকামীদের অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে এক পা এগিয়ে ফের দুপা পিছিয়ে আসা হলো৷ বলা হচ্ছে, সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবেই চিহ্নিত করলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালত৷ যদিও সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের অন্তর্দর্শন সম্ভবত আরও সুদূরপ্রসারী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য