ভারতের দর্শনীয় ১৫টি স্থান
ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধুনিকতার দেশ ভারতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বেড়াতে যান৷ অভিনব এই দেশে বেড়াতে গেলে যে স্থানগুলি ভোলা চলবে না, তা নিয়ে এই ছবিঘর৷
তাজ মহল
মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এই নিদর্শনটি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম৷ শাহজাহান-মুমতাজের প্রেমের এই স্মৃতিসৌধটি দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক উত্তর ভারতের আগ্রা শহরে যান৷ যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত তাজ মহল দেখার সর্বশ্রেষ্ঠ সময় হলো শীতের মাস, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে৷
কুতুব মিনার
ইটের তৈরি বিশ্বের সর্বোচ্চ এই মিনার দেখতে গেলে যেতে হবে রাজধানী দিল্লীতে৷ ভারতের প্রথম মুসলমান শাসক, কুতুবুদ্দিন আইবকের নির্দেশে তৈরি হয়েছিল এই মিনার৷ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই স্থানটি দেখতে যাবেন বসন্ত বা গ্রীষ্মকালে, নইলে কুয়াশার কারণে মিনারের চূড়া রয়ে যাবে অদেখা৷
স্বর্ণ মন্দির
শিখ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উপাসনালয় পাঞ্জাবের অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির৷ শিখ ধর্মে মানবসেবার গুরুত্ব অসীম বলেই ১৬২ কিলোগ্রাম সোনায় মোড়া এই মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ লোককে বিনামূল্যে খাওয়ানো হয়৷ সেখানে গেলে এত লোকের রান্নার কাজেও সাহায্য করতে পারেন দর্শনার্থীরা৷
রাজস্থানের মরুভূমি
ভারতের রাজস্থানে রয়েছে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম মরুভূমি, থর মরুভূমির একটি অংশ, যা জয়সলমীর শহর থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে৷ মরুভূমিতে সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়ের দুশ্য যতটা আকর্ষণীয়, ঠিক ততটাই অভিনব এখানকার স্থানীয় নৃত্য-সংগীত৷ রাজস্থানকে পুরোদমে উপভোগ করতে অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে যাওয়া ভালো, কারণ, অন্য সময়ে খুব বেশি গরম থাকে৷
গোয়া
পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যে পাবেন সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, মান্ডোভি নদীর জিভে-জল-আনা সুস্বাদু সামুদ্রিক মাছ ও পর্তুগিজ ইতিহাসসমৃদ্ধ বহু উল্লেখযোগ্য স্থান৷ ভারতের ‘পার্টি টাউন’ হিসাবে খ্যাত গোয়ায় ভিড় জমান সারা বিশ্বের তরুণরাও৷ প্রতি মাসেই চলতে থাকে কোনো-না-কোনো উৎসব৷ সুতরাং গোয়ায় যেতে পারেন বছরের যে কোনো সময়েই৷
ভূস্বর্গ কাশ্মীর
‘মর্ত্যের স্বর্গ’ নামে খ্যাত কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় মার্চ থেকে আগস্ট, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে৷ শ্রীনগর, গুলমার্গ, লেহ, সোনমার্গে যাবার আগে খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কিনা৷ সীমান্ত অঞ্চল হবার কারণে কাশ্মীরে ভারতের অন্যান্য জায়গার তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বেশি কঠোর৷
অজন্তা-ইলোরা
ভারতের মহারাষ্ট্রের প্রায় দু’হাজার বছরের পুরোনো এই গুহাগুলি তৈরি হয়েছিলো পাহাড় কেটে৷ গৌতম বুদ্ধের জীবনকাহিনী বর্ণিত এই গুহাগুলি বহুকাল জঙ্গলের আড়ালে হারিয়ে থাকার পর ১৮১৯ সালে নতুন করে আবিষ্কৃত হয়৷ অজন্তা-ইলোরায় গেলে মুম্বই শহর হয়ে যেতে হয়৷ সেই সুবাদে বলিউডের প্রানকেন্দ্র মুম্বইও ঘুরে দেখে নিতে পারেন৷
লাল কেল্লা
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের তৈরি এই দুর্গটি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সামরিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো৷ বর্তমানে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই দুর্গে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ ২০০৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির তালিকায় স্থান পায় এটি৷ লাল কেল্লা দেখতে হলে যেতে হবে দিল্লীতে৷
কন্যাকুমারী
ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণতম বিন্দু, কন্যাকুমারী৷ তামিল নাড়ু রাজ্যের এই শহরে মিলিত হয় আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর৷ ঐতিহ্যপূর্ণ ‘বিবেকানন্দ রক স্মৃতিসৌধ’ ছাড়াও এখানে রয়েছে স্থানীয় দেবী কুমারী আম্মানের মন্দির, যাঁর নামেই এই শহরের নামকরণ৷
সুন্দরবন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে সুন্দরবনের একাংশ, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে বিস্তৃত৷ বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানা ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, লোনা জলের কুমির, কেটো কচ্ছপ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী দেখতে ভিড় জমান পর্যটকেরা৷ কিন্তু সুন্দরবন দেখতে গেলে বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়া ভালো৷
আজমের শরীফ
রাজস্থানে মরুভূমি ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ধর্মীয় স্থান, যার মধ্যে অন্যতম আজমের শহরে সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগা, যা আজমের শরীফ নামেই খ্যাত৷ প্রতিদিন প্রায় দেড় লক্ষের কাছাকাছি মানুষ এই দরগায় প্রার্থনা করতে যান৷ এছাড়াও সংগীতানুরাগীরা এই দরগায় ভিড় জমান অসাধারণ কাওয়ালি উপভোগ করতে৷
শান্তিনিকেতন
পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে ১৮৬৩ ষালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শান্তিনিকেতন’ নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সেখানে একটি স্কুল চালু করেন, যা পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেয়৷ বছরের কিছু বিশেষ দিনে, যেমন বসন্ত উৎসব, খ্রীষ্ট উৎসব, পৌষ মেলার সময়ে, দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা সেখানে যান কবিগুরুর বিকল্প শিক্ষাচিন্তার পাশাপাশি রাবিন্দ্রিক পরিবেশে সময় কাটাতে৷
কেরল
‘ঈশ্বরের নিজভূমি’ হিসাবে পরিচিত ভারতের রাজ্য কেরলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়৷ একদিকে আছে বিখ্যাত ব্যাকওয়াটার বা আবদ্ধ জলাভূমি, যা উপভোগ করার জন্য ‘হাউজবোট’-এ চড়তে হবে৷ আর অন্যদিকে রয়েছে বিস্তৃত চা-বাগান, পর্তুগিজ প্রভাবিত শিল্প বা বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক উপাসনালয়৷ কেরলে বেড়াতে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় সেপ্টেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে৷
বেনারস-লখনৌ
পৌরাণিক মতে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন শহর বেনারস বা বারাণসী না দেখলে ভারতভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়৷ স্থানীয় মন্দির ও গঙ্গার ঘাট দেখা হয়ে গেলে দেখতে পারেন বৌদ্ধ ধর্মের জন্মস্থান সারনাথ৷ হাতে সময় থাকলে চলে যেতে পারেন পাশের শহর লখনৌ৷ সেখানে রয়েছে বিখ্যাত ইমামবড়া ও গোলকধাঁধা ‘ভুলভুলাইয়া’৷ লখনৌ শহরের খাবারও খুব জনপ্রিয়৷
দার্জিলিং
বাঙালির প্রিয় দার্জিলিং শহর পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় বেড়ানোর জায়গা৷ সূর্যোদয়ের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার অতুলনীয় দৃশ্য দেখতে হলে অবশ্যই যেতে হবে দার্জিলিং৷ এছাড়াও সেখানে রয়েছে ঘুম বৌদ্ধ মনাস্ট্রি ও অন্যান্য আরো অনেক দর্শনীয় স্থান৷
এছাড়াও...
ভারতে দর্শনীয় স্থানের তালিকা অনেক দীর্ঘ৷ এই ছবিঘরে দেখা জায়গাগুলি ছাড়াও রয়েছে গীর জঙ্গল, সাঁচী স্তূপ বা গোমুখের মতো আরো অসংখ্য আকর্ষণীয় স্থান৷সব মিলিয়ে, সব ধরনের, সব বয়েসের পর্যটকেদের জন্যে ভারতে রয়েছে উপভোগ করবার মতো আরো অনেক কিছু৷