‘যেন এক অশনিসংকেত’
২৬ এপ্রিল ২০১৪ভারতের নির্বাচনে, বিশেষ করে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় বাংলাদেশের নানা ইস্যু উঠে এসেছে৷ বিজেপি এবং বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর নানা বক্তব্য বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে৷ সর্বশেষ বিজেপির এক নেতার বাংলাদেশের ভূখণ্ডের এক তৃতীয়াংশের মালিকানা দাবি বিস্ময় এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে৷ আবারো এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, বিজেপি যেসব কথা বলছে তা নেতিবাচক উগ্র ধর্মীয় রজিনীতির বৈশিষ্ট্য৷
এর আগেও মোদীর ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতে পুনর্বাসন' এবং ‘পূর্বভারতীয় রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে বেকারত্ব' – এ দুটি বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দেয়৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মোদী বা বিজেপির এ সব বক্তব্য ভারতে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের ভোট টানার একটি কৌশল৷ তবে ভোটের পর হয়ত তাদের এই অবস্থান থাকবে না৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের ভুখণ্ডের এক তৃতীয়াংশের মালিকানা দাবি তো রীতিমত হাস্যকর৷ কেউ চাইলেও তাঁর সে আশা পূরণ হবে না৷''
শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘ভোট টানার এই কৌশল শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের আরো অনেক দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখা যায়৷ যেমন বাংলাদেশ সাম্প্রতিক এক পক্ষ ভোটের সময় ভারতবিরোধী নানা প্রচারণা চালিয়েছিল৷''
অবশ্য মোদীর বা বিজেপির এ সব কথার শক্ত প্রতিবাদ হওয়া উচিত বলেও মনে করেন শান্তনু মজুমদার৷ ‘‘আর সেটা হওয়া উচিত শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও৷ দুই দেশের যে প্রগতিশীল শক্তি আছে, তাঁদের এই সব ‘ভোটবাজদের' বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত৷''
শান্তনু মজুমদার বলেন, ভারতে এ ধরণের কথার যে প্রতিবাদ হচ্ছে না, তা নয়৷ তবে এই প্রতিবাদকে তিনি যথেষ্ট এবং বলিষ্ঠ বলে বলে মনে করেন না৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোদীর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক এবং অনাকাঙ্খিত৷ মোদীও ভোট টানার জন্য হিন্দু-মুসলমান ইস্যু ছাড়া বাংলাদেশের ভূখণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন৷ শুধু ভোটের জন্য একজন রাজনীতিবিদ কতটা নীচু মানসিকতার পরিচয় দিতে পারেন, মোদী তার উদাহরণ৷''
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘তবে এই ধর্ম, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র নিয়ে প্রচারণার রাজনীতি বাংলাদেশেও আছে৷ আসলে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সবখানেই সক্রিয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এবং মোদীর বক্তব্য ও আচরণের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যদি তার তৎপরতা অব্যাহত রাখেন, তাহলে প্রতিক্রিয়া আরো স্পষ্ট হবে৷ প্রতিক্রিয়াশীলরা ফায়দা লোটার সুযোগ পাবে৷''
অধ্যাপক হাফিজুর রহমান মনে করেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ নয়, মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো উপমহাদেশের রাজনীতিতে৷ যা উপমহাদেশের রাজনীতির জন্য এক অশনিসংকেত৷ আর এ আশঙ্কা ভারতের প্রগতিশীল শক্তিরও৷ নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তো আগেই তাঁর এ আশঙ্কার কথা বলেছিলেন৷''