শপথ নিলেন মোদী
২৭ মে ২০১৪উজ্জ্বল দিল্লির আকাশ৷ ঝলমলে রোদে খুশির আবহ৷ গত ৩০ বছরে এই প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়লেন ৬৩ বছর বয়সি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী৷ তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়৷
এই উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ভবন এবং তার সংলগ্ন এলাকা সেজে উঠেছিল উৎসবের সাজে৷ একদিকে অতিথিদের আদর-আপ্যায়ন ও প্রোটকলের ব্যস্ততা, অন্যদিকে তাঁদের জন্য ছিল ত্রিস্তরীয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়৷ যাঁরা প্রাঙ্গণে যেতে পারেননি, তাঁদের জন্য দিল্লির বিশেষ বিশেষ স্থানে বসানো হয়েছিল বিশাল বিশাল টিভি স্ক্রিন৷ যেমন ইন্ডিয়া গেট, রামলীলা ময়দান, চাঁদনি চক, নতুন দিল্লি রেল স্টেশনে৷ সাজানো হয়েছিল আলোর মালা দিয়ে৷ সঙ্গে বিমান ও নৌ-বাহিনীর ব্যান্ড আর আতস বাজির রং বাহার৷
এখানেই শেষ নয়৷ এদিন বিতরণ করা হয়েছে লাড্ডু৷ মন্দিরে মন্দিরে হয়েছে পুজো৷ বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পাঠানো হয়েছ ঠাকুরের প্রসাদী ফুল৷ যোগ দিয়েছেন ধর্মীয় গুরুরা৷ ৩৬৯তম উরস উৎসবে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করে শুভেচ্ছা জানানোও হয়েছে মোদীকে৷ মুসলিম মৌলবিদের সংগঠন জামিয়াত-উলেমা-ই-হিন্দের প্রধান কর্মকর্তা মহ. মাদানি মোদী বিরোধীতার পরিবর্তে দিয়েছেন সম্প্রীতির বার্তা৷
মোদীর সঙ্গে শপথ নিয়েছেন আরো ৪৫ জন মন্ত্রী৷ এঁদের মধ্যে ছয়জন মহিলা৷ সবথেকে বেশি প্রতিনিধিত্ব তিনটি রাজ্যের, যেখানে বিজেপি পেয়েছে বেশি আসন৷ যেমন বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র৷ জানা গেছে, এঁদের মধ্যে ২৩ জন হবেন পূর্ণ মন্ত্রী এবং ২২ জন প্রতিমন্ত্রী৷ এঁদের মধ্যে কেউ কেউ পাবেন স্বাধীন দায়িত্ব৷ তবে পশ্চিমবঙ্গের কেউ নেই৷ মোদীর মন্ত্র: ‘আকারে সরকার হবে ছোট, কিন্তু প্রশাসনে হবে বড়’’৷ গুজরাট থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন দিল্লির ৭নং রেসকোর্স রোডে পা দেবার পর এখন গোটা দেশ তাকিয়ে আছে মোদীর আগামী রোডম্যাপের দিকে৷
ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষঅঠানে ভিভিআইপি-দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রতিবেশী সাতটি সার্ক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ৷ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়েমিন আবদুল গায়ুম, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, বাংলাদেশ সংসদের স্পিকার শিরীন শরমিন চৌধুরী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ – এঁরা সকলেই এসেছেন শান্তির বিশেষ বার্তা নিয়ে৷
নওয়াজ শরিফ বলেন, ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ীর সঙ্গে শান্তির সূত্র যেখানে ছিঁড়ে গিয়েছিল, সেখান থেকেই তিনি মোদীকে নিয়ে শুরু করতে চান দু’দেশের শান্তি প্রক্রিয়া৷ ২৭শে মে মঙ্গলবার মোদী সার্ক দেশগুলির রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে মিলিত হবেন একক বৈঠকে৷ তবে সার্কভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ভবন প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের প্রায় দেড়শোর মতো রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবিদ৷ ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং নব নির্বাচিত সাংসদগণ৷ সস্ত্রীক উপরাষ্ট্রপতি, সস্ত্রীক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, সপুত্র কংগ্রেস সভানেত্রী ও সাংসদ সোনিয়া গান্ধী৷ উপস্থিত ছিলেন শিল্পপতি থেকে বলিউড তারকাও৷ এক কথায়, গুজরাটের চা-ওয়ালা থেকে বদোদরার রাজপরিবারের সদস্য – কেউই বাদ যাননি৷ সকলের সহযোগিতা আর সম্প্রীতিই যে কাম্য, এটাই যেন বোঝাতে চেয়েছেন মোদী৷ যাঁদের অনুপস্থিতি চোখে পড়েছে তাঁদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওমন চন্ডী এবং ওড়িষার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক৷ জয়ললিতা আসেননি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদে৷
মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে গোটা দিল্লিকে, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ভবনের চারপাশের এলাকা মুড়ে ফেলা হয় ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার বলয়ে৷ প্রায় ছয় হাজার নিরাপত্তা কর্মী, যাঁদের মধ্যে ছিল রাষ্ট্রপতির বিশেষ দেহরক্ষী বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও বিশেষ কমান্ডো ফোর্স৷ তাছাড়া রাষ্ট্রপতি ভবনের তিন কিলোমিটার আকাশপথ এদিন সিলড করে দেয়া হয়৷ তৈরি রাখা হয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, স্নাইপার ডগ, বম্ব-ডিসপোজাল স্কোয়াড ইত্যাদি৷
২৬শে মের সকালে মোদী প্রথমে যান মহাত্মা গান্ধীর সমাধি স্লে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করতে৷ তারপর কোনো এক সময়ে তিনি যান বিজেপির আদর্শ পুরুষ অসুস্থ অটল বিহারি বাজপেয়ীর বাসভবনে, তাঁর আশীর্বাদ নিতে৷