1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে ধর্ম

১৬ নভেম্বর ২০১২

কোন ধর্ম জার্মানির অংশ? সম্প্রতি এই শিরোনামে বার্লিনের ইহুদি মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত হল এক আলোচনা সভা৷ এতে অংশ নিয়েছিলেন অন্যান্যদের সাথে খ্রিষ্ট, ইহুদি ও ইসলাম ধর্মের প্রতিনিধিরা৷

https://p.dw.com/p/16kFm
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online/Falkenstein

‘ইসলাম জার্মানির অংশ' – এই মন্তব্য করে প্রাক্তন জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত করেছিলেন জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ জার্মানিতে বসবাসকারী মুসলিম জনসাধারণের সহানুভূতি পেলেও সমাজের মূল স্রোতের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর এই কথায়৷ ভুল্ফ-এর উত্তরসূরি ইওয়াখিম গাওক, যিনি একজন প্রটেস্ট্যান্ট যাজকও, সরাসরি এই বাক্যটিকে গ্রহণ করতে চাননি৷ তাঁর মতে ইসলাম নয়, শুধু মুসলমানরা জার্মানির অংশ৷

প্রটেস্টান্ট ধর্মতত্ত্ববিদ পেট্রা বার-এর মতে এই বক্তব্য নিতান্তই সিম্যান্টিকস, অর্থাৎ একই কথাকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করা৷ ইহুদি মিউজিয়ামের আলোচনা অনুষ্ঠানে, কোন ধর্ম জার্মানির অংশ? এই প্রশ্নের উত্তরে পেট্রা বার বলেন, ‘‘এটা খুব সহজই বলা যায়৷ সব জার্মানের ধর্মই জার্মানির অংশ৷ মুসলিমরা এই সমাজের অংশ, তাই ইসলামও৷ তাই এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করাটা আমার বোধগম্য হয় না৷ ইসলাম ছাড়া তো মুসলমান হওয়া যায় না৷''

Bischofswahl in Hamburg - Petra Bahr
প্রটেস্টান্ট ধর্মতত্ত্ববিদ পেট্রা বার মনে করেন, সব জার্মানের ধর্মই জার্মানির অংশ৷ মুসলিমরা এই সমাজের অংশ, তাই ইসলামও৷ছবি: picture-alliance/dpa

মুসলমানরাও জার্মানির অংশ

হয়ত বা জার্মানির অনেকের মনেই রয়েছে এই সুপ্ত আকাঙ্খা, ইসলাম ছাড়াই যেন মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকে৷ কিছুটা সমালোচনার সুরে বলেন জার্মান মুসলিম কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি আইমান মাজিয়েক৷ তাঁর মতেও মুসলমানরা ও ইসলাম জার্মানির অংশ৷ আইমান মাজিয়েক জানান, ‘‘আমরা সবাই জানি যে, তিনটি একেশ্বরবাদী ধর্মই ব্রান্ডেনবুর্গ বা তার আশেপাশের অঞ্চল থেকে আসেনি, এসেছে প্রাচ্যের জগৎ থেকে৷ অর্থাৎ আমাদের পাশ্চাত্যের পরিচিতি প্রাচ্যের পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমাদের পরিচিতি অনেক ধরনের ঐতিহ্যের মিশ্রণে সৃষ্ট৷ তা তিনি ইহুদি, খ্রিষ্টান মুসলিম যেই হোন না কেন৷''

জার্মানির পাঁচ শতাংশ মানুষ মুসলমান৷ যেখানে অ্যামেরিকায় আড়াই শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী৷ ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট মিলিয়ে জার্মানির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী৷ সমগ্র জনসাধারণের এক তৃতীয়াংশ কোনো ধর্মের আনুসারী নয়৷ অর্ধশত বর্ষ আগেও চিত্রটা ছিল অনেকটা ভিন্ন রকমের৷ ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানী ডেটলেফ পোলাক জানান, গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে ৯০ শতাংশ মানুষ ছিলেন খ্রিষ্টান৷ আজ অনেক ধরনের ধর্মানুসারী দেখা যায় জার্মানিতে৷ তা সত্ত্বেও ৭০ শতাংশ জার্মান খ্রিষ্ট ধর্মকেই জার্মান সংস্কৃতির মূল ভিত বলে মনে করেন৷ জনসাধারণের অধিকাংশই ইসলামকে অপরিচিত বলে প্রত্যাখ্যান করেন৷ অন্যদিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে এক্ষেত্রে অনেকটা খোলামেলা মনোভাব লক্ষ্য করা যায়৷

Stephan Kramer Podiumsdiskussion Judisches Museum Berlin
ইহুদি কেন্দ্রীয় পরিষদের মহাসচিব স্টেফান কামার এক সমীক্ষার কথা স্মরণ করে জানান, ৫০ শতাংশ জার্মান প্রতিবেশী হিসাবে কোনো ইহুদিকে চান নাছবি: Zentralrat der Juden in Deutschland

জার্মানদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব

বছর দুয়েক আগে পরিচালিত ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ফ্রান্স, ডেনমার্ক কিংবা পর্তুগালের অধিবাসীদের তুলনায় জার্মানরা নতুন কোনো মসজিদ বা মিনার নির্মাণের বিরুদ্ধে অনেক বেশি সোচ্চার৷ এ ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের সমানাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রেও কার্পণ্য লক্ষ্য করা যায় জার্মানদের মধ্যে৷

সমাজবিজ্ঞানী পোলাক-এর ভাষায়, ‘‘মুসলিমদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় জার্মানিতে বেশ কম৷ প্রাক্তন পশ্চিম জার্মানির ৩৪ শতাংশ ও প্রাক্তন পূর্ব জার্মানির মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ মুসলিমদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন বলে জানিয়েছেন৷ অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি জার্মানদের মনোভাব তুলনামূলকভাবে বেশি ইতিবাচক৷ ''

ইহুদিদের প্রতিও সৌহার্দ্যপূর্ণ নয়

অবশ্য ইহুদি ধর্মের প্রতিও বহু জার্মানের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে৷ অনেকে ইহুদিদের প্রতি রীতিমত বৈরিভাবাপন্ন৷ ইহুদি মিউজিয়ামের এই আলোচনাসভায় ইহুদিদের কেন্দ্রীয় পরিষদের মহাসচিব স্টেফান কামার এক সমীক্ষার ফলাফলের কথা স্মরণ করে জানান, ৫০ শতাংশ জার্মান প্রতিবেশী হিসাবে কোনো ইহুদিকে চান না৷ অন্যের সম্পর্কে নেতিবাচক বদ্ধমূল ধারণা দূর করা সম্ভব, যদি পরস্পরের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হওয়া যায়৷ বলেন কামার৷ যেমন, অন্যান্য ধর্মের ছুটির দিনগুলি জানা ও সম্মান করা শিখতে হবে৷ জার্মানিতে বের হওয়া ক্যালেন্ডারেও এই সব তারিখ চিহ্নিত করা উচিত৷ স্টেফান কামার-এর ভাষায়, ‘‘আমি কয়েক বছর আগে চলা সেই বিতর্কের কথা বলছি না, যার বিষয়বস্তু ছিল খ্রিষ্ট ধর্মের মত অন্যান্য ধর্মের পালা পার্বনেও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা উচিত কিনা৷ এখানে বিষয় হল, কী করে আমরা একটি সমাজে স্বীকৃতি পেতে পারি, যদি না কমপক্ষে এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়৷ আমাদের এই সমাজে এই দেশেরই কিছু নাগরিক রয়েছেন, যারা অন্য ধর্মের অনুসারী, যাদের রয়েছে নিজস্ব ধর্মীয় ছুটির দিন৷ এই তথ্য জানাটাই অনেককে মানসিকভাবে নাড়া দিতে পারে৷ কিন্তু অজ্ঞতাই এখানে জাঁকিয়ে বসেছে৷''

প্রতিবেদন: বেটিনা মার্ক্স/আরবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য