সেই দিনটিকে স্মরণ করছে জাপান
১১ মার্চ ২০১৫বুধবার এক মিনিটের জন্য নীরব ছিল জাপান৷ গত তিন বছরও এমনই হয়েছে৷ ২০১১ সালের ১১ই মার্চ ঠিক ২টা ৪৬ মিনিটে শুরু হয়েছিল প্রচণ্ড ভূমিকম্প৷ রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার সেই ভূমিকম্পের ফলে শুরু হয় সুনামি৷ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুকুশিমার পারমাণবিক কেন্দ্র৷ পারমানবিক চুল্লি ছিদ্র হয়ে যায়৷ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশাল এলাকায়৷ সুনামিতে সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর হোক্কাইডো থেকে শুরু করে ওকিনাওয়া পর্যন্ত এলাকার প্রায় সব ঘর-বাড়িই ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেদিনের সেই প্রাকৃতিক এবং পারমানবিক চুল্লির বিপর্যয়ে মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার ৫শ' মানুষ৷ অন্তত ২ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ৷ বুধবার ঠিক ২টা ৪৬ মিনিটে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে জাপান৷
রাজধানী টোকিয়োতে আয়োজিত স্মরণসভায় জাপানের সম্রাট আকিহিতো চার বছর আগে প্রাণ হারানো মানুষদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক লক্ষ মানুষের প্রতি সমবেদনা জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘সেদিন টেলিভিশনের পর্দায় যে দৃশ্য দেখেছি তা কোনোদিনই আমরা ভুলতে পারবোনা৷'' প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ফুকুশিমা বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্তরাও এ স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন৷
চার বছর পেরিয়ে গেলেও ফুকুশিমা বিপর্যয়ের রেশ এখনো কাটেনি৷ ফুকুশিমার দায়িচি পারমানবিক চুল্লির আশপাশের এলাকায় এখনো তেজষ্ক্রকীয়তা ছড়িয়ে থাকায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ নিজেদের ঘরে ফিরতে পারছেননা৷ তখন ঘর হারানো ২ লক্ষ ২৮ হাজার মানুষ এখনো বাস করছেন অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে৷
জাপানে মোট ৪৮টি পারমানবিক চুল্লি রয়েছে৷ ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর থেকে সবগুলোই নিষ্ক্রিয়৷ তবে শিনজো আবের সরকার চুল্লিগুলো আবার পর্যায়ক্রমে চালু করতে চায়৷
বুধবারের স্মরণসভার আগে শিনজো আবের সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের এক বৈঠক হয়৷ সেখানে ম্যার্কেল জার্মানির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জাপানকেও ধীরে ধীরে পারমানবিক চুল্লিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার কর্মসূচি হাতে নেয়ার পরামর্শ দেন৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর দেশের পারমানবিক চুল্লি রক্ষণাবেক্ষণের যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে৷ ফুকুশিমা বিপর্যয়ের চার বছর পূর্তির দিনে জাপানের সাধারণ মানুষের কথায় অবশ্য সেরকমের আস্থা দেখা যায়নি৷ আবার কোনো চুল্লিতে চার বছর আগের মতো বিপর্যয় দেখা দেবেনা এটা তাঁরা ধরে নিতে পারছেননা৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ সম্পর্কে এতটা নিশ্চিত হওয়ার কোনো কারণ বা যৌক্তিকতাও নেই৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)