1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার দিল্লি-স্বপ্ন কতটা বাস্তব

২৯ জুলাই ২০২১

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাখির চোখ দিল্লির মসনদ। আগেও এই স্বপ্ন তিনি দেখেছেন। এবারের পরিস্থিতি কী?

https://p.dw.com/p/3yEZm
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: Payel Samanta/DW

রাজনীতিতে শূন্যস্থান বলে কিছু হয় না। যখনই তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, কেউ না কেউ সেই জায়গা পূর্ণ করে। সাংবাদিকতার শিক্ষানবিশির সময় শিখিয়েছিলেন এক স্বনামধন্য সাংবাদিক। তখন অবশ্য জোট রাজনীতির রমরমার সময়। একক শক্তিতে কোনো দল ক্ষমতা দখল করবে, এমন পরিস্থিতি ভারতে ছিল না।

সময় বদলেছে। তবে ওই শূন্যস্থান পূরণের অঙ্ক বদলায়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অঙ্ক মাথায় নিয়েই রাজধানী দিল্লিতে ক্যাম্প ফেলেছেন। গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় রাজনীতির ভাত তিনি টিপে দেখার চেষ্টা করছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন, বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে জাতীয় স্তরে তার গুরুত্ব ঠিক কতটা? বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেকটা। গোটা দেশ জুড়ে বিজেপির, থুরি মোদী-শাহের রমরমা বাজারে পশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমূল যেভাবে বিজেপির রথ আটকে দিয়েছে, তা জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ। ভঙ্গুর কংগ্রেস, ফ্যাকাশে আঞ্চলিক দলগুলির বাজারে মমতার তৃণমূল আঞ্চলিক হয়েও জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত মমতার নাম মুখেমুখে ঘুরছে। বিচক্ষণ রাজনীতিক মমতাও বুঝতে পেরে গেছেন, হয় এবার নয় নেভার। অর্থাৎ, কংগ্রেসের অঙ্গুলিহেলনে নয়, তার অঙ্গুলিহেলনে কংগ্রেস এবং বাকি বিজেপি বিরোধী জাতীয় এবং আঞ্চলকি দলগুলি মঞ্চ তৈরি করবে। সেই মঞ্চই ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রধান বিজেপি-বিরোধী শক্তি হয়ে উঠবে। এবং তারা যদি একত্রে লড়াই করতে পারে, তাহলে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা হয়ে উঠবেন প্রধান নেতা। এমনকী, প্রধানমন্ত্রীও!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে। তাই পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির প্রায় সমস্ত সাংবাদিকই দিল্লিতে। প্রেস ক্লাবে তাদের সঙ্গে আড্ডা হচ্ছিল দিল্লির সাংবাদিকদের। সেখানে এক প্রথম সারির খবরের কাগজের দুঁদে রিপোর্টার বলেই ফেললেন, মোদী-মমতা বৈঠক আসলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক। মমতা আসলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন।

এখানেই সমস্যা। ২০১৪ সালেও এই একই ভুল করেছিলেন মমতা। দিল্লির নেতাদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের পর তিনি ভেবে বসেছিলেন, মসনদ হাসিল প্রায় হয়েই গেছে। দিল্লির বুকে তখন আন্না হাজারের আন্দোলন চলছে। কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব বিরোধীরা। অরবিন্দ কেজরিওয়াল আন্নার সবচেয়ে বড় শিষ্য। সে সময় আন্নার আন্দোলনকেই নিজের রাজনৈতিক জমি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন মমতা। আন্নার সঙ্গে বৈঠক হয়। ঠিক হয়, দিল্লির ময়দানে মমতা-আন্না একসঙ্গে সভা করবেন। ওই সভায় শেষ মুহূর্তে আন্না আসেননি। মমতা পৌঁছানোর পর দেখা যায়, প্রথম সারির আসনও ভর্তি হয়নি। ভোটের আগেই মমতার স্বপ্নভঙ্গ হয়।

২০১৯ সালের নির্বাচনে মমতা দিল্লি নয়, কলকাতাকে বেছে নিয়েছিলেন নিজের দিল্লির স্বপ্নের মঞ্চ হিসেবে। কাশ্মীরের ফারুক আব্দুল্লাহ থেকে শুরু করে কর্ণাটকের দেবগৌড়া-- সকলকে নিয়ে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিরোধী জোটের উত্তরীয় উড়িয়েছিলেন। বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গ দেখেছিল, দিল্লি দূরের বাত, পশ্চিমবঙ্গেই বিজেপির কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

২০২১ সালের নির্বাচনে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছেন মমতা। বাংলায় সত্যিই বিজেপিকে তিনি পর্যুদস্ত করেছেন। এবং ফের দিল্লিরস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এ কথা ঠিক যে, আগের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি খানিকটা হলেও আলাদা। ২০১৪ সালে মোদী ম্যাজিক ছিল। কংগ্রেস বিরোধী হাওয়া ছিল। ২০১৯ সালেও মোদীর ক্যারিশমা ছিল। ছন্নছাড়া বিরোধী অবস্থান ছিল। কিন্তু ২০২০ থেকে দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী হাওয়া ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। সিএএ বিরোধী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি সব মিলিয়ে বিজেপি আর তার আগের পরিস্থিতিতে নেই। ফলে বিরোধীদের জোটবদ্ধ হওয়ার এটাই যে মোক্ষম সময়, তা নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিরোধী শূন্যস্থানটা পূর্ণ করবে কে? একজন ব্যক্তি, না কি একটি সমষ্টি। এচাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যত দল তত পথ। সকলেই নিজের স্বার্থ বুঝে জোটবদ্ধ হবে। স্বার্থের সংঘাত গোড়াতেই স্পষ্ট। মমতা যখন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন, রাহুল গান্ধী তখন তৃণমূলকে বাদ দিয়ে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন। এই সংঘাত গোড়াতেই ছেঁটে ফেলতে না পারলে, ফল গত দুইবারের চেয়ে ভিন্ন হবে না। মমতাকেও বুঝতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের মডেলে জাতীয় রাজনীতি করা যায় না। তার হিসেব আলাদা। সেখানে নিজেকে একমাত্র এবং বাকি সকলকে লাইপোস্ট ভাবলে সমস্যা। মমতা যদি সেই ইগো ভাঙতে পারেন, তাহলে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন জমবে। যদি না পারেন, তাহলে ফের একবার লেগ স্ট্যাম্প মাটিতে রেখে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দিতে হবে।