1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার মুখে ‘জয় বাংলা’, লাভ হবে কি?

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান৷ প্রতিটি নির্বাচনী সভায় মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বারবার শোনা যাচ্ছে এই স্লোগান৷

https://p.dw.com/p/3pqC7
‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ভরসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta

যে ধ্বনি ছিল বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণা, সেই ‘জয় বাংলা’ এখন পশ্চিমবঙ্গের মহারণে বিজেপি-র বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম রাজনৈতিক হাতিয়ার৷ বুধবারের জনসভার কথাই ধরা যাক। হুগলির জনসভায় বারবার মমতার মুখে উঠে এল এই স্লোগান৷ এমনকি তিনি বললেন, ‘‘আপনারা ফোন করার সময় হ্যালো বলবেন না৷ বলুন ‘জয় বাংলা’৷ আবার ফোনে কথা শেষ হওয়ার পর বলুন জয় বাংলা৷’’ এভাবেই ‘জয় বাংলা’কে তৃণমূলের প্রধান সম্ভাষণ, সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্লোগানে পরিণত করেছেন মমতা৷ ফলে ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান ধ্বনি৷ ‘খেলা হবে’ আগেই প্রায় থিম সং করে ফেলেছে তৃণমূল৷ এবার তারা ‘জয় বাংলা’কেও আঁকড়ে ধরেছে বিজেপি-র মোকাবিলায়৷ 

কিছুদিন ধরে মমতা এই বিধানসভা নির্বাচনকে বাঙালি বনাম বাহিরি-তে পরিণত করতে চাইছেন৷ মানে, পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী মমতা বনাম বাইরের রাজ্য থেকে আসা বিজেপি নেতাদের লড়াই৷ পুরো পশ্চিমবঙ্গকে সাতটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের দায়িত্ব একজন অবাঙালি নেতার হাতে তুলে দিয়েছেন মোদী-শাহ৷ এরপর তৃণমূল বাঙালি বনাম বাহিরি প্রচারে আরো সোচ্চার হয়েছে৷ তৃণমূলের মুখপাত্ররা প্রশ্ন করেছেন, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায় বা কোনো বাঙালি নেতাকে কি বাইরের কোনো রাজ্যে দায়িত্ব দেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা?

এই পরিপ্রেক্ষিতে বিধানসভা ভোটের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই পরিণত হয়েছে ‘জয় বাংলা’ বনাম 'জয় শ্রীরামে'৷ 

উইকিপিডিয়া বলছে, ‘জয় বাংলা’র কথা প্রথম পাওয়া যায় কাজী নজরুলের একটি কবিতায়৷ আর এটি স্লোগানে পরিণত হয় ১৯৬৯ সালে৷ শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে তাঁর ভাষণ শেষ করেন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে৷ তারপর গোটা মুক্তিযুদ্ধ জুড়ে এই ধ্বনি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা৷

পরে অবশ্য আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা এই স্লোগানকে কুক্ষিগত করেছে৷ ভারতেও স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম ধ্বনি ছিল ‘বন্দে মাতরম’৷ পরে তা কংগ্রেসের প্রধান স্লোগানে পরিণত হয়৷ 

'জয় বাংলা' হলো আম বাঙালির৷ তাকে রাজনীতির স্লোগানে পরিণত করা কি ঠিক? তাতে কি লাভ হবে? ভাষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, অধ্যাপক পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘আমি একজন শান্তিপূর্ণ, সাধারণ নাগরিক। স্লোগান ও পাল্টা স্লোগান দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করা যায়, কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের খুব লাভ হয় বলে মনে হয় না৷’’ পবিত্র সরকার বলেছেন, ‘‘যে কোনো ধর্মীয় স্লোগানের আমি বিরোধী৷ অবশ্য জয় বাংলা যে ভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তা হতেই পারে, তবে মুখ্যমন্ত্রী কি ভাষাগত দিকটি দেখাবার চেষ্টা করছেন, না কি অঞ্চলগত দিকটি, না কি কেবল স্লোগানের জন্য স্লোগান দিচ্ছেন, তা আমার জানা নেই৷’’

অধ্যাপক আশিস চক্রবর্তীর মতে, ভোটের বিষয় হওয়া উচিত, রাজ্যের উন্নয়ন, বেকারদের চাকরি, জিনিসপত্রের দাম, কৃষক সহ সাধারণ মানুষের সমস্যার মতো বিষয়গুলি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘সেসব বাদ দিয়ে বাঙালি সেন্টিমেন্টকে তুলে ধরে আঞ্চলিকতাবাদকে প্রশ্রয় দেয়া আমার মতে অর্থহীন৷ আমি ভোটে কেন এই সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দেব? তৃণমূল তো নিজেদের সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল বলে দাবি করে৷ তা হলে কেন 'জয় বাংলা' স্লোগানকে তারা হাতিয়ার করবে?’’

পবিত্র সরকার মনে করেন, ‘‘স্লোগানের এমন ব্যবহার ভোটের রাজনীতির জন্য৷ তাতে সাধারণ মানুষের খুব কিছু যায় আসে না৷’’ আশিস চক্রবর্তীও মনে করছেন, ‘‘আম বাঙালির স্লোগান যখন রাজনৈতিক দলের স্লোগানে পরিণত হয়, তখন তার সীমা ছোট হয়ে যায়৷ এই স্লোগানকে হাতিয়ার করে কতটা রাজনৈতিক লাভ হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়৷’’

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷