দিল্লি কতটা নিরাপদ?
৯ মার্চ ২০১৪এই নিয়ে পর পর দুই বছর মহিলা, বিশেষ করে দেশের এবং বিদেশের মহিলা পর্যটকদের জন্য সবথেকে কম নিরাপদ শহরের তকমাটা আরো চেপে বসেছে রাজধানী শহর দিল্লির গায়ে৷ ভারতের ১০টি বড় শহরের মধ্যে সবথেকে কুখ্যাতি লাভ করেছে দিল্লি৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে, দেশের এবং বিদেশের মহিলা পর্যটকদের মতামত-ভিত্তিক এক সমীক্ষায় ভারতের এক ট্র্যাভেল সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে৷ এ বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে ৯৫ শতাংশ মহিলা পর্যটক দিল্লির নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন৷ ৬৪ শতাংশের মতে, কলকাতার স্থান দ্বিতীয় এবং ৫৩ শতাংশের মতে জয়পুর তৃতীয় স্থানে আছে৷ মহিলা নিরাপত্তার মাপকাঠিতে উত্তরদাতারা গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরকে বসিয়েছে ভারতের সব শহরের ওপরে৷ মুম্বই তার নীচে৷ ২০১৩ সালে মুম্বইয়ের স্থান ছিল প্রথমে৷ এ বছর নেমে এসেছে পঞ্চমে৷
দেশের ও বিদেশের মহিলা পর্যটকদের সবথেকে বেশি পছন্দ সেই সব জায়গা, যেখানে নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা তুলনামূলকভাবে উন্নত৷ তাই গন্তব্য হিসেবে প্রথম পছন্দ শহর, তারপর শৈলশহর এবং শেষে সমুদ্রতট৷ মহিলারা একা বেড়াতে পছন্দ করেন নাকি দল বেঁধে? প্রায় ৪৭ শতাংশ পছন্দ করেন দল বেঁধে এবং ৩৫ শতাংশ একা একা৷ ভারতের মহিলাদের কাছে পর্যটন মানে অবসর যাপন৷ ঐ ট্র্যাভেল কোম্পানির সমীক্ষায় বলা হয়, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি মহিলা ট্যুরিস্টদের হার ৪৩ শতাংশ আর ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ট্যুরিস্টদের হার স্রেফ ২৭ শতাংশ৷ এদের মধ্যে আছেন চাকুরিজীবী, স্বনিযুক্ত এবং গৃহিণী৷ তবে ইদানীং মহিলাদের মধ্যে বেড়ানোর নেশা ক্রমশ বাড়ছে৷ তা সে দল বেঁধে হোক বা একলা হোক৷ তবে দেশ-বিদেশের মহিলা ট্যুরিস্টদের প্রথম পছন্দের গন্তব্য যোগা সেন্টার, আধ্যাত্মিক স্থান৷ এদের সংখ্যা নিছক দ্রষ্টব্য স্থান দেখা এবং কেনাকাটা করতে আসা ভ্রমণার্থীদের চেয়ে তিনগুণ বেশি৷
বিদেশি মহিলা পর্যটকদের মনে নিরাপত্তার দিক থেকে দিল্লির ছবিটা কেমন? রীতিমত নেতিবাচক৷ তাঁরা মনে করেন, ২০১২ সালের ডিসেম্বরের গণধর্ষণের অপরাধীদের ফাঁসির সাজা হওয়ার পরও ধর্ষণ বা মহিলা নিগ্রহের ঘটনা কমেনি, বরং বেড়েছে৷ অতি সম্প্রতি ৫১ বছর বয়সি এক ডেনিশ মহিলার গণধর্ষণের শিকার হন দিল্লি রেলস্টেশনের অদূরে রাতে৷ উনি পথ হারিয়ে স্টেশনের কাছে জনবহুল পাহাড়গঞ্জ হোটেলের রাস্তা জানতে চাইলে রাস্তা দেখানোর নাম করে এক নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে তাঁরা গণধর্ষণ করে তাঁকে৷ কেড়ে নেয় তাঁর সবকিছু৷ গত মাস চারেকের মধ্যে ধর্ষিতা হন একজন পোলিশ, একজন জার্মান মহিলা পর্যটক৷ এরপরও কি বলা যায় ধর্ষণ মহানগরী হিসেবে দিল্লির কলঙ্ক মুছে যাবে ? তার জন্য অনেক কিছুই করা বাকি, বিশেষ করে বিদেশি মহিলা পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে৷ যেহেতু তাঁরা দিল্লির হালচাল ও বিপদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন৷
সমাজবিজ্ঞানী দেবদাস ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, দিল্লির এক শ্রেণির মানুষের নৈতিক অবক্ষয় চরমে৷ এরা হতে পারে স্থানীয় বা অন্য রাজ্য থেকে রুজিরোজগারের তাগিদে আসা৷ এরা তলিয়ে যায় মদ, মাদক এবং পর্নোগ্রাফিতে৷ ধর্ষণ, খুন, রাহাজানির এটা একটা বড় কারণ৷ পুলিশের নজরদারি একমাত্র সমাধান নয়৷ দিল্লির নাগরিক সমাজেরও ভূমিকা আছে৷ বিশেষ করে ট্যাক্সিচালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন দরকার৷ রেডিও ট্যাক্সি সেদিক থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ. দরকার পর্যটকদের জন্য যোগ্য গাইড এবং পথনির্দেশিকা৷
দিল্লির ধর্ষণকাণ্ডের মামলার রায়দানকালে জনৈক বিচারক মহিলাদের রাতবিরেতে বাইরে না যাবার পরামর্শ দেন৷ তার জবাবে ভারতের প্রথম মহিলা সলিসিটার ইন্দিরা জয়সিং মহাত্মা গান্ধীর উক্তি উদ্ধৃত কোরে বলেছিলেন, ‘‘ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবেনা, যতদিন না রাতবিরেতে ধর্ষণ, নিগ্রহ বিনা মহিলাদের রাস্তাঘাটে চলাচল করার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হচ্ছে৷‘‘