বাংলায় মাইগ্রেন্ট-রাইটস ডটঅর্গ
৮ আগস্ট ২০১২মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে গাল্ফ অঞ্চলে প্রবাসী শ্রমিকরা অনেক দিন ধরেই ‘অদৃশ্য সংখ্যাগুরু' সম্প্রদায় হিসেবে বাস করছে৷ এদের মধ্যে একটি বড় অংশ আসছে দক্ষিণ এশিয়া থেকে৷ অর্থাৎ, বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের বহু মানুষ কাজ করছেন লেবানন, সৌদি আরব, কুয়েত ও দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে৷
মধ্যপ্রাচ্যে লেগেই আছে শ্রমিক অসন্তোষ
দুঃখের বিষয়, এই সব শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের কাহিনী নতুন নয়৷ কিন্তু এই শ্রমিকদের নিয়ে পত্র-পত্রিকায় যেমন কম লেখা হয়ে থাকে, তেমনই চাকুরিদাতা দেশগুলির সরকারপক্ষ থেকে অল্পই সাহায্য পায় তারা৷ তার ওপর এসব শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় ঐ দেশগুলিতে স্পষ্ট কোনো নীতিও তৈরি হয়নি৷ তাই তাদের প্রতিবাদে কেউ কর্ণপাতও করে না৷
না, কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়৷ কারণ এই প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরে, তাদের মানবাধিকার এবং সম্মান হরণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই একদিন সোচ্চার হয় ‘মিডইস্ট ইয়ুথ' নামের একটি সংস্থা৷ শুরু করে এমন একটি প্রকল্প, যার মাধ্যমে এই সব মানুষের অবস্থা সম্পর্কে অন্যকে জানানো যায় এবং তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করা যায়৷
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্রকল্প
এই প্রকল্পটিরই নাম ‘মাইগ্রেন্ট-রাইটস ডটঅর্গ'৷ ডয়চে ভেলের বব্স পুরস্কার জয়ী আধুনিক দিনের দাসত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে বাংলা ব্লগার রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যে অনেক সমস্যা৷ অনেকে ঠিক মতো তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না৷ সেই অবস্থাতেও, অর্থাৎ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা এই ওয়েবসাইট'টা চালাচ্ছে, সেটার জন্য আমি প্রথমেই তাদের সাধুবাদ দিতে চাই৷ এছাড়া ওখানে নিয়মিত আলোচনা করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক আইনগুলো নিয়ে, কি করে শ্রমিকের অধিকার আরো বাড়ানো যায়৷ এবং এর মাধ্যমে সেখানকার বিভিন্ন নির্যাতনের কথা উঠে আসে৷ অথবা মিডিয়াতে যেগুলো প্রচার হয় না, সেগুলো তুলে ধরার একটা প্রয়াস আছে৷ কাজেই একটা দেশে যদি একটা ভালো কিছু হয়, সেটা দেখেও অন্যরা হয়ত অনুপ্রাণিত হতে পারে, সেই জিনিসটা অন্য দেশেও নিয়ে আসার জন্য৷''
‘মিডইস্ট ইয়ুথ' সংস্থাটির অন্যতম আহমেদ জিদান ক'দিন আগে ডয়চে ভেলেকে একটি চিঠি লিখে বাংলা ভাষায় ওয়েবসাইট'টির অনুবাদ হওয়ার কথা জানান৷ বলেন, ‘‘গত এপ্রিল মাস থেকে চেষ্টা করে এতদিনে কাজটা শেষ হয়েছে৷ আমরা খুবই আনন্দিত৷ ধন্যবাদ ডিডাব্লিউ এবং বব্স'কে, যারা নিঃসন্দেহে প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকারকে সর্ব সমক্ষে আনতে সহায়ক ছিল৷''
রেজওয়ান জানান, ‘‘আহমেদের সঙ্গে আমার একটা ‘কনফারেন্স'-এ দেখা হয় গত এপ্রিল মাসে এবং তখনই কথা প্রসঙ্গে আসে যে, আমাদের দেশে যেহেতু অনেকেই বাংলাতে পড়তে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, কাজেই এটাকে যদি বাংলায় করা যায় তবে অনেকের কাছে পৌঁছানো যাবে৷ তখন আমরা গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন'এর সঙ্গে কথা বললাম৷ এরপর আমরা এই সাইট'টিকে বাংলা ভাষায় রূপান্তরের কাজ শুরু করি৷ এর জন্য একটা ‘কমিউনিটি' আছে আমাদের৷ আর ভবিষ্যতে আমরা আশা রাখি যে, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিক যারা আছেন, তারা এই সাইট'এ সরাসরি লিখতে পারবেন৷ মানে তাদের জন্য একটা ‘প্ল্যাটফর্ম' গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে৷''
ন্যূনতম নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এরা
বলা বাহুল্য, প্রবাসী শ্রমিকরা বাংলাদেশের সমাজ এবং অর্থনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে৷ এদের মধ্যে অনেকেই দক্ষ পেশাজীবি হিসেবে সম্মানজনক চাকরি করছেন অথবা সফল ব্যবসায়ী৷ কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে এমনও বহু মানুষ কর্মরত আছেন যারা কায়িক শ্রম, গৃহস্থালীর কাজ বা গাড়ি চালকের কাজ করে থাকেন৷ এরাই অবজ্ঞার শিকার এবং শোষণের শিকার৷
বব্স'এর ২০১১ সালের বাংলা ভাষার বিচারক রেজওয়ানুল ইসলাম বললেন, ‘‘বাংলাদেশের আট জন শ্রমিকের যখন শিরশ্ছেদ করা হলো, সেই সম্পর্কে লেখাও ওখানে আছে৷ এটা শুধু একটি দেশের না৷ কারণ যে দেশেরই শ্রমিক হন, তারা সবাই ভাগ্যবঞ্চিত এবং তাদের সবার কথাই এখানে তুলে ধরা হয়৷ তবে আমাদের প্রয়াস থাকবে যে, আমরা ভারতীয় উপমহাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের দিকে একটু বেশি নজর দেবো৷ তারপরে আমাদের যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে আমরা অন্যান্য জায়গার শ্রমিকদের সম্পর্কেও লেখাগুলো অনুবাদ করতে চেষ্টা করবো৷''
ওয়েবের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি
রেজওয়ানের কথায়, বাংলাদেশের যেসব শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা জানতেও সহায়ক এই ওয়েবসাইটটি৷ তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকদের সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করাই সাইটটির মূল প্রয়াস৷ বিশেষ করে, এসব শ্রমিকদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর মাইগ্রেন্ট-রাইটস ডটঅর্গ৷
তাই ওয়েবসাইটটি খুললেই চোখে পড়ে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী পোস্ট৷ যেমন, সৌদি আরব কি স্পন্সরশিপ প্রথা বাতিল করবে? বাহরাইন: কর্মস্থলের বাজে পরিবেশ অভিবাসীদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ উদ্বাস্তু অভিবাসীদের প্রতি সাড়া দিতে বিশ্ব সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে৷ অথবা এইডস আক্রান্ত পরিচারিকা এবং বেদনার অন্য উপাখ্যানগুলো৷
প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা সম্পর্কে তথ্য যোগ করা হয়েছে মাইগ্রেন্ট-রাইটস ডটঅর্গ-এ৷ ‘অ্যানিমেশন' আকারেও নিজেদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরছে ‘মিডইস্ট ইয়ুথ'৷ এছাড়া ফেসবুক এবং টুইটারেও পাওয়া যাবে মাইগ্রেন্ট-রাইটস ডটঅর্গ'কে৷ @মাইগ্রেন্টরাইটস হচ্ছে এর টুইটার ঠিকানা৷ দেড় হাজার অনুসারি নিয়মিতই টুইটারে এই সাইটটিকে অনুসরণ করছে৷ চাইলে আপনিও নিজেকে জুড়ে নিতে পারেন এই ঠিকানায়৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী