মাওবাদী গণহত্যা
২৭ মে ২০১৩কীভাবে ঘটলো এই গণহত্যা? কীভাবে নিখুঁত ছকে সরকারের নিরাপত্তা বলয় ছিন্নভিন্ন করে দিল মাওবাদী গেরিলা হামলা? আরেকবার তারা প্রমাণ করে দিল নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতা৷ কোথায় গলদ তার তদন্ত করবে জাতীয় তদন্ত সংস্থা৷ কে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এক সঙ্গে এতজন কংগ্রেস নেতা-কর্মীর ২৫টি গাড়ির কনভয় নিয়ে সব থেকে মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা সুকমা থেকে জগদ্দলপুর যাবার?
কতজন জানতো এই সফরের কথা? অথবা কখন যাবে, কোথা দিয়ে যাবে, কে কে সফরে থাকবেন? সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে পুলিশ বা কংগ্রেস পার্টির কেউ হতে পারে৷ স্পষ্টতই সেই খবর আগাম পৌঁছে গিয়েছিল মাওবাদী ডেরায়৷ কারণ মাওবাদীদের প্রথম লক্ষ্য ছিল বরিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা মহেন্দ্র কার্মা যিনি ‘‘সালওয়া জুডুম'' নামে মাও-বিরোধী মিলিশিয়া গঠনে শীর্ষ ভূমিকা নিয়েছিলেন, যা কার্যকর করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলিতভাবে ২০০৫ সালে৷ পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অবশ্য তা রদ করা হয়৷
মনে করা হচ্ছে, মাওবাদীরা এখন নিরাপত্তা বাহিনী এবং রাজনৈতিক কর্মী, উপজাতি জনগোষ্ঠীদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে একইসঙ্গে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে৷ এই লড়াই উপজাতিদের বৃহত্তর কল্যানের জন্য নয়, তারা ভেঙে ফেলতে চায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ৷ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করে মাওবাদীদের লড়াইয়ের জায়গাটা যাতে দুর্বল করে দিতে না পারে৷ প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী থেকে সব দলের নেতা নেত্রীরা মাওবাদীদের এই হত্যালীলাকে বলেছেন গণতন্ত্রের ওপর বিরাট আঘাত৷
এর প্রতিকারের জন্য জরুরি হলো জঙ্গিবাদ দমনে নিযুক্ত এজেন্সিগুলির মধ্যে ঘনিষ্ট সমন্বয়ের মাধ্যমে উপজাতি এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প অব্যাহত রাখা৷ শান্তি ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে যদি মাওবাদী বা নক্সাল দমনে আরো শক্তিপ্রয়োগ করা হয়, তাহলে মাওবাদীদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে৷ তবে মাওবাদীদের দমনে সেনা নামানো হবেনা, সেটা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ দমন-পীড়ন মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে স্থানিয় জনগোষ্ঠী থেকে সরকার হয়ে পড়বে বিচ্ছিন্ন৷ উল্লেখ্য, গত ১৭ই মে নক্সাল বিরোধী অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিল ৮জন গ্রামবাসী৷ তাঁদের মধ্যে ছিল শিশু৷ পুলিশের সন্দেহ ঐ গ্রামে লুকিয়ে ছিল নক্সালরা৷ এই ঘটনায় আদিবাসিরা ক্ষুব্ধ৷ নিরাপত্তা বাহিনীকে ওরা মনে করে বাইরে থেকে আসা শত্র্রু৷ সেভাবেই তাঁদের মগজ ধোলাই করেছে নক্সালরা৷
গোটা ভারতে প্রায় ২০০টি নক্সাল উপদ্রুত জেলা আছে৷ তাঁদের হাতে মারা গেছে এ পর্যন্ত আট হাজার মানুষ৷ মাওবাদী আন্দোলন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নক্সালবাড়ি জেলায়৷ ৭০-এর দশকে মতভেদের কারণে নক্সাল আন্দোলন দুভাগে বিভক্ত হয়৷ ২০০৪ সালে পিপলস ওয়ার গ্রুপ এবংমাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার আবার একত্রিত হয়৷ নাম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী )৷
এদের লক্ষ্য সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করা৷ তাদের মতে, কারণ বহু-জাতিক সংস্থাগুলির দ্বারা অর্থনৈতিক ঔপনিবেশিক শোষণ এবং ভারতের জাতপাতের জন্য সামাজিক শোষণ৷ মাওবাদীদের বেশিরভাগ সদস্য গ্রামের প্রান্তিক হলেও নেতারা হলেন শহুরে শিক্ষিত৷ এদের নীতির মধ্যে আছে দ্বিচারিতা৷ ব্যবসায়ীদের এরা খুন করেনা৷ কারণ তাঁদের কাছ থেকে এরা টাকা আদায় করে৷