মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য
৫ ডিসেম্বর ২০১৪অ্যামাজন নদীর উপত্যকার পশ্চিমাংশে মানু ন্যাশনাল পার্ক৷ পার্কের অধিকাংশই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য৷ তার গভীরে গেলে দেখা যাবে, ফ্রাংকফুর্টের প্রাণিবিদ্যা সমিতির হয়ে রব উইলিয়াম্স এখানে একটি পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্প চালাচ্ছেন৷
বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ এখানে বাস করে৷ নদীর কুমিরগুলো প্রায় বিশ ফুট অবধি লম্বা হতে পারে৷ মানু-তে নানা ধরনের জীবজন্তুরও কোনো অভাব নেই – যেমন কাপিবারা, বিশ্বের বৃহত্তম ইঁদুর গোত্রীয় প্রাণী৷ ঘন জঙ্গলে তাদের সকলকে দেখা যায় না – তবে আন্দাজ করা যায়, কত রকমের অদ্ভুত জীবজন্তু এখানে লুকিয়ে আছে৷ মানু-র বিশেষত্ব হল এই যে, এই জঙ্গলে মানুষও থাকে, উপজাতি মানুষ – যেমন মাচিগুয়েঙ্গা, যারা এই অরণ্য পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷
রব উইলিয়াম্স ও তাঁর সহকর্মীরা নিয়মিত এখানে আসেন৷ রব-এর মতে, ‘‘এই ধরনের উপজাতি সম্প্রদায়গুলির পক্ষে চ্যালেঞ্জটা হলো, চাইলে তারা তাদের প্রথাগত জীবনযাত্রা বজায় রাখতে পারবে কিনা৷ এ ক্ষেত্রে আমরা শুধু তাদের নিজস্ব সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করছি৷ আর যারা পয়সা রোজগার করতে চায়, পার্কের বাইরে মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতির অঙ্গ হয়ে বাঁচতে চায়, তারা যেন সে জগতেও তাদের নিজেদের জায়গা খুঁজে পায়৷ একক ব্যক্তি এবং গোটা সম্প্রদায়ের পক্ষে সেটাই হল চ্যালেঞ্জ৷''
উনিশ বছরে জনসংখ্যা বাড়ছে দ্বিগুণ
বহু পরিবার এক টুকরো জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে প্রয়োজনীয় গাছপালা লাগান৷ তবে অধিকাংশ মাচিগুয়েঙ্গা-ই তাদের পূর্বপুরুষদের মতোই বেঁচে থাকেন: শিকার করে, ফলমূল সংগ্রহ করে; টাপিওকা চাষ করে অথবা মাছ ধরে৷ মানু-তে এখনও মানুষ আর প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় আছে৷ ন্যাশনাল পার্কে মোট হাজার খানেক মাচিগুয়েঙ্গা বাস করেন – কিন্তু প্রতি ১৯ বছরে তাদের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে৷ পরিবেশগত সম্পদের উপর তার কী প্রভাব পড়ছে? রব উইলিয়াম্স বলেন, ‘‘এই সব মানুষদের প্রোটিন খাওয়া দরকার৷ শিকার করে ও মাছ ধরে থেকে তারা সেটা পেতে পারে৷ সেটা একটা টেকসই পদ্ধতি৷ এদের মাছ ঠাণ্ডা রাখার কোনো রেফ্রিজারেটর নেই৷ রোজকার যা প্রয়োজন, সেই পরিমাণ মাছ ধরে তারা৷ তার বেশি মাছ ধরে কোনো লাভ নেই, বিক্রি করার মতো বাজারও নেই৷ যা মাছ ধরে, তা ভাগাভাগি করে নেয়৷ বিরাট বড় একটা সিঙি মাছ ধরলে, একটা পরিবারের একদিনের খাওয়া চলে যায়, অন্যদের জন্যও কিছু পড়ে থাকে৷ ওদের এর বেশি প্রয়োজন পড়ে না৷''
হিসাব রেখে শিকার
তবে মাছ তো সবসময় ধরা পড়ে না৷ কাজেই জঙ্গল ও তার প্রাণীরা মাচিগুয়েঙ্গাদের কাছে প্রোটিনের আর একটি উৎস৷ শুধু পুরুষরাই শিকারে যান – তীরধনুক নিয়ে৷ মাচিগুয়েঙ্গারা জঙ্গলের প্রতিটি ঝোপঝাড় চেনেন৷ রব জানালেন, ‘‘ধারণাটা হল এই যে, উপজাতিরা নিজেরাই হিসাব রাখতে পারবে, তারা কী পরিমাণ শিকার করছে এবং যে এলাকায় তারা শিকার করছে, সেখানে ঐ প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা ঠিক কতো৷ এর ফলে তারা তাদের নিজেদের সম্পদ আরো টেকসইভাবে ব্যবহার করতে পারবে, যাতে তা চিরদিন ব্যবহার করা চলে৷''
এভাবে মাচিগুয়েঙ্গারা মানু-র জীববৈচিত্র্যকেও বাঁচিয়ে রাখছে৷ তারা দেখাচ্ছে, মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশের অঙ্গ হতে পারে৷ আবার সেই মানুষই স্বল্পতম সময়ে সেই ভারসাম্য বিনাশও করতে পারে৷