‘মানুষ বেশি হলে ঝুঁকিও বেশি হবে এমন কোনো কথা নেই’
১৩ মার্চ ২০২০মিডিয়া কতটুকু দায়িত্বশীল? ডয়চে ভেলের সঙ্গে এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন, রোগ তত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা৷
ডয়চে ভেলে : আপনারা দু'টি হাসপাতালকে নির্ধারিত রেখেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তা কি যথেষ্ট?
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা : আসলে আমরা দু'টি হাসপাতাল নির্ধারিত রাখিনি৷ আগে থেকেই আমরা প্রতিটি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট করেছিলাম৷ প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ৫টি করে বেড আমরা সব জায়গায় রেখেছিলাম৷ এখন আমরা খুঁজছি, এমন হাসপাতাল ৫০ বেড বা ১০০ বেড হাসপাতাল, যেখানে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি৷ পৃথক আইসোলেশন ইউনিট করার চেষ্টা করছি৷ এর মধ্যে ঢাকায় একটাকে পৃথক করে রেখেছি৷ যেখানে অন্য কোনো রোগী ভর্তি হয় না৷ আরো কয়েকটি হাসপাতালে পৃথক বেড রাখা হয়েছে৷ আরো দুই তিনটি হাসপাতাল পৃথক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে৷
রোর্গ নির্ণয়ের স্থান কতগুলো?
এটা শুধুমাত্র আমাদের অফিসেই রেখেছি৷ এটা না হলে ঝামেলা হয়ে যাবে৷
রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম কি শুধু আপনাদের এখানেই আছে, নাকি অন্য জায়গাতেও আছে?
এটা শুধুমাত্র আমাদের এখানেই রেখেছি৷ কারণ, একটা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সেটাকে ফলোআপ করতে হয়৷ এই কারণে অন্য কোথাও দেইনি৷ যেহেতু এখানে রোগীর সংখ্যাও কম, তাই আমাদের নেটওয়ার্ক করা আছে, স্যামপল আমাদের এখানে চলে আসে৷ আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমরা এক জায়গায় রেখেছি৷
তাহলে জেলা শহরে করোনা ভাইরাস নির্ধারণে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
জেলা শহরে যদি কেউ ‘সাসপেকটেড' হয়, আমাদের সার্ভিলেন্স টিম সেখানে গিয়ে স্যামপল কালেক্ট করে৷ প্রথম হটলাইনে কল করে৷ তারপর আমরা সাজেষ্ট করি, সে কোথায় যাবে৷ কাছের হাসপাতালে যেতে বলি আমরা৷ আমাদের টিম স্যামপল কালেক্ট করে ঢাকায় পাঠানোর পর আমরা পরীক্ষা করে তারপরই সিদ্ধান্ত দেই৷
আমরা দেখছি, কিছু হাসপাতালে সর্দি-কাশি নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন না৷ আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন৷ এর থেকে পরিত্রাণের পথ কী?
আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি৷ হঠাৎ করেই তো ধরা পড়েছে৷ অনেকে মনে করছেন, রোগী হয়ত আরো বেশি আছে৷ অনেকেই কনফিউশনে আছেন, মনে করছেন টেষ্ট করলে ভালো হয়৷ এখন পর্যন্ত আমাদের তিনটি রোগী৷ এটা সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছি৷ তবে সার্ভিলেন্স হিসেবে আমরা কিছু মানুষের স্যামপল টেস্ট করে দেখছি, তাদের মধ্যে পজেটিভ হয় কিনা৷ যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের থেকেই আমরা এগুলো টেষ্ট করছি৷
বিদেশ থেকে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বলেছেন৷ কেউ যদি না থাকে, সেগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে?
জেলা শহর বা উপজেলা লেভেলে ইউনিয়ন পরিষদ অফিস বা স্বাস্থ্য সহকারীদের দিয়ে আমরা তাদের মনিটরিং করছি৷ আমাদের উপজেলা ও জেলা দুই লেভেলেই আমাদের পৃথক কমিটি করা আছে৷ ওই কমিটি এগুলো মনিটরিং করছে৷ প্রতিটি জেলা শহরেই কো-অর্ডিনেশন কমিটি আছে৷ তারা এগুলো মনিটরিং করছে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা মোবাইলে ফোন করে মনিটরিং করি৷ যদিও এটা পারফেক্ট না৷ সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় যারা আছেন, তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করি৷
চিকিৎসক ও নার্স যারা সেবা দিচ্ছেন বা দেবেন তাদের কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে?
করোনার ক্ষেত্রে পৃথক প্রশিক্ষণের কিছু নেই৷ এটা সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো৷ এখানে প্রিভেনশনই প্রধান৷ সেই বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি৷
জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মূলত আমরা পোষ্টার লিফলেট তৈরি করেছি, সেগুলো বিলি হচ্ছে৷ পত্রিকায়, টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে৷ স্থানীয় যেসব প্রতিনিধি আছেন, তারা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন৷ আমরা প্রতিদিন প্রেস বিফিং করছি৷ এটা সরাসরি গণমাধ্যমে যাচ্ছে৷ সোশাল মিডিয়া মনিটরিং করছি৷ ওয়েবসাইট সবসময় আপডেট করা হচ্ছে৷ আসলে গণমাধ্যমের সহযোগিতা আমরা অনেকখানি নিচ্ছি৷ গণমাধ্যম আমাদের অনেকখানি সহযোগিতা করছে৷
সংবাদ প্রকাশে মিডিয়া কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে? আরো কী কী করা যেতে পারে?
মিডিয়া যথেষ্ট সহযোগিতা করছে৷ আমরা তাদের সহযোগিতা পুরো মাত্রায় পাচ্ছি৷ অনেক তথ্য আমরা মিডিয়া থেকে পাচ্ছি, যা মনিটরিংয়ের জন্য কাজে লাগছে৷ তারা আমাদের সহযোগী যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে৷ তবে মিডিয়ার একটা চ্যালেঞ্জের জায়গা আছে, সেটা ঢালাওভাবে না৷ দু'একটি মিডিয়ায় রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাচ্ছে৷ ছোট্ট দেশ, সবাই তথ্য পেয়ে যান৷ কিন্তু সব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না৷ আমরা প্রত্যাশা করি, ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যাপারে তারা শ্রদ্ধাশীল হবেন৷
বাসায় পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি থেকে যায় কিনা...
কিছুটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়৷ তবে আমরা বাসায় কোয়ারেন্টাইন বলতে যা বলেছি, তাকে পৃথক রুমে রাখতে হবে৷ পরিবারের সদস্যরাও তার সঙ্গে মিশবেন না৷ যদি এক্ষেত্রে বাসায় একটি রুম থাকে, তাহলে তাকে আমাদের যে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এসে থাকতে হবে৷ যাদের সেই ব্যবস্থা নেই, তাদের কিন্তু আমরা এনে রাখছি৷
ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ঝুঁকি কি বেশি?
আমি সেটা মনে করি না৷ ঘনবসতি একটা চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু ঘনবসতি যদি না-ও হয় আর যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে যে কোনো দেশেই এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ মূল বিষয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা৷
মাস্ক নিয়ে দেশে হৈ চৈ হচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা কতটা ?
মাস্ক সাধারণ মানুষের জন্য আদৌ প্রয়োজন নেই৷ আমরা সবসময় বলছি, মাস্কের চেয়ে হাঁচি-কাশি, শিষ্টাচার, ঘনঘন হাত ধোয়া, হ্যান্ডশেক না করা, কোলাকুলি না করা, রোগীর থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, এগুলো মেনে চললেই হবে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷