মানুষের জিন কি ওজন কমানোর চাবিকাঠি?
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০লাইপসিশ শহরের এক জিন সংক্রান্ত গবেষণাগারে প্রোফেসর পেটার কোভাচ ও তাঁর সহকর্মীরা সেই সব জিনের মধ্যে রদবদল আনার চেষ্টা করছেন, যেগুলি আমাদের ওজন স্থির করে৷ গবেষক হিসেবে প্রোফেসর পেটার কোভাচ মনে করেন, ‘‘মানুষ মোটা হোক বা রোগা থাকুক, সেটা খাদ্যগ্রহণ ও ক্যালরির পরিমাণ এবং শরীর সঞ্চালনের উপর নির্ভর করে৷ কিন্তু ওজন ধরে রাখার বিষয়টি জিনের ওপর নির্ভর করে৷ আমরা সেটি শনাক্ত করে ভালো করে বুঝতে চাই৷''
প্রত্যেক মানুষের শরীরে হাজার হাজার জিন রয়েছে৷ রোমান হরফে এ, সি, টি এবং জি অক্ষর অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা জিনের মধ্যে জোড়া উপাদানের নাম রেখেছেন৷ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এই অক্ষরের প্রভাব মোটামুটি এক৷ তবে কখনো কখনো এই জিনের ভিন্ন রূপ দেখা যায়৷ তখন হয়তো একটি অক্ষর শ্রেণির মধ্যে অন্য এক স্থান পায়৷ সে ক্ষেত্রে মানুষের ওজনের উপর বিশাল প্রভাব দেখা যায়৷
কোন মানুষের ক্ষেত্রে ওজন কমানোর কোন পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, তা রোগীর জিনের উপর নির্ভর করে৷ সেই লক্ষ্যে জার্মানির লাইপসিশ শহরে ডাক্তার ও জিন গবেষকরা একযোগে কাজ করছেন৷ প্রোফেসর মাটিয়াস ব্ল্যুয়ার তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজনের উৎস সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে আমরা গবেষণা চালাচ্ছি৷ ব্যক্তির প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়াই মূল লক্ষ্য৷''
এখনো অতিরিক্ত ওজনের মানুষকে জিনভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ গবেষকরা এখনো পর্যন্ত প্রায় ২১ লক্ষ জিন শনাক্ত করেছেন, ওজনের উপর যেগুলির প্রভাব রয়েছে৷ তবে একভাবে শরীরের ওজনের উপর এসব জিনের প্রভাব অত্যন্ত কম৷ প্রোফেসর পেটার কোভাচ মনে করেন, ‘‘এটা ঠিক যে এই সব জিনের প্রভাব অত্যন্ত কম৷ এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী জিনও বড়জোর দুই কিলো পার্থক্য আনতে পারে৷''
সবচেয়ে পরিচিত ও প্রভাবশালী জিনের নাম এফটিও৷ সেটি আমাদের মেদের কোষে মেদ ঝরানোর কাজ করে৷ অর্থাৎ, মেদ জমবে না ঝরবে, এই জিনই সেটা স্থির করে৷ আমাদের শরীরে মোট তিন ধরনের ফ্যাট সেল রয়েছে৷ সাদা কোষ মেদ জমায়৷ খয়েরি কোষ মেদ ঝরায় ও সেটা করতে গিয়ে উত্তাপ সৃষ্টি করে৷ তৃতীয়ত, ধূসর ফ্যাট সেল একইসঙ্গে মেদ ঝরাতে এবং জমা রাখতে পারে৷ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এফটিও জিন মেদ শুধু জমাতে পারে, কিন্তু ভালো করে ঝরাতে পারে না৷ ফলে ওজন বেড়ে যায়৷
অন্য একটি প্রভাবশালী জিন হলো এমসিফোরআর৷ সেটি খিদের অনুভূতি সৃষ্টি করে৷ সেটির কিছু রূপ মানুষের মধ্যে খিদের অনুভূতি দাবিয়ে রাখে৷ ফলে সেই মানুষটি রোগা থাকেন৷ অন্য কিছু রূপ আবার সব সময়ে খিদের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে৷
জিনের এমন রূপ থাকলে কখনোই খিদে মেটে না৷ তখন অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ওজনও বেড়ে যায়৷ প্রোফেসর ব্ল্যুয়ার বিষয়টির উপর আলোকপাত করে বলেন, ‘‘অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে কোনো জিন হয়তো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়৷ খাদ্যগ্রহণের মাঝের ফারাক বাড়িয়ে অথবা কম ক্যালরির খাবার খাইয়ে আচমকা সেটি সক্রিয় করে তোলা যেতে পারে৷ তখন চর্বির মেটাবোলিজম অথবা শর্করার মেটাবোলিজম আরো ভালোভাবে কাজ করে৷ ফলে ওজন কমাতে সুবিধা হয়৷''
মোটকথা, আমরা জিনের ক্রিয়ার সামনে মোটেই অসহায় নই৷ তবে এখনো ওজন কমাতে চাইলে শরীর সঞ্চালন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই৷
উলরিকে হাইমেস/এসবি