হৃদযন্ত্র ভালো রাখে খেলাধুলা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০টর্স্টেন ভেন্ট এখন চুটিয়ে খেলাধুলা করেন৷ অথচ তার অতীতটা এমন নয়৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক প্রকল্প আয়োজন করেছি৷ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি৷ সারাক্ষণ বাইরে বাইরে থেকেছি৷ নিজেকে কিন্তু লুকিয়ে রাখতাম৷''
এমন জীবনযাত্রার পরিণাম ভালো হয় না৷ উচ্চতার তুলনায় তাঁর ওজন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে৷ ফলে হৃদযন্ত্রের উপর মারাত্মক চাপ পড়েছে৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রাংক ক্র্যুমেল তাঁর জন্য চরম সতর্কতা জারি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হৃদযন্ত্রের পাম্পিং ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে৷ আপনার ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ৷ স্বাভাবিক মাত্রা ৫৫ শতাংশ৷''
তবে একইসঙ্গে তিনি সাহসও দিচ্ছেন৷ টর্স্টেন চাইলে নিজেই অবস্থা বদলাতে পারেন৷ তিনি যথেষ্ট নড়াচড়া করে ওজন কমাতে পারলে তাঁর হৃদযন্ত্রেরও উপকার হবে৷ টরস্টেন ভেন্ট বলেন, ‘‘বোধোদয় ঘটতে মাস তিনেক সময় লাগলো৷ তারপর একবার হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে বললাম, এই মুহূর্ত থেকে তোমার নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে হবে৷''
সেই দিন থেকে তিনি ওজনের দিকে নজর রাখছেন৷ প্রতিদিন নিজের ওজন মাপছেন৷ টর্স্টেনের মতো দুর্বল হৃদযন্ত্রের মানুষের জন্য এমনটা করা জরুরি৷ এভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷
ডাক্তারের পরামর্শে তিনি নিজের খাদ্যাভ্যাসও বদলে ফেলেছেন৷ অত্যধিক মাংসের বদলে মাছ, শাক-সবজি ও স্বাস্থ্যকর তেল খাচ্ছেন৷ হাতেনাতে ফলও পাওয়া গেছে৷ এক বছরে টর্স্টেন ২০ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়েছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘আজ আমি সুপারমার্কেটে গেলে আমার ঝুড়ি দেখলে মনে হবে আমি যেন বাগানের উপকরণ কিনছি৷''
স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধু সঠিক খাদ্য খেলেই চলবে না, সেইসঙ্গে নিয়মিত খেলাধুলাও করতে হবে৷ টর্স্টেন আলস্য ঝেড়ে ফেলে সেই পথ বেছে নিয়েছেন৷ ফলে তাঁর হৃদযন্ত্রেরও উপকার হচ্ছে৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রোফেসর ড. হার্ম ভিনব্যার্গেন বলেন, ‘‘হৃদযন্ত্র একদিকে আরো কম চাপে কাজ করতে শেখে৷ তথাকথিত ‘আফটারলোড' বা প্রতিরোধ কমে যায়৷ দুর্বল হৃদযন্ত্রের ক্ষেত্রে অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়৷ নিয়মিত খেলাধুলা করলে সেটা কমে যায়৷''
টর্স্টেন ধীরে ধীরে খেলাধুলা শুরু করে ভালোই করেছেন৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞও সেই পরামর্শ দিয়েছিলেন৷ সঙ্গে কিছু ব্যায়ামও দেখিয়ে দিয়েছিলেন৷ ড. ক্র্যুমেল বলেন, ‘‘কেউ যদি কখনো হাঁটতে না বেরিয়ে থাকে, তাকে সবার আগে ব্রিস্ক ওয়াকিং করতে বলি৷ তারপর বলি নিজের ক্লান্তি নিজেই অনুভব করো৷ না পারলে কোনোমতেই জোর করে চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়৷ তখন গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে বাসায় ফিরে যেতে হবে৷ আধ ঘণ্টা হেঁটে বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়াই আদর্শ অবস্থা৷''
নিজের বাসার একটি ঘরে টর্স্টেন ছোট একটি জিম গড়ে তুলেছেন৷ সেখানে বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে তিনি ব্যায়াম করেন৷
এক বছর অনুশীলনের পর এখন তাঁর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে৷ হৃদযন্ত্র অনেক ভালোভাবে কাজ করছে এবং তিনি নিজে বেশ ভালো বোধ করছেন৷
সিগরুন ডামাস/এসবি