মার্কিন আইনের খসড়ার বিরুদ্ধে উইকিপিডিয়ার অভিনব প্রতিবাদ
১৮ জানুয়ারি ২০১২নতুন নাম, শব্দ বা জায়গার কথা শুনলে আজকাল আর লাইব্রেরি ছুটতে হয় না, ইনসাইক্লোপিডিয়া বা বিশ্বকোষের বিশাল কোনো খণ্ড বইয়ের তাক থেকে নামিয়ে ঘাঁটতে হয় না৷ ইনসাইক্লোপিডিয়ার তথ্যভান্ডার ঢুকে পড়েছে ইন্টারনেটের মধ্যে৷ কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের পর্দায় তার নাগাল পাওয়া যায়৷ নামী-দামী সংস্থার বিশ্বকোষ দেখতে প্রায়ই মাশুল গুনতে হয়৷ তাই সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য রয়েছে উইকিপিডিয়া৷ এর বিশেষত্ব হলো, সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সেই তথ্যভাণ্ডারে তথ্যের যোগান দিয়ে থাকেন, প্রয়োজনে তা আপডেট করতে পারেন, ভুল শোধরাতে পারেন৷ আর সবাই বিনামূল্যে সেই তথ্যভান্ডার ঘেঁটে দেখতে পারে৷
সেই উইকিপিডিয়ার ইংরাজি সংস্করণ বুধবার বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ছুটি নয়, প্রতিবাদ হিসেবেই ইন্টারনেটে এই ‘হরতাল'৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি দু'টি আইন পেশ করা হয়েছে, যেগুলির ঘোষিত উদ্দেশ্য অনলাইন মাধ্যমে পাইরাসি ও ইন্টারনেটে আইপি ঠিকানার অপব্যবহারের মোকাবিলা করা৷ কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে আসলে মত প্রকাশের অধিকার সীমিত করা হবে এবং পাইরাসির অজুহাত দেখিয়ে যে কোনো ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হবে৷ এমনকি সেই ওয়েবসাইট যদি কপিরাইট আইন ভঙ্গ নাও করে, নতুন এই আইনের মাধ্যমে এমন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে৷
মার্কিন কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উইকিপিডিয়া বুধবার বন্ধ রাখা হয়েছে৷ এদিন উইকিপিডিয়ার ইংরাজি ওয়েবসাইটে গেলে স্বাভাবিক তথ্য দেখা যায় নি৷ তার বদলে কালো প্রেক্ষাপটের উপর লেখা রয়েছে – এমন এক বিশ্বের কথা কল্পনা করুন, যেখানে বিনামূল্যে জ্ঞান পাওয়া সম্ভব নয়৷ উইকিপিডিয়া আরও লিখেছে, ‘‘এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা কোটি কোটি ঘণ্টা ব্যয় করে মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইনসাইক্লোপিডিয়া তিলে তিলে গড়ে তুলেছি৷ কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস এই মুহূর্তে এমন সব আইন অনুমোদন করার কথা ভাবছে, যার ফলে মুক্ত ও বিনামূল্যের ইন্টারনেটের মারাত্মক ক্ষতি হবে৷ এবিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে আমরা ২৪ ঘণ্টার জন্য উইকিপিডিয়া ব্ল্যাক-আউট করে দিচ্ছি৷''
জনপ্রতিনিধিদের উপর এবিষয়ে চাপ বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছে উইকিপিডিয়া৷ মার্কিন নাগরিকদের প্রতি তাদের বার্তা, ‘কংগ্রেসকে বলুন, তারা যেন ইন্টারনেটে সেন্সরশিপ চালু না করে৷'
উইকিপিডিয়া একা নয়, মার্কিন কংগ্রেসের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে আরও কয়েকটি ওয়েবসাইট, যার মধ্যে রয়েছে রেডিট, মুভ-অন, মোজিলা, বোইং বোইং ইত্যাদি৷ গুগল ও টুইটারও বিরোধিতা করছে, কিন্তু তারা ব্ল্যাক-আউট করতে রাজি হয় নি৷ উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসও এই আইনের বিরোধিতা করছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক