1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ক্রসফায়ারে বিরতি?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ জানুয়ারি ২০২২

বাংলাদেশে ক্রসফয়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আপাতত বন্ধ রয়েছে৷ ১০ ডিসেম্বর পুলিশ ও ব়্যাবের সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর গত ৩৪ দিনে একটিও ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়নি৷

https://p.dw.com/p/45UMx
ফাইল ছবিছবি: Getty Images/AFP

কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগেও ক্রসফায়ার হয়েছে৷ ১০ ডিসেম্বরের আগের পাঁচদিনে ক্রসফয়ারে পাঁচজন নিহত হয়েছেন৷

তবে ক্রসফায়ার সাময়িক বন্ধের ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷ এর আগেও ২০২০ নাসের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে পুলিশের হাতে ক্রসফায়ারের নামে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর কিছুদিন ক্রসফায়ার বন্ধ ছিল৷

২০১৮ সালের ২৬ মে কক্সবাজারের টেকনাফের ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হককে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার ঘটনার পর একটি অডিও প্রকাশ হওয়ায় ক্রসফায়ার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল৷

সিনহা হত্যায় জড়িতরা বিচারের মুখোমুখি হলেও একরামের পরিবার গত প্রায় চার বছরে  কোনো মামলাই করতে পারেনি৷

একরামকে হত্যার পর তার স্ত্রী আয়েশা বেগম তার দুই কন্যাকে নিয়ে ভয়ে এলাকা ছাড়তেও বাধ্য হয়েছিলেন৷ এখন অবশ্য আবার টেকনাফের বাড়িতে ফিরে এসেছেন৷ বৃহস্পতিবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘটনার পর আমার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে৷ কিন্তু মামলা তো নেয়া হয়ই নাই, উলটো হুমকি দেয়া হয়েছে৷ আমি এখনও মামলা করতে চাই৷ যারা একরামকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো সেই কর্মকর্তাদের আমি চিনি৷ কিন্তু মামলা করলে আমাদের ক্ষতি হবে৷ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরও মামলার সাহস আমি পাচ্ছি না৷আর আমাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ মামলার কথা বলছেনও না৷ তবে অভয় দিলে আমি মামলা করতে চাই৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন ক্রসফায়ার বন্ধ আছে৷ কিন্তু যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবার তো বিচার পায়নি৷ যারা জড়িত, তারা তো ভালো আছেন৷ তাদের তো কোনো শাস্তি হয়নি৷ একরামকে যারা হত্যা করেছে তারা এখন বদলি হয়ে গেছেন মাত্র, আর কিছু নয়৷''

একরামের ভাই এখন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয়েছেন৷ তিনি মাসে যে ১০ হাজার টাকা ভাতা পান সেটা একরামের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে দেন৷ তাই দিয়ে অনেক কষ্টে একরামের পরিবার চলছে৷

সরকারের উচিত হবে সাময়িক নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড স্থায়ীভাবে বন্ধ করা: ড. মিজানুর রহমান

আইন ও সালিশ (আসক) কেন্দ্রের হিসাবে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৮০টি৷ ২০২০ সালে ২২২ জন এবং ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন নিহত হন৷ তাদের হিসেবে ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তিন হাজার ৩৬৪ জন৷

আসকের সাধারণ সম্পাদক এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘বিশেষ বিশেষ ঘটনায় আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমতে দেখি৷ সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাস বন্ধ ছিল৷ আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর এখন সাময়িক বন্ধ আছে৷''

তার কথা, ‘‘এটা কোনো সমাধান নয়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে৷ আর একটি স্বাধীন কমিশন করে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে৷ এখন পর্যন্ত সিনহা হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কোনো ঘটনায় জড়িতদের আমরা বিচারের মুখোমুখি হতে দেখিনি৷ এটা হয়তো একটি বিশেষ পেশার কারণে হয়েছে৷''

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর উদ্যোগ

আসকের সাধারণ সম্পাদক নূর খান অভিযোগ করেন, ‘‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর যারা  গুমের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের মতো করে লিখিত বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করছে৷ আমাদের (আসক) কাছ থেকেও তারা ক্রসফায়ারের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা চেয়েছে৷ তারা কী উদ্দেশ্যে এটা করছে জানিনা৷ তবে সরকার চাইলে ক্রসফয়ার গুম বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি৷''

একরামকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো সেই কর্মকর্তাদের আমি চিনি: আয়েশা বেগম

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে কী হয় সেটা বলে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে জায়েজ করার কোনো উপায় নেই৷ কারণ মানবাধিকার একটি আন্তর্জাতিক বিষয়৷ আমি মনে করি মার্কিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ এর আরো পরবর্তী প্রতিক্রিয়া আছে৷ এর সঙ্গে তার মিত্রদের সম্মতি আছে বলে আমি মনে করি৷ ফলে সরকারের উচিত হবে সাময়িক নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড স্থায়ীভাবে বন্ধ করা৷''

ব়্যাবের বক্তব্য

ব়্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, ‘‘বিভিন্ন অভিযানে গুলিবিনিময়ের ঘটনা তখনই ঘটে যখন সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর গুলি চালায়৷ বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান আমাদেরকে আত্মরক্ষার্থে গুলি করার অনুমতি দিয়েছে৷ এই ধরনের গুলিবিনিময় কোনো ইস্যুকেন্দ্রিক কম, বেশি হয় না৷ মূলত ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে বিভিন্ন অভিযানে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বিধায় গোলাগুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেনি৷''

২০০২ সালেও অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে ৫০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়৷ ওইসময় অপারেশন ক্লিনহার্টের ব্যাপারে দায়মুক্তি দেয়া হলেও আদালত ২০১৫ সালে ওই দায়মুক্তি বাতিল করে দেয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়৷ একই সঙ্গে যারা ক্ষতির শিকার, তারা এবং তাদের পরিবার মামলার সুযোগ পাবেন বলে জানানো হয়৷

ক্লিনহার্টে নির্যাতনের শিকার একজন সাভারের সাংবাদিক বরুন ভৌমিক নয়ন জানান, তিনি মামলার জন্য কাগজপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাগজপত্র জেগাড় করা বেশ কঠিন হচ্ছে৷ তিনি জানান, ‘‘আমাকে আটকের পর তিন দফা নির্যাতন চালানো হয়৷ মুক্তি পাওয়ার পর আমি দেড় মাস হাসপাতালে ছিলাম৷ আমি এখনও চিকিৎসার মধ্যেই আছি৷'' তিনি আরো অভিযোগ করেন, তাকে আটকের পর তার হাতে একটি অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তুলে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়েছিলো৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য