1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মাস্তানদের চাঁদা দেওয়া লাগলে তো গরুর দাম বাড়বেই’

২৩ জুন ২০২৩

প্রতি বছর কোরবানির ঈদ আসলেই গরুর ট্রাকে চাঁদাবাজি নিয়ে আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নানা ধরনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

https://p.dw.com/p/4Szvw
Bangladesch Eid Markt vor dem Fest
ফাইল ফটো৷ছবি: Rajib Paul

কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। গরুর ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধ করা কী খুব কঠিন? তাহলে কেন এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না? কীভাবেই বা গরুর ট্রাক বা গরুর হাটে শৃঙ্খলা আসতে পারে? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ।

ডয়চে ভেলে : কোরবানি পশুর হাট নিয়ে এবারও  বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন এসব নির্দেশনা?

নূর মোহাম্মদ এমপি : একটা বিষয় কি, আমরা প্রতি বছরই দেখি গরুর হাট নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা হয়। প্রতি বছরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর থেকে বিভিন্ন জেলায় কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। কেন দেওয়া হয়? একটা শৃঙ্খলায় আনার জন্য। কোরবানির ঈদে পশু বিক্রিকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের নতুন মানুষ রাস্তায় নামে। অনেক সময় দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা গরুর ট্রাক আটকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসে। এই কারণে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয় যেন সবাই পরিপত্রের বিধান মেনে চলেন। 

এসব নির্দেশনায় কি আসলে কোন কাজ হয়?

অবশ্যই। কাজে লাগবে না কেন? এখন প্রশ্ন হল, বড় অফিসগুলো তো বসেই আছে তাদের কাজে লাগানোর জন্য। এটা নির্ভর করবে আপনি কতটা ভালোভাবে মনিটরিং করছেন। যদি আপনি দেখেন আপনার নির্দেশাবলী ঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে না, তাহলে যারা প্রতিপালন করবেন না তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ব্যবস্থা নেওয়ার আগে যারা মনিটরিং করবেন তারা যেন চোখ কান খোলা রাখেন। তারা কিন্তু বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে তথ্য নিতে পারেন, যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো ঠিকমতো প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা। এটার সঙ্গে কিন্তু সবাই সম্পৃক্ত থাকে। সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সবাই কিন্তু দেখেন কোথায় কী হচ্ছে। এখানে গোপন করার কিছু নেই। কোথাও কিছুর ব্যত্যয় দেখলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতি বছরই গরুর হাট, গরুর ট্রাক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। সবসময় এই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে পুলিশ। এতোসব নির্দেশনার পরও কেন এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না?

আমি মনে করি, এখান থেকে বের হওয়াটা খুব কঠিন কিছু না। এখানে শক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সব কর্মকর্তা কিন্তু এক রকম না। অপরাধ প্রবণতা মানুষের মজ্জাগত, এটা থাকবেই। এখানে কতটা শক্তভাবে আপনি এটা হ্যান্ডেল করতে পারছেন তার উপর এটা নির্ভর করে। আমি আশা করব, এবার যারা এটা মনিটর করবেন তারা যেন শক্ত একটা অবস্থানে থেকে এটা মনিটর করেন। কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে তার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ সবাই যেন একটু চোখ কান খোলা রাখেন। শুধু কাউকে দোষারোপ করলে হবে না। এখন যদি ভয়টা থাকে যে, আমি অপরাধ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তাহলে কিন্তু এটা কমে যাবে। এটা না হলে হবে না।

অভিযোগ আছে, সরকার দলীয় নেতাকর্মী এবং পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে ঢাকায় গরুর দাম বাড়ে। বিষয়টি কী আসলে এমন?

এই কারণে তো গরুর দাম বাড়তেই পারে। যদি পথে পথে চাঁদা দেওয়া লাগে তাহলে গরুর দাম বাড়বে না? রাস্তায় যদি মাস্তানরা চাঁদা নেয় তাহলে তো গরুর দাম বাড়বেই। শেষ পর্যন্ত তো যারা গরু কিনবেন তাদেরই এই বাড়তি অর্থ দিতে হয়। সেই কারণে আমি বলি, শক্ত অবস্থান নিলে বা নিতে পারলে কাজ হবে। তা না হলে কেউ পালন করল কী করল না সেটা যদি দেখার কেউ না থাকে তাহলে বরাবরের মতোই অভিযোগ অভিযোগের জায়গায় থাকবে।

ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসে

এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া পশুর গাড়ি থামানো যাবে না। যদি অপরাধীরা এই সুযোগটা নেয়?

এই ধরনের নির্দেশনা কিন্তু এবার না, আমি যখন আইজিপি ছিলাম তখনও আমি একটা ফোন নম্বর সবাইকে দিয়ে দিয়েছিলাম। সেই নম্বরটা পুলিশ সদর দফতর থেকে মনিটরিং করা হতো। আমি বলে দিয়েছিলাম গরুর ট্রাক যেই থামাক না কেন ট্রাক চালন যেন ওই নম্বরে ফোন করেন। ফলে এই কথাগুলো বরাবরই বলা হচ্ছে। সব জায়গায় আইনের প্রয়োগটা একইভাবে হয় না। যেখানে ভালো কর্মকর্তা আছেন সেখানে কিন্তু এই অভিযোগ শুনবেন না। আবার যারা একটু শিথিলতার সঙ্গে কাজ করেন, পেশাগতভাবে অতোটা ভালো করেন না তাদের এলাকায় এই ধরনের অভিযোগ শুনবেন।

পশুর হাটের ইজারায় কোনো সংকট আছে বলে আপনি মনে করেন?

সংকট কিছু না। সবকিছুই আপনার কাছে। আপনি কতটুকু ভালোভাবে, পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজটা করবেন? এটাই আসল কথা।

ইজারা ন্যায়সঙ্গত হলে সমস্যা কী কিছুটা কমতে পারে?

ইজারা তো ইউএনও অফিস থেকে ডাকের মাধ্যমে হয়। যে বেশি টাকা দাম দেয় তাকেই তো হাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে তো আমরা দেখি, সরকার দলীয় নেতারা নানা কায়দায় ইজারা পেয়ে থাকেন?

এটা ঠিকই বলেছেন। আমাদের মতো দেশে যেটা হয়, যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের দলের নেতারা এই সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করেন। যেহেতু নিজের দল ক্ষমতায় ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের চেষ্টা থাকে ব্যবসাটা নিজেদের মধ্যে নেওয়ার জন্য। এটা থাকতেই পারে। এটা অস্বীকার করা যাবে না।

পশুর হাটের ব্যবস্থাপনায় কী পরিবর্তন আনা দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আসলে যারা দায়িত্বে থাকেন তারা যদি একটু মনিটর করেন এবং সবার মধ্যে যদি একটা ভয় থাকে তাহলেই কিন্তু কাজ হয়। কিন্তু যদি শিথিলতা থাকে যে, আমি কিছু করলেও আমার কিছু হবে না তাহলেই মুশকিল। সবগুলো প্রতিষ্ঠানেই তো এগুলো দেখভাল করার লোকজন আছে। সবাই যদি ঠিকমতো দেখভাল করেন তাহলে মানুষ অপরাধপ্রবন হলেও এটা কমে আসবে। মাথায় অপরাধ করার চিন্তা থাকলেও সে আর অপরাধ করবে না।

সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে আর কী করলে কোরবানির পশুর হাট সঠিকভাবে চলবে বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের দেশে আইন তো আছে। কিন্তু আইন করেই তো আপনি সব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার। এখানে শুধু আইন করলে তো হচ্ছে না। এখানে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। পেশাদারত্বের জায়গা থেকে কাজটা সঠিকভাবে করতে হবে। আমি আমার কাজটা সঠিকভাবে করছি কিনা সেটা দেখার জন্যও কিন্তু লোকজন আছে। সবাই যদি দায়িত্বটা পালন করে তাহলে আর কোন কিছু লাগে না। সবকিছুই ভালো চলে। কর্তা যারা আছেন তারা যদি ভালো হন, তাহলে দেখবেন প্রতিষ্ঠানটিও ভালো চলে। আমাদের মতো দেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটু সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা থাকবেই। এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু যারা কর্মকর্তা তারা কতটুকু সুবিধা দেবেন, এটা তাদের উপর নির্ভর করবে।

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য