আনামকে গ্রেপ্তার ও পত্রিকা বন্ধের দাবি
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬গত সপ্তাহে মাহফুজ আনাম একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক-শোতে স্বীকার করেন যে, ২০০৭ সালে ১/১১-র সময় তিনি তাঁর পত্রিকায় ডিজিএফআই-এর (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা) পাঠানো কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যা তথ্য নির্ভর ছিল না৷ প্রশ্নের মুখে আনাম এ কথাও স্বীকার করেন যে, তার মধ্যে ‘শেখ হাসিনার দুর্নীতি' সংক্রান্ত প্রতিবেদনও ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘ঐ প্রতিবেদন প্রকাশ ছিল আমার সাংবাদিকতা জীবনের বড় ভুল৷ আমি আমার সম্পাদকীয় নীতির এই ভুল স্বীকার করছি৷''
এরপর প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে একটি ‘স্ট্যাটাস' দিয়ে মাহফুজ আনামের গ্রেপ্তার দাবি করেন৷ দাবি করেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার৷ রবিবার রাতে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে অন্তত সাতজন সাংসদ মাহফুজ আনামকে গ্রেপ্তার, বিচার এবং ডেইলি স্টার পত্রিকাটি বন্ধের দাবি জানান৷ তাঁদের অভিযোগ, ‘‘মাহফুজ আনাম তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে ২০০৭ সালে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন৷ তিনি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন৷ এরপর সোমবার, মাহফুজ আনামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকায় ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিলও হয়৷
এদিকে মাহফুজ আনাম সোমবার তাঁর পত্রিকায় ২০০৭ সালে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পর দিন তাঁর লেখা একটি মন্তব্য প্রতিবেদন পুনর্মুদ্রণ করেন৷ মন্তব্য প্রতিবেদনটি প্রথম ছাপা হয়েছিল ২০০৭ সালের ১৭ই জুলাই৷ শিরোনাম – ‘দিস ইস লদ ওয়ে টু স্ট্রেনদেন ডেমোক্র্যাসি'৷
মন্তব্য প্রতিবেদনটি কেন পুনর্মুদ্রণ করা হলো, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘‘গতকাল (০৭.০২.২০১৬) জাতীয় সংসদে সাতজন সম্মানিত সংসদ সদস্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আমার বিচার দাবি করেছেন৷ তাঁদের দাবি, আমি সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলাম৷ আমরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি এবং বলছি যে, এই অভিযোগ সত্যনিষ্ঠ নয়৷''
তিনি জানান, ‘‘আমরা এই মন্তব্য প্রতিবেদনটি সংসদ সদস্যদের বিবেচনায় নেয়ার জন্য আবারো প্রকাশ করলাম৷ সংসদ সদস্য এবং পাঠকরা বিবেচনা করে দেখুন যে, এই মন্তব্য প্রতিবেদনের লেখক কি তাঁর (শেখ হাসিনা) গ্রেপ্তার চাইতে পারেন বা গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারেন?''
এ নিয়ে সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাহফুজ আনামকে গ্রেপ্তারের দাবি বা গ্রেপ্তার করা কোনো বিবেচনাপ্রসূত কাজ হবে না৷ তিনি নিজে ভুল স্বীকার করে কোনো অপরাধ করেননি৷ ১/১১-র সময় তাঁর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷ তাঁর ভিন্ন দর্শন থাকতে পারে৷ সেটা আলাদা বিষয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘পত্রিকা বন্ধের দাবি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷'' এটা করা হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা যাবে৷ তারা ভাববে, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নেই৷''
আবেদ খানের কথায়, ‘‘মাহফুজ আনাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন৷ তাঁর ভূমিকা পরীক্ষিত৷ তাই এ ধরনের কোনো ইস্যু নিয়ে তাঁর বা তাঁর পত্রিকার ওপর কোনো ধরনের খড়গ আসলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না৷''
অবশ্য তিনি এ কথাও বলেন যে, ‘‘মাহফুজ আনাম ভুল স্বীকার করে যে উদারতার প্ররিচয় দিয়েছেন, সেই পথেই নিজ সিদ্ধান্তে ডেইলি স্টার-এর সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাড়ালে হয়ত আরো বড় উদারতা এবং নৈতিকতার পরিচয় দেবেন৷ তবে এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার৷''
বন্ধু, ‘ডেইলি স্টার'-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামকে গ্রেপ্তারের পক্ষে না বিপক্ষে আপনি?