মিথ্যে বলছেন মোদী: দাবি বিরোধীদের
২৩ ডিসেম্বর ২০১৯সত্যি বলছেন কে? নরেন্দ্র মোদী, না অমিত শাহ? রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভার পরে এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে ভারতের রাজনৈতিক মহলে। বস্তুত, রবিবারের সভার পরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এ কথাও কেউ কেউ বলছেন যে, হয় মোদী, নয় শাহ মিথ্যেবাদী।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং নাগরিকপঞ্জি নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এখনও পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ২০ জন প্রতিবাদীর। প্রতিদিন দেশের কোণায় কোণায় হরতাল, মিছিল, সভা করছেন বিরোধীরা। রাস্তায় নেমেছে নাগরিক সমাজ। পরিস্থিতি যে বিজেপির পক্ষে সুখকর নয়, তা বুঝতে পারছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে মানুষের মনে ভরসা জোগাতে রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে সভা করেন মোদী। এবং স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এই পরিস্থিতির জন্য সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেন বিরোধীদের প্রতি। প্রতিবাদীদের ফের 'আরবান নকশাল' বলে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, ''শিক্ষিত হয়েও আপনারা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। মুসলিমদের ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন। সিএএ কিংবা এনআরসি দেশের ১৩০ কোটি মানুষকে বিপদে ফলবে না। এ দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের সমস্যায় ফেলবে না। আপনারা শিক্ষিত হয়েও শিক্ষার অপব্যবহার করছেন। মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।''
এতেই শেষ নয়, প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, আসামে এনআরসি হয়েছে আদালতের রায়ে। কিন্তু গোটা দেশ জুড়ে এনআরসি করার কোনও সিদ্ধান্তই সরকার নেয়নি। বিরোধীরা এ সব প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনও মুসলিম বিরোধী নয় বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলছেন। বিরোধীদের উপর যে দায় মোদী চাপিয়ে দিচ্ছেন, সে দায় তো তাঁর চাপানোর কথা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি অমিত শাহের উপর। মোদী অস্বীকার করলেও শাহ দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন গোটা দেশ জুড়ে এনআরসি হবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে সভা করতে এসে কলকাতায় একটি সাংবাদিক সম্মেলনে শাহ প্রথম বলেছিলেন তাঁরা ক্ষমতায় ফিরলে প্রথমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আনা হবে এবং তারপর গোটা দেশ জুড়ে এনআরসি হবে। এরপর একাধিক সভায় একই কথা বলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গত ২০ নভেম্বর সংসদে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ বলেছেন, দেশ জুড়ে এনআরসি হবে। তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীর বা সম্প্রদায়ের মনে কোনও প্রশ্ন না থাকাই ভাল। যদিও রবিবার রাত থেকে বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেল অমিত শাহের এনআরসি এবং সিএএ সংক্রান্ত টুইট ডিলিট করতে শুরু করে।
রবিবারের সভায় মোদী দাবি করেছেন দেশে কোথাও কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই, এবং তৈরিও হচ্ছে না। অথচ শাহ আগেই দাবি করে বসে আছেন, অনুপ্রবেশকারীদের পাঠানোর জন্য গোটা দেশ জুড়ে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে। একাধিক সভায় তিনি বলেছেন, বেছে বেছে বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে।
তা হলে কে সত্য বলছেন? মোদী, না শাহ? যিনি বলছেন না, তিনি তার মানে মিথ্যেবাদী! এই ভাষাতেই রবিবার বিকেল থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করতে শুরু করেছেন প্রতিবাদীরা। একই সঙ্গে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, রবিবার মোদী দেশের সম্পত্তি নষ্ট করার দায় চাপিয়েছেন প্রতিবাদীদের উপর। অথচ পুলিশের গুলিতে যে ২০ জনের প্রাণ চলে গেল তা নিয়ে একটি শব্দও ব্যবহার করলেন না কেন?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, রবিবারের সভায় মোদী পরিস্থিতির সামাল দিতে গিয়ে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিলেন।
এসজি/জিএইচ (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, দ্য টেলিগ্রাফ)