মুসলমানরাই মুসলমানদের খুনি!
৬ এপ্রিল ২০১৭গত অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সীমান্ত পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনার পর, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কয়েকশ' মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷ সেসময় জীবন বাঁচাতে প্রায় ৭৫ হাজাররোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার ত্যাগ করে সীমান্তবর্তী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷ তাঁদের অনেকেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ভয়ংকর নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমকে জানান৷ সেদেশের সেনাবাহিনী অভিযানের সময় নির্বিচারে হত্যা, শিশুহত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছে, যা জাতি নিধন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য বলে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে বলেন ভুক্তভোগীরা৷
তবে মিয়ানমারের ‘ডি ফ্যাক্টো' নেতা শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি, যিনি একজন অধিকারকর্মী হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত পরিচিত মুখ, রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের কোনো সমালোচনা করেননি৷ বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না যে, সেখানে জাতি নিধন করা হচ্ছে৷ আমার মতে, একটি জাতিকে নিধন করা হচ্ছে বলাটা সেখানে যা হচ্ছে, অর্থাৎ (প্রকৃত) পরিস্থিতির তুলনায় অনেক বাড়িয়ে বলা৷''
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বসবাস করেন৷ সেদেশের সরকার এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে৷ ফলে তারা কার্যত এক দেশহীন জাতিগোষ্ঠী, যারা মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকরা যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তার অধিকাংশ থেকেই বঞ্চিত৷ বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা অন্তত চার লাখ৷ সু চি অবশ্য মুসলিম প্রধান দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘ফিরে আসলে মিয়ানমারে নিরাপদেই থাকবেন তাঁরা৷''
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেদেশের সেনাবাহিনীর অভিযান প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হলো – সেনা অভিযান ও লড়াইয়ের সাংবিধানিক অধিকার আছে সেনাপ্রবেশের৷ কেননা, বর্তমানে সামরিক বিষয়গুলো দেখাশোনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর৷ তবে প্রতিরক্ষা বিষয়ে সেনাবাহিনীর পূর্ণ ক্ষমতা থাকার বিষয়টি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তন করার জন্যও কাজ করছেন সু চি৷
এআই/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)