মুসলিম নারীদের ফ্যাশন প্রদর্শনী নিয়ে বিতর্ক
৪ এপ্রিল ২০১৯মুসলিম নারীদের ফ্যাশন সচেতন করে তুলতে ফ্রাংকফুর্টের আঙভান্ডটে কুন্সট জাদুঘরে শুরু হচ্ছে বিশেষ এক প্রদর্শনী৷ প্রথমবারের মতো এমন প্রদর্শনীর আয়োজনকে ঘিরে বরাবরের মতোই মুসলিমদের পোশাক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ এটি নারীদের অপমান হিসেবে অভিহিত করে বিরোধীতা করছেন নারীবাদীরা৷ আর আয়োজকরা বলছেন পশ্চিমা বিশ্ব যেই ফ্যাশন দুনিয়াকে উপেক্ষা করে আসছে তা সবার সামনে তুলে ধরাই তাদের উদ্দেশ্য৷
‘কনটেম্পরারি মুসলিম ফ্যাশন এক্সিবিশন' বা সমসাময়িক মুসলিম ফ্যাশন নামের প্রদর্শনীটি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি জাদুঘরে আয়োজন করা হয়েছিল৷ সেখানে হিজাব ও বোরকাকে ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নের জবাব দেয়া এই আয়োজনের উদ্দেশ্য নয় বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা৷ ‘‘প্রদর্শনীর মূল বিষয় ফ্যাশনেবল শালীন পোশাক৷ আমরা দেখানোর চেষ্টা করছি যে মুসলিম নারীদের জন্যও এ ধরণের অনেক কিছু রয়েছে,'' বলেন প্রদর্শনীটির কিউরেটর জিল ডি আলেসান্দ্রো৷
৮০ ধরণের স্টাইলের পোশাক নিয়ে এই প্রদর্শনীটি আয়োজিত হবে৷ যার অনেকগুলোই মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার ডিজাইনারদের কাছ থেকে নেয়া৷ ‘কাফতান', ‘হেডস্কার্ফ'সহ বিভিন্ন রঙিন পোশাকের পাশাপাশি সেখানে বোরকা, নাইকির তৈরি ‘স্পোর্টস হিজাব'-এরও দেখা মিলবে৷
হুমকি
মঙ্গলবার শুরু হতে যাওয়া এই প্রদর্শনী ঘিরে এরইমধ্যে ঘৃণা ছড়ানো মেল পেতে শুরু করেছেন প্রদর্শনীটির জার্মান সমন্বয়করা৷ যার কারণে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ প্রদর্শনীর সময় ব্যাগ ও শরীর তল্লাশির ব্যবস্থা চালু করেছে৷ ‘‘এটি সব দর্শনার্থীর ও কর্মীদের নিরাপত্তার জন্যই,'' জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএকে জানিয়েছেন জাদুঘরের পরিচালক মাটিয়াস ভাগনার৷
অন্যদিকে ‘মাইগ্রেন্টস ফর সেক্যুলারিটি অ্যান্ড সেলফ ডিটারমিনেশন' নামের একটি দল জার্মান নারীবাদী ম্যাগাজিন ‘এমা'তে খোলা চিঠি লিখেছেন৷ তাঁরা এই আয়োজনে হতভম্ব হয়েছেন বলে জানান৷ ‘‘প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফ্যাশনে ধর্মীয় পোশাকের প্রয়োজন তুলে ধরা হচ্ছে৷ এটি দেশ এবং বিদেশের নারী অধিকার কর্মীদের গালে চড় বসানের মতো ঘটনা,'' বলে লিখেছেন তাঁরা৷
ইরানি শরণার্থীদের নিয়ে গঠিত দলটি মনে করিয়ে দিয়ে বলেছে, ‘‘প্রতি বছর ইরানে হাজারও নারী পোশাকের রীতি ভাঙার কারণে শাস্তি ভোগ করছে৷''
প্রতিবছর বিশ্বে মুসলিম নারীরা ফ্যাশনের পেছনে ৪,৪০০ কোটি ডলার খরচ করে, যা ক্রমাগত বেড়ে চলছে বলে জানান জিল আলেসান্দ্রো৷ গত কয়েক বছর ধরে ‘ভোগ অ্যারাবিয়া'র মতো বিভিন্ন ফ্যশন ম্যাগাজিন এই বাজার তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছে৷ এর সাথে তাল মিলিয়ে বড় বড় ব্র্যান্ড আর ডিজাইনাররা পোশাক বের করছেন৷ ২০১৫ সালে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম প্রথমবারের মতো ‘হেডস্কার্ফ' পরিহিত নারীকে তাদের বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে ব্যবহার করে৷ ডলচে অ্যান্ড গাবানা, ইউনিকলোর মতো ব্র্যান্ডগুলো মুসলিম নারীদের জন্য তাদের স্টোরে আলাদা পোশাক রাখছে৷
নতুন ধারণা
প্রদর্শনীর ধারণাটি প্রথম দিয়েছেন অস্ট্রিয়ান একটি জাদুঘরের পরিচালক ম্যাক্স হলিয়েন৷ ২০১৬ সালে সান ফ্রান্সিকোতে এই আয়োজনের যখন পরিকল্পনা করা হয় তখন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিরোধী মনোভাব বাড়ছিল৷ জার্মানিতেও এখন অনেকটা সেই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে৷ তবে প্রদর্শনীর এই আয়োজন তার প্রেক্ষাপটে নয় বলে জানান ডি আলেসান্দ্রো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নামিনি, বরং ফ্যাশন বিশ্বের একটি অসাধারণ অংশকে তুলে ধরছি যা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্ব উপেক্ষিত হয়ে আসছে৷''
কিন্তু তাদের এই যুক্তি মানতে নারাজ নারী অধিকার কর্মীরা৷ ‘‘বিশ্বজুড়ে যেসব মেয়ে আর নারীরা ‘হেডস্কার্ফ' পরতে চায় না কিংবা ছুড়ে ফেলতে চায় এই আয়োজন তাদের গালে চড় বসানোর মতো,'' ভোগ জার্মানিকে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নারী অধিকার সংগঠন ‘ট্যার ডে ফাম'-এর জার্মান পরিচালক ইঙ্গে বেল৷
‘কনটেম্পরারি মুসলিম ফ্যাশনস' এর আয়োজনটি ৫ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে৷