মুসলিম ফ্যাশনের ও উগ্রপন্থা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরের ‘দ্য হিজাবি' নামের দোকানটিতে নারীদের জন্য নিকাব, বোরকা এবং অন্যান্য ইসলামিক পোশাক বিক্রি করা হয়৷ দোকানটিতে মুসলমান নারীদের জন্য নানা ধরনের, নানা ডিজাইনের পোশাক রয়েছে৷ আর শুধু পোশাকই নয়, সেগুলো শরীরের সঙ্গে ঠিকভাবে সেট করার জন্য বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় পিনও বিক্রি করা হয় সেখানে৷
‘দ্য হিজাবির' সঙ্গে সালাফিস্টদের সম্পর্ক নিয়ে জার্মানির কয়েকটি পত্রিকায় সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ গত সপ্তাহে জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি একটি রিপোর্টে দেখায়, কীভাবে ‘দ্য হিজাবি' এবং ভুর্পাটালের আরেকটি দোকান নারীদের গোঁড়া ধর্মীয় জীবনযাপনের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে৷ এভাবে তাদের সালাফিজম এবং এক পর্যায়ে উগ্রবাদী ইসলামের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানানো হয় রিপোর্টে৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে অবশ্য এ সব দোকানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি৷
সালাফিস্টদের জীবনযাপন
বুর্কিংস ইন্সটিটিউটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সালাফিজমকে ইসলামের সবচেয়ে সঠিক এবং সত্য রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা ইসলামের একেবারের শুরুর দিকে চর্চা করা হতো৷
জার্মানিতে গত ১০ থেকে ১৫ বছরে নিকাব এবং বোরকা বিক্রির দোকানগুলো প্রসার লাভ করেছে, জানান সুজানে শ্র্যোটার৷ সুজানে ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিস্ট ফেমিনিজম এবং উগ্রপন্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ৷ তাঁর কথায়, বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমান নারীদের মধ্যে নিকাব পরার প্রবণতা বাড়ছে৷
শ্র্যোটার বলেন, ‘‘ফ্রাংকফুর্টের দোকানটি সালাফিস্ট কনজিউমার কালচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ আর সালাফিজম শুধুমাত্র একটি ধার্মিক বা রাজনৈতিক মুভমেন্ট নয়, এটি একটি লাইফস্টাইলও৷ যারা এই ভাবাদর্শে বিশ্বাসী, তারা তাদের জীবনের সবকিছু সালাফিস্ট কল্পলোকের মতো করে সাজাতে চায়৷''
অনেক সালাফিস্ট নারী অরগ্যানিক বা জৈব পণ্য ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, কেননা মোহাম্মদের জীবনকালে অন্য কিছু ছিল না৷ শ্র্যোটার বলেন, ‘‘সাবান থেকে শুরু করে ফ্রেশ – সবকিছুই জৈব উপায়ে তৈরি হতে হবে৷ এমনকি পুরুষের জন্যও নির্ধারিত পোশাক রয়েছে, যার মধ্যে স্লোগানযুক্ত টি-শার্টও পাওয়া যায়৷''
ফ্যাশন যখন বিপজ্জনক হয়ে ওঠে
বোরকা পরাটা জার্মানির মতো দেশের সংস্কৃতিতে সাধারণ নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ হিসেবে দেখা হতে পারে৷ কারণ এ দেশে মুসলিম পোশাকের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব রয়েছে৷ অন্যদিকে যারা এই পোশাক পরে, তাদের কাছে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য দেখানোটা কে কী ভাবলো, তা নিয়ে মাথা ঘমানোর থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলেন শ্র্যোটার৷
সালাফিস্টরা সাধারণত সারা শরীর এমনকি হাত দু'টোও গ্লাভসে ঢেকে রাখেন৷ তাছাড়া এ ধরনের পোশাক, শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই নয়, দু'বছর বয়সি শিশুদের জন্যও রয়েছে৷ শ্র্যোটার বলেন, ‘‘এ কারণেই দোকানগুলো বিপজ্জনক৷ তারা এমন এক সংস্কৃতির অংশ, যার সদস্যরা দেখাতে চায় যে তারা ইসলামি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী৷ পিতৃতন্ত্র, অগণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা, সহিংসতার প্রতি সর্মথন – এ সবেই তাদের সায় আছে৷ তাদের বিশ্বাস, তারা মুসলিমবিরোধী এক বিশ্বে বসবাস করছে৷ আর সেই চিন্তা থেকেই চরমপন্থার দিকে আকৃষ্ট হয় তারা৷''
উগ্রপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্ক
‘দ্য হিজাবি'-র মালিক লতিফা রাউলির বাবা আব্দেললাতিফ একজন সুপরিচিত সালাফিস্ট৷ রাউলি নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘দোয়া এফএফএম' নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যারা কিনা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কোরআন অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, তিনি পিয়ের ফোগেল নামের এক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ হিসিবেও পরিচিত ছিলেন, যিনি প্রকাশ্যে শরীয়া আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন৷
২০১৪ সালে রাউলি ফ্রাংকফুর্টের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে ‘মক্কা' নামের একটি দোকান দিয়েছিলেন, যেখানে মক্কার পানি বিক্রি হয় বলে জানানো হতো৷ কিন্তু প্রতিবেশীদের অভিযোগের মুখে দোকানটি বন্ধ করে দিতে হয়৷ শ্র্যোটারের কথায়, ‘‘তারা সেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল, কেননা এটা নিশ্চিত হয়েছিল যে মক্কার পানি বলে যা বিক্রি করা হতো, তা আসলে ফ্রাংকফুর্ট শহরের ট্যাপ বা কলের পানি৷''
কিন্তু রাউলির সঙ্গে উগ্রপন্থিদের যোগাযোগ আছে – জার্মান সরকারের হাতে এমন প্রমাণ থাকলেও, তা তাকে অন্যান্য কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা বা জীবনধারণের জন্য রোজগার করা থেকে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট নয়৷ নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া সংগঠনের সঙ্গে পূর্ব যোগাযোগের অর্থ এই নয় যে, আইনে এখন রাউলকে ব্যবসা করা থেকে বিরত রাখতে পারবে৷
‘‘বেআইনি না হলে জার্মানিতে প্রত্যেকেই নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন'', জানান শ্র্যোটার৷
আপনার কি এ বিষয়ে কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের ঘরে৷