1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মৃত ব্যক্তিরা জঙ্গি ছিলেন না'

১২ জানুয়ারি ২০১৮

রাখাইনের ইনদিন গ্রাম থেকে পালিয়ে বাঁচা রোহিঙ্গারা বলেছেন, যে ১০ ব্যক্তিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, তাঁরা জঙ্গি ছিলেন না৷ তাঁদেরকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2qlD8
Bangladesch Rohingya Flüchtlinge mit Smartphone
ছবি: picture.alliance/AP Photo/A.M. Ahad

বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাঁরা এ তথ্য দেন৷

টেকনাফের বালুখালি ক্যাম্পে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ইনদিন গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা ৩০ বছর বয়সি যুবতী মারজান এএফপিকে বলেন, স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের একদল লোক সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাঁদের গ্রামে আক্রমণ করে

‘‘তারা ১০ থেকে ১৫ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে নিয়ে বৈঠক করার কথা বলে নিয়ে যায়৷  পরে তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷'' বলছিলেন মারজান৷

 

তাঁরা ছিলেন সাধারণ রোহিঙ্গা

মারজান জানান, তাঁর স্বামীও সেই দলে ছিলেন৷ পরে অন্যদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে৷

‘‘ওঁরা আমাকে বললেন যে, আমার স্বামীর লাশ অন্যদের সঙ্গে একটি গণকবরে পাওয়া গেছে৷''

হোসেইন আহাম্মাদ নামের ইনদিন গ্রামের আরেক যুবক এএফপিকে জানান যে, যাঁদের হত্যা করা হয়েছে তাঁরা সবাই সাধারণ রোহিঙ্গা গ্রামবাসী ছিলেন৷ ‘‘তাঁরা এমনকি কোনো আন্দোলনেও কখনো যাননি৷'' বলেন তিনি৷

 

আন্তর্জাতিক তদন্ত

গেল বুধবারের আগ পর্যন্ত মিয়ানমার সেনারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলো৷

বুধবার দেশটির সেনাপ্রধানের অফিসের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে প্রথম ইনদিন গ্রামের গণকবরের সত্যতা স্বীকার করা হয় এবং বলা হয় যে, কয়েকজন গ্রামবাসী ও সেনাসদস্য মিলে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে৷  তবে নিহতদের ‘বাঙালি জঙ্গি' বলে আখ্যায়িত করা হয়৷

মোবাইলে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভিডিও

এদিকে, এই ফেসবুক পোস্টের পর ব্যাপক সাড়া পড়েছে বিশ্বজুড়ে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হত্যাযজ্ঞকে ‘আইসবার্গের উপরিভাগ' বলে অভিহিত করেছে৷ বলেছে, এমন অসংখ্য গণহত্যা, ধর্ষণ ও গ্রাম জ্বালিয়ে দেবার ঘটনার তথ্য প্রমাণ আছে তাদের কাছে৷ তাঁরা এসব ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের ডাক দিয়েছে৷

 

ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

রোহিঙ্গাদের হত্যার বিষয়টি বড় আকারে তদন্তের দাবি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও৷ মুসলিম দেশগুলোও বলছে যে, বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার৷

মিয়ানমার সেনাদের স্বীকারোক্তিকে একটি বড় পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েল৷

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে এক ফোরামে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই ঘটনার আরো স্বচ্ছ তদন্ত আশা করব৷ একইসঙ্গে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা দরকার৷ কারণ, এটি শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের দায় নয়, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ৷ ''

রোহিঙ্গারা ফিরতে চান, তবে...

রোহিঙ্গা ফেরত আনতে জাপানের অর্থ

এদিকে, অং সান সূকির সঙ্গে দেখা করে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী তারো কোনো রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত আনার তাগিদ দিয়েছেন৷ শুক্রবার নেপিদোতে সু চি'র সঙ্গে সাক্ষাতের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হবে৷

রাখাইনে শান্তি ফেরত আনা এবং বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া লাখো শরণার্থীকে ফেরত এনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমারকে ১৮০ কোটি টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান৷

সু চি এই অর্থ সহায়তা দেবার অঙ্গিকার করবার জন্য জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান৷

 

রয়টার্সের সাংবাদিকদের সাজা

এদিকে, ঔপনিবেশিক যুগের ‘অফিসিয়াল সিক্রেসি' আইনে গ্রেফতার করা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ের ১৪ বছরের জেল হয়ে যেতে পারে৷ আদালত তাঁদের জামিন আবেদন এখনো মঞ্জুর করেননি৷ গত ১২ই ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের কাছের একটি এলাকা থেকে তাঁদের  গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশের আমন্ত্রণেই সেখানে গিয়েছিলেন তাঁরা৷ তাঁরা দু'জন রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন৷

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন' বলে আখ্যা দিয়েছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি, তারা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে৷

জেডএ/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স)