মেধাবী মুসলিম পেশাজীবীরা ‘প্রতিকূল' ফ্রান্স ছাড়ছেন
১৯ মে ২০২৪‘‘ফ্রান্সের চেয়ে এখানে অনেক ভালো লাগছে,'' ৩২ বছর বয়সি আদম ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন৷ তিনি উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত৷ ‘‘এখানে সবাই সমান৷ আপনার বস ভারতীয়, আরব কিংবা একজন ফরাসিও হতে পারেন৷ আমার ধর্ম এখানে বেশি গ্রহণযোগ্য৷''
গতমাসে প্রকাশিত ‘ফ্রান্স, ইউ লাভ ইট বাট ইউ লিভ ইট' নামে একটি গবেষণা বলছে, উচ্চশিক্ষিত মুসলিম ফরাসি নাগরিকেরা ফ্রান্স ছেড়ে দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক ও মন্ট্রিলের মতো শহরগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে৷ তবে সংখ্যাটি কত সেটি জানা কঠিন বলে গবেষকেরা বলছেন৷ তারা অনলাইনে একটি জরিপের প্রশ্নমালা প্রকাশ করেছিলেন৷ প্রায় এক হাজার জন এতে অংশ নিয়েছে৷ এর মধ্যে ৭১ শতাংশ বলেছেন, তারা বর্ণবাদ ও বৈষম্যের জন্য ফ্রান্স ছেড়েছেন৷
আদম এএফপিকে বলেন, ফ্রান্সে ‘‘আপনি নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যালঘু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসলে আপনাকে দ্বিগুন পরিশ্রম করতে হয়৷'' তবে ফ্রান্সে লেখাপড়া করতে পারায় আদম ফ্রান্সের প্রতি ‘দারুণ কৃতজ্ঞতা' প্রকাশ করেছেন৷ বন্ধু, পরিবার, ফ্রান্সের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবন মিস করার কথাও জানিয়েছেন৷ তারপরও ‘ইসলামোফোবিয়া' ও ‘সিস্টেম্যাটিক রেসিজম' (যেমন কারণ ছাড়াই পুলিশ আপনাকে দাঁড় করিয়ে দেয়) থেকে মুক্তি পাওয়ায় আদম খুশি বলে জানান৷
অনেকদিন ধরেই ফ্রান্সে অভিবাসীরা থাকছেন৷ সাবেক উপনিবেশ উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার মানুষজনও সেখানে বাস করেন৷ কিন্তু মুসলিম অভিবাসীদের উত্তরসূরিরা বলছেন, ফ্রান্স মুসলমানদের জন্য ক্রমে প্রতিকূল হয়ে উঠছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে ফ্রান্সে ইসলামিক স্টেটের হামলার পর৷ ঐ হামলায় ১৩০ জন মারা যান৷
তারা বলছেন, ফ্রান্সে স্কুলে সব ধর্মের প্রতীকপ্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োগ করা হয়৷
মরক্কান বংশোদ্ভূত ৩৩ বছয় বয়সি ফরাসি মুসলিম এএফপিকে বলেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো ‘শান্তিপূর্ণ সমাজে' চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন৷ তিনি বলেন, তিনি ফ্রান্সের খাবার ও বেকারির সামনে লাইনে দাঁড়ানো মিস করবেন৷ কিন্তু ‘‘ফ্রান্সে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে,'' বলেন তিনি৷ বিজনেস স্কুল থেকে পাস করা ঐ ব্যক্তি মাসে ১০ হাজার ইউরোর বেশি বেতন পান৷
তিনি জানান, প্যারিসে একটি ফ্ল্যাটে দুই বছর থাকার পরও তাকে এখনও প্রশ্ন করা হয়, ফ্ল্যাটের ভেতর তিনি কী করেন৷ ‘‘এটা খুবই অপমানজনক,'' বলেন তিনি৷ ‘‘আমার জন্য নিয়মিতভাবে এমন অপমান আরও বেশি হতাশাজনক, কারণ, আমি ভালো বেতন পাওয়ায় অনেক বেশি কর দিয়ে থাকি,'' বলেন তিনি৷
ফ্রান্সের ‘দ্য অবজারভেটরি ফর ইনইকুয়ালিটিস' বলছে, দেশটিতে বর্ণবাদ কমছে৷ তবে এখনও ফরাসি নামের একজন চাকরিপ্রার্থীর উত্তর আফ্রিকার নামের একজন চাকরিপ্রার্থীর চেয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পাওয়ার সুযোগ ৫০ শতাংশ বেশি৷
৩০ বছর বয়সি আরেক ফ্রাঙ্কো-আলজেরিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার এএফপিকে বলেছেন, তিনি জুনে চাকরি করতে ফ্রান্স ছাড়ছেন, কারণ ফ্রান্স ‘জটিল' হয়ে উঠেছে৷ তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সের রাজনীতিও একটু ডানে সরে এসেছে৷ ‘‘মুসলমানেরা এখান স্পষ্টতই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক,'' বলেন তিনি৷
জেডএইচ/আরকেসি (এএফপি)