1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেশিনে কৃত্রিম ত্বক তৈরি করছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা

১৯ ডিসেম্বর ২০১১

চামড়া বা ত্বক, যা গোটা মানব দেহকে আবৃত করে রেখেছে, সেই ত্বককে এবার কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে তৈরি করছেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা৷ ভবিষ্যতে ত্বকের ক্যান্সার রোধে তাদের এই প্রচেষ্টা হয়তো যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে৷

https://p.dw.com/p/13VKu
টিস্যুছবি: Carsten Werner, CRTD

মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোনটি জানেন? সেটি হচ্ছে ত্বক বা চামড়া যা আমাদের গোটা দেহকে একটি খামের মধ্যে ভরে রেখেছে৷ একটি মানব ত্বকের আকার দুই বর্গমিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং গোটা দেহের শতকরা ১৬ ভাগ ওজন হচ্ছে এই চামড়া বা ত্বকের৷ অত্যন্ত পাতলা হলেও এই ত্বক কিন্তু কয়েকটি স্তরে বিভক্ত৷ মানব শরীরের এক বর্গইঞ্চি ত্বকে রয়েছে সাড়ে ছয়শ ঘামের গ্রন্থি, ২০টি উপশিরা, ৬০ হাজার মেলানোসাইটস এবং এক হাজারেরও বেশি স্নায়ুতন্তু৷ এছাড়াও এই ত্বকের মধ্যে রয়েছে চুল, ঘ্রাণের গ্রন্থি, চর্বির টিস্যু, রোগ প্রতিরোধ কোষ, তাপ নির্ণায়ক কোষ সহ আরও কিছু৷ এইসবকিছুর মাধ্যমে ত্বক মানবদেহকে নানা ধরণের রোগ ব্যধি থেকে আগলে রাখে৷

জার্মানির প্রখ্যাত ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউটের টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে চামড়া তৈরি করছেন৷ এই ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য বলতে গেলে ঈর্ষণীয়৷ তারা ইতিমধ্যে কৃত্রিমভাবে মানব ত্বক তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং গবেষণাগারে মেশিনের মাধ্যমে সেই কৃত্রিম ত্বক তৈরি করা হচ্ছে৷ ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউটের টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর হাইকে ওয়ালেসের নেতৃত্বে এই টিস্যু ফ্যাক্টরির কাজ চলছে৷ সেখানে শুধু কৃত্রিম ত্বক তৈরির পাশাপাশি একে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সেটা নিয়ে গবেষণা চলছে৷ এখন পর্যন্ত তারা দুই স্তর বিশিষ্ট কৃত্রিম ত্বক তৈরি করতে পেরেছেন৷ তবে ভবিষ্যতে হয়তো পুরোপুরি মানব ত্বকের হুবহু ত্বকই তারা তৈরি করতে পারবেন৷ বিষয়টি সত্যিই দারুণ রোমাঞ্চকর বিজ্ঞানী হাইকে ওয়ালেসের কাছে৷ যেমনটি তিনি বললেন, ‘‘ধরুণ আমার শরীরের কোন অংশ পুড়ে গেলো কিংবা তার ক্ষতি হলো, তাহলে আমাকে হয়তো কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে আমার নতুন ত্বকের জন্য৷ আমার কাছে এটা কোন খারাপ কিছু নয় বরং দারুণ একটি সম্ভাবনা৷''

Future Now Projekt Haut Bild 17 Berliner Leber-Bioreaktor
কৃত্রিমভাবে ত্বক তৈরি করছেন জার্মান বিজ্ঞানীরাছবি: Katrin Zeilinger, BCRT

ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা কতই না চেষ্টা করি৷ নানা ধরণের ক্রিম এবং লোশন ব্যবহার করে ত্বকে সজীব করে রাখার চেষ্টা করি৷ কিন্তু এইসব ক্রিমের সবগুলোই কি মানব ত্বকের জন্য সমানভাবে উপকারী? এইসব ক্রিম তৈরির সময় পরীক্ষাগারে এগুলো প্রয়োগ করা হয় নানা প্রাণীর চামড়ার ওপর৷ কিন্তু তার ফলে তো আর মানুষের ত্বকে প্রয়োগের ফলাফল পুরোপুরি বোঝা যায় না, জানালেন বিজ্ঞানী হাইকে ওয়ালেস৷ তার ভাষায়, ‘‘ এখন পর্যন্ত এইসব ক্রিম প্রয়োগ করা হয় পশুর চামড়ার ওপর৷ এর অর্থ পশুগুলোকে এই পরীক্ষার জন্য কষ্ট সইতে হয়৷ কিন্তু এত পরীক্ষার পরও অনেক ক্রিম ব্যবহারের কারণে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়৷ কারণ এই ক্রিম পরীক্ষা করা হয়েছে পশুর ওপর৷ আর পশুর ত্বক আর মানুষের ত্বক একইভাবে কাজ করে না৷''

নতুন কৃত্রিম মানব ত্বক সেই বাধা দূর করতে যাচ্ছে৷ ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউটের গবেষণাগারে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম মানব ত্বক৷ ফলে সেই ত্বকে নতুন ক্রিমগুলো প্রয়োগ করা হলে তার ফলাফল হবে জীবন্ত মানুষের ত্বকের মতই৷ তবে এইজন্য হুবহু মানব ত্বক তৈরি পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে৷

কেবল বাজারের ক্রিম কিংবা লোশন নয় এই নতুন কৃত্রিম মানব ত্বকের আরও একটি বড় উপকারিতা হচ্ছে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা৷ প্রতি বছর বহু মানুষ এই ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন এই ক্যান্সারের প্রতিষেধক তৈরি করতে৷ ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউটে যে কৃত্রিম মানব ত্বক তৈরি হচ্ছে তাতে ত্বকের ক্যান্সারের নানা দিক নিয়েও পরীক্ষা নিরিক্ষা চালিয়ে দেখা হচ্ছে৷ প্রফেসর হাইকে ওয়ালেস এখন স্বপ্ন দেখছেন, কৃত্রিম ত্বকের ওপর এবার কৃত্রিম টিউমার তৈরি করার যা হয়তো ভবিষ্যতে কৃত্রিম জৈবিক অঙ্গ প্রতঙ্গ তৈরির পথ খুলে দেবে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান