মেসির কারণে ইসরায়েল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ বাতিল!
৬ জুন ২০১৮মঙ্গলবার আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসের ইসরায়েলি দূতাবাস এ খবর নিশ্চিত করলেও বার্সেলোনা তারকা মেসির শঙ্কার ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি তারা৷
শনিবার দুইদেশের ওই ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল৷ তবে আগে থেকেই ফিলিস্তিনের ফুটবল কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের বিপক্ষে এই ম্যাচে মেসিকে অংশ না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল৷
ইসরায়েলি দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,‘‘মেসির জীবনের ওপর ‘হুমকি' ও তার ওপর ‘ক্রোধ' উদগীরণের আশঙ্কা থেকে ইসরায়েলি দূতাবাস গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছে, ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার ম্যাচটি বাতিল করা হলো৷''
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বুধবার ম্যাচ বাতিলের ঘটনাকে ‘ঘৃণার কাছে নতজানু' হওয়া হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ‘‘আর্জেন্টিনার ফুটবলের মহানুভবতা ইসরায়েল ঘৃণাকারীদের পরাহত করতে পারেনি, যা লজ্জার৷''
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমগুলো ম্যাচটি বাতিল হওয়ার আগেই ক্ষোভ জানিয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে৷ সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটি ঠিকই করা হয়েছিল বাতিল বা পণ্ড হওয়ার জন্য, যাতে বিশ্বকাপের আগে মেসি বা আর্জেন্টাইন দলের বাকি খেলোয়াড়রা চূড়ান্ত প্রস্তুতির সুযোগ না পেয়ে হতাশ হন৷
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্হে ফাউরি ওয়াশিংটনে লাতিন দেশগুলোর সংগঠন অরগানাইজেশন অফ অ্যামেরিকার এক বৈঠকে যোগ দিতে অ্যামেরিকার ওয়াশিংটনে গিয়েছেন৷
খেলা বাতিলের বিষয়ে ইসরায়েলি দূতাবাস নিশ্চিত হওয়ার আগেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানি, আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা এই ম্যাচটি খেলতে অনাগ্রহী৷''
গত সপ্তাহে আর্জেন্টিনার কোচ হোর্হে সাম্পাওলিও জেরুসালেমে প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য যেতে অনাগ্রহ দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘‘খেলোয়াড়ি দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বরং এই বার্সেলোনার মাঠেই খেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী৷ কেননা, এর জন্য আমাদের ইসরায়েল যেতে হবে এবং তারপর সেখান থেকে রাশিয়া৷''
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছে বার্সেলোনার মাঠে৷
ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান জিবরিল রাজব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মেসিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচ না খেলতে অনুরোধ করে তিনি আর্জেন্টিনার সরকারের কাছে চিঠি লিখেছেন৷
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এই ম্যাচটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার৷ ইসরায়েলের সরকার জেরুসালেমে ম্যাচটি আয়োজন করে সেখানকার রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷''
মে মাসে জেরুসালেমে অ্যামেরিকার দূতাবাস স্থানান্তরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাজায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের গুলি ও আক্রমণে শতাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটে৷ ফিলিস্তিনের হামাস ওই ঘটনার পর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালালে বিমান হামলা করে পালটা জবাব দেয় ইসরায়েল৷
এ প্রেক্ষাপটে আর্জেন্টিনারইসরায়েলে খেলতে যাওয়ার বিষয়ে নানা মহল থেকে আপত্তি আসছিল৷ সমালোচকরা বলছিলেন, বিশ্বকাপের আগে জেরুসালেমে গিয়ে ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনার অংশ নেওয়া মানে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী করার ঘোষণাতেও ইন্ধন দেওয়া৷
রাজব সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন,‘‘মেসি শান্তি ও ভালোবাসার প্রতীক৷ আমরা তাকে অনুরোধ করেছি এ অপরাধমূলক কাজে না জড়াতে৷''
‘‘মেসির লাখ লাখ শুভানুধ্যায়ী আরবের মুসলিম দেশগুলোতে রয়েছে... খেলা হলে মেসির ছবি অঙ্কিত টি-শার্ট পোড়াতে আমরা তাদেরকে অনুরোধ করবো৷''
১৬ জুন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হবে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার৷ গ্রুপ পর্বে তাদের বাকি দুই প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া৷
এইচআই/এসিবি (এইপিই)