‘মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানো হবে ভুল সিদ্ধান্ত'
১৩ অক্টোবর ২০১৪সোমবার এক বিবৃতিতে এইচআরডাব্লিউ-র পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ বিয়ের বয়স কমাতে আইন সংশোধন করলে তা হবে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনার অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷'
এইচআরডাব্লিউ-র নারী অধিকার বিষয়ক পরিচালক লিজেল গেনহলজ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের বয়সের আইনসিদ্ধ সীমা কমিয়ে ১৬ বছর করা হলে, তা হবে একটি ভুল পদক্ষেপ৷''
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান আইনে বাংলাদেশে মেয়েরা বিয়ের যোগ্য হয় ১৮ বছর বয়সে, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ঐ বয়সেই শৈশব শেষ হয়৷''
সম্প্রতি লন্ডনে কন্যা-শিশু সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনার বিষয়ে নিজের অঙ্গীকারের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তাই বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর অর্থ দাঁড়াবে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থেকে সরে আসা৷ বাল্যবিয়ের হারের দিক দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশ রয়েছে সামনের কাতারে, যা মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধিরও অন্যতম কারণ৷''
‘বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪' পাস করার আগে আরো কিছু বিষয় বিবেচনার সুপারিশ করেছে এইচআরডাব্লিউ৷ এতে বলা হয়েছে, খসড়া আইনে বর-কনে, বিয়ে পরিচালনাকারী ও অভিভাবকের জন্য একই শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে৷ এর বদলে শাস্তির বিধি এমন হওয়া উচিত, যাতে এর পেছনের মূল ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় এনে বাল্য বিয়ে রোধ করা যায়৷
বিয়ের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করা, দাম্পত্য ধর্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া, ভিকটিমদের আইনি সুরক্ষা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াআরো সহজ করার বিষয়গুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি৷
নারীর বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক এবং নারী সংগঠন৷ সম্প্রতি ‘স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট' তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমানো হলে তা একদিকে যেমন সরকারের বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ, অন্যদিকে তেমনি প্রচলিত আইন ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে৷''
বিবৃতিতে বলা হয়, ছেলে-মেয়ে উভয়কে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদের জীবন বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করার দিকে সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হবে, যাতে তারা জাতীয় উন্নয়নে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারে৷ বিয়ের বয়স কমালে সেটা দীর্ঘ মেয়াদে জাতীয় উন্নয়নের ধারাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷ বয়স কমিয়ে বাল্যবিয়ের সংখ্যা হ্রাসের ‘শর্টকাট' পথ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷
অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নারী সেল বলেছে, মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর চিন্তা অবৈজ্ঞানিক৷ সরকারের চিন্তা বাস্তবায়িত হলে বিষয়টি নারীর শরীর ও স্বাধীনতার জন্য আত্মঘাতী হবে৷ এ ধরনের চিন্তা হচ্ছে সরকারের মৌলবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন বলে মনে করেন তারা৷ সরকার এই চিন্তা থেকে সরে না আসলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তাঁরা৷
সম্প্রতি বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে নতুন আইন করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা৷ তবে ওই প্রস্তাব অনুমোদনের সময় সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করা যায় কিনা – তা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়৷