ভারত-জার্মানি সম্পর্ক
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে ভারত-জার্মানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহু-মাত্রিক সহযোগিতা আরো গতিশীল হবে – এই আশা ব্যক্ত করলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ সফর শেষে জানালেন, মোদী সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারের যে বিপুল কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে, তাতে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশাই যে বেড়েছে, তাই নয়৷ বেড়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মহলেরও৷ এই নতুন কর্মযজ্ঞে জার্মানির যোগদানের বিরাট সুযোগ আছে৷ আর জার্মানি সেটা কাজে লাগাতে আগ্রহী, বিশেষ করে অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎশক্তি, নদীর জল দূষণমুক্ত করা, স্মার্ট সিটি প্রকল্প, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণদান ইত্যাদি৷ তবে এছাড়াও উচ্চ-প্রযুক্তি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রেও ভারতের পাশে আছে জার্মানি, জানান স্টাইনমায়ার৷ তিনি ঘুরে দেখেন দিল্লির পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ৷ কারণ, এই নির্মাণকাজে জার্মানির টানেল ড্রিলিং মেসিন ব্যবহার করা হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয় মোদী মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে, যার মধ্যে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, শহরাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইড়ু, মানব সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্মৃতি ইরাণি৷ সার্বিকভাবে আলোচনা হয়েছে খুবই গঠনমূলক, বলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টাইনমায়ার৷ তাঁর সফরসঙ্গি হয়ে জার্মান সাংসদ এবং জার্মানির শিল্প ও বাণিজ্য মহলের যেসব শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা এসেছিলেন, তাঁরা আলোচনা করেন ভারতীয় শিল্প ও বণিকসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে৷
পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত-জার্মান সম্পর্কটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকেনি কখনো৷ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়েছে এই সহযোগিতার শাখা-প্রশাখা৷ ‘ডয়েচ ১০০০ শুলে', অর্থাৎ ভারতের ১০০০টি স্কুলে তৃতীয় ভাষা হিসেবে জার্মান ভাষা শেখানোর কর্মসূচি হাতে নেয়া হয় স্টাইনমায়ারের সফরকালে৷ আর তারই অঙ্গ হিসেবে জার্মান শেখানো হয় – দিল্লির এমন একটি সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে মিলিত হন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ নতুন দিল্লিতে অবস্থিত জার্মান সংস্কৃতিক কেন্দ্র মাক্স ম্যুলার ভবনের (গ্যোটে ইন্সটিটিউট) প্রজেক্ট হেড জানান, জার্মান ভাষা হলো প্রথম বিদেশি ভাষা যেটা ভারতীয় স্কুলে তৃতীয় ভাষা হিসেবে পড়ানো হচ্ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পড়ুয়াদের কাছে ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলা, হবি ইত্যাদি নিয়ে জানতে চান এবং পড়ুয়ারা জার্মান ভাষায় তার উত্তর দেয়৷
ভারতের সামাজিক প্রকল্পেও যে জার্মানি সমান আগ্রহী, তার নিদর্শন হিসেবে স্টাইনমায়ার দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় দেখতে যান পুরাতাত্তিক ৬৪-খাম্বা, যেটা আজ ভগ্নদশায়৷ আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচারের উদ্যোগে এর সংস্কার কাজে জার্মান অর্থ সাহায্যের আশ্বাসও দেন তিনি৷
ওদিকে একটি ভারতীয় সংবাদপত্রের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে রাখা হয় অস্বস্তিকর এক প্রশ্ন৷ ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান করতে যাবার পথে প্রধানমন্ত্রী মোদী যাত্রা বিরতি করেন বার্লিনে৷ সেই প্রথম জার্মানির মাটিতে পা রাখলেন মোদী৷ বাধ্যবাধকতা না থাকলেও ভারত চেয়েছিল চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে মোদীর একটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ হোক৷ তা হয়নি৷ এটাকে তিনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? উত্তরে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু এটুকুই বলেন যে, ঐ সময় চ্যান্সেলার রিওতে ছিলেন বিশ্বকাপ ফুটবলে জার্মান দলের মনোবল বাড়াতে৷ তাই এটা কোনো মতেই মোদীকে অবজ্ঞা করা নয়৷ তবে ১৭ই জুলাই ম্যার্কেলের ৬০তম জন্মদিনে মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে অনেকক্ষণ কথা বলেন জার্মান চ্যান্সেলর, জানান স্টাইনমায়ার৷