মোদীর আগমনের প্রতিরোধ বনাম সরকারি অবস্থান
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০প্রতিবাদীরা বলছেন,‘মোদী একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি৷ তার সরকারের মদতেই ভারতে মুসলিম নিপীড়ন চলছে৷ তাকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হলে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হবে৷ তাই সরকারের উচিত হবে তাকে এই অনুষ্ঠানে না আনা৷'
সরকারের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে মোদীকে দিল্লিতে দাঙ্গা শুরুর অনেক আগেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ আর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যে অবদান সেই বিবেচনাই ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ জানা গেছে দিল্লির সাম্প্রতিক মুসলিম হত্যা এবং নিপীড়নের ঘটনায় সরকার মোদীকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে থাকলেও মোদীকে অনুষ্ঠানে আনার সব প্রক্রিয়াই চলছে৷
দিল্লিতে গত পাঁচদিনের হামলায় এপর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন৷ টার্গেট করে মুসলমানদের ওপর হামলা হচ্ছে৷ আর এই হামলা হচ্ছে মোদী সরকার ও তার দল বিজেপির মদতে৷ এই হামলা ও নিপীড়ন বাংলাদেশেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে৷ আর যার প্রকাশ ঘটছে মোদীকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে না আনার দাবির মধ্য দিয়ে৷
এরইমধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন প্রগতিশীল দল সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শুরু করেছে৷ ছাত্র সংগঠনগুলোও মাঠে নেমেছে৷ বিশেষ করে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর মোদীর ঢাকা সফর প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন৷ ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ বিএনপি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে৷ তবে তারা এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি৷
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মোদীকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে না আনার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন সরকার যদি শেষ পর্যন্ত মোদীকে অতিথি করে আনে তাহলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷ তিনি বলেন,‘‘শেখ মুজিব একজন অসাম্প্রদায়িক নেতা ছিলেন৷ তার জন্মশতবার্ষিকীতে নরেন্দ্র মোদীর মত একজন ধর্মান্ধ, চরম সাম্প্রদায়িক এবং উগ্রবাদী ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মোদীকে আমন্ত্রণ মানে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা তার সম্মানহানি করা৷
আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মনে করছেন মোদী আসলে ভারতের সাথে সম্পর্ক আরো ভালো হবে তাতে তিনি হয়তো সাধারণ মানুষের আহ্বানকে আমলে নেবেন না৷''
বিভিন্ন বাম সংগঠন এবং বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য মোদীর ঢাকা আসার আগেই কর্মসূচি দিয়েছে৷ গণসহংতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি জানান, আগামীকাল তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবেন৷ আর ১৫ এবং ১৬ মার্চেও তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি আছে৷ জোনায়েদ সাকি বলেন,‘‘মোদী পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছাড়াচ্ছেন৷ এনআরসি আর সিএএর মাধ্যমে ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র বানাচ্ছেন৷ এখন শুরু হয়েছে মুসলিম নিধন৷ সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়৷ বাংলাদেশও মোদী সরকারে কারণে ক্ষতির শিকার৷''
এদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব জানান, তারা সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন৷ সবাই মিলে মোদীর বাংলাদেশে আসার বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবেন৷ তবে বিএনপি দলীয়ভাবে কী অবস্থান নেবে না এখনো নিশ্চিত না হলেও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন,‘‘শেখ মুজিবুর রহমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের নেতা৷ আর নরেন্দ্র মোদী ফ্যাসিবাদের নেতা৷ তাই শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে নরেন্দ্র মেদীকে আমন্ত্রণ মেনে নেয়া যায়না৷ দেশের মানুষ এটা গ্রহণ করবেনা৷''
বিভিন্ন গ্রগতিশীল ছাত্র সংগঠননও মোদীর বাংলাদেশে আসার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ বুধবার তারা শাহবাগে কর্মসূচি পালন করেছে৷ আগামীকাল থেকে তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে৷ ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন,‘‘আমরা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি নরেন্দ্র মোদীকে যেন না আনা হয়৷ প্রয়োজনে তার আমনকে প্রতিহত করতে আমরা কর্মসূচি দেব৷''
তবে সরকার মোদীকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আনার ব্যাপারে অনঢ় রয়েছে৷ মোদীও সম্মতি জানিয়ে তার প্রবল আগ্রহের কথা জানিয়েছেন৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বলেছেন,‘‘ভারতের এই পরিস্থিতির অনেক আগেই নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ ভারতে যা কিছু হচ্ছে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ সেই বিষয়ে আমাদের নক গলানো উচিত হবে না৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের ভূমিকা অপরিসীম৷ তারা আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে৷ তাই ভারতকে বাদ দেয়ার চিন্তা অকল্পনীয়৷''
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রে কথা বলে জানাগেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা আসা চূড়ান্ত৷ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটা বাতিলের কোনো চিন্তা বা সুযোগ নেই৷ তবে যদি শেষ মুহূর্তে মোদী কোনো জরুরি কারণে কর্মসূচি বাতিল করেন সেটা আলাদা কথা৷