বিচারপতি নিয়োগে পরিবর্তন
১৪ আগস্ট ২০১৪তবে এ নিয়ে বিচার বিভাগ কার্যত বিভাজিত৷ সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগে জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন বিলটি পাশ হবার পর বর্তমানের কলেজিয়াম সিস্টেমের অবসান হলো ভারতে৷ বিলটি পাশ হয় সময়াভাবে ধ্বনিভোটে৷ পক্ষে পড়ে ৩৬৭ এবং বিপক্ষে শূন্য৷ এবার সরকার ৯৯তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করবে যাতে এই কমিশনকে সাংবিধানিক ক্ষমতা ও মর্যাদা দেয়া যায়৷
সব দলকে সঙ্গে নিয়ে এই ঐতিহাসিক বিল পাশ করিয়ে মোদী সরকার সংসদে এই প্রথম বড় রকম সাফল্য পেল৷ এই ব্যবস্থায় বিচারপতি নিয়োগে আসবে আরো স্বচ্ছতা৷ তবে বিল পাশ হওয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মর্যাদা কোনোমতেই ক্ষুন্ন হতে দেয়া হবে না৷ এর পাশাপাশি এটাও দেখা দরকার যে, সংসদ যেহেতু সংবিধানের সর্বোচ্চ ধারক ও বাহক, তাই সংসদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখাও খুব জরুরি, বলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ৷ সরকার এই বিল পাশে তাড়াহুড়ো করেছে – এই অভিযোগ খণ্ডন করেন তিনি৷
তাঁর মতে, বিচার বিভাগের সংস্কারের লক্ষ্যে এটা এক বড় পদক্ষেপ যা নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ব্যাপক আলোচনা ও পরামর্শ চলে বিশিষ্ট আইনজীবী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে৷ জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠিত হবে ছয়জন সদস্য নিয়ে৷ এঁদের মধ্যে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অন্য দু'জন বিচারপতি, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী এবং দু'জন বিশিষ্ট ব্যক্তি৷ প্রত্যেক বিচারপতি নিয়োগে কমিশনের ছয় জন সদস্যের মধ্যে অন্তত পাঁচজনকে একমত হতে হবে৷ প্রসঙ্গত, কলেজিয়াম সিস্টেমে সব সদস্যই হতেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি৷
মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী বিল পেশ করায় গোড়ার দিকে কংগ্রেস বেঁকে বসেছিল৷ বলেছিল বিলে কিছু ফাঁক-ফোঁকর আছে, যা সংশোধন করতে হবে৷ কিন্তু মোদী সরকার অতি কৌশলে যখন অন্য সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়, কংগ্রেসের তখন একঘরে অবস্থা৷ কোনো উপায় না দেখে কংগ্রেস ঐ বিলে সায় দিতে বাধ্য হয়৷
কলেজিয়াম প্রথার পরিবর্তনের কারণ
বিচার বিভাগের বর্তমান ব্যবস্থায় বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে৷ বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু সম্প্রতি সোচ্চার হন৷ অন্যান্য কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও তাঁকে সমর্থন করেন৷ তাই তাঁরা চান কলেজিয়াম পদ্ধতির পরিবর্তন যাতে আরও যোগ্য ও সৎ বিচারপতিপদে আসীন হন৷ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে.টি টমাস সংশয় প্রকাশ করেন যে, জাতীয় নিয়োগ কমিশনের নিযুক্ত বিচারপতি আরো যোগ্য ও সৎ হবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে কি?
উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত সরকারের কাজকর্মে সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়৷ এবার বোধকরি সরকার সেটা বিপরীতমুখী করতে চান৷ যেমন কারোর নিয়োগে দু'জন সদস্য আপত্তি করলে কমিশনকে তা মেনে নিতে হবে৷ কিন্তু আইনমন্ত্রী যদি একা আপত্তি করেন, তাহলে তা গ্রাহ্য হবে না৷ জাতীয় কমিশন অনুমোদন করলে তা যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য৷ কিন্তু রাষ্ট্রপতি যদি কোনো নাম পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠান, তাহলে কমিশনের সব সদস্যের সম্মতি লাগবে৷ তখনো যদি কোনো সদস্য তাঁর আপত্তিতে অনড় থাকেন, তাহলে তাঁকে নিয়োগ করা যাবে না৷