মৌমাছি কাজে লাগাতে এক ঢিলে দুই পাখি
২৩ জুলাই ২০১৯মৌমাছির গুন গুন শব্দের রকমফের আধুনিক মধুর ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ মৌমাছি বিশেষজ্ঞ হিসেবে মিশাল রোইসমান মনে করেন, ‘‘শব্দ আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ তার মাধ্যমে মৌচাকের মধ্যে কার্যকলাপ বোঝা যায়, মক্ষীরানির অবস্থা বোঝা যায়, রানি নতুন না পুরানো – তাও টের পাওয়া যায়৷''
মৌমাছি পালকের এমন হস্তক্ষেপের ফলে মৌমাছিরা মানসিক চাপের মুখে পড়ে৷ সে কারণে কয়েক দিনের জন্য তাদের বিরক্ত করা হয় না৷ কিন্তু তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ যেমন রানির মৃত্যু হলে বাকি সব মৌমাছিও মারা যেতে পারে৷ মিশাল রোইসমান বলেন, ‘‘এর সমাধান পাওয়া গেছে৷ আমাদের এই পণ্যের মধ্যে একাধিক সেন্সর রয়েছে৷ মৌচাকের মূল অংশে সেটি বসাতে হয়৷ তখন ২৪ ঘণ্টা ধরে মৌচাকের উপর নজর রাখা যায়৷ সেই তথ্য ক্লাউড সার্ভারে আপলোড করে আমাদের অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে মৌচাকে কী ঘটছে, তা বিশ্লেষণ করা হয়৷''
যন্ত্রের সেন্সর লাগাতার মৌচাক পর্যবেক্ষণ করে চলে৷ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, মৌমাছির গুন গুন শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়৷ এই সব সূচকের মধ্যে কোনো তারতম্য ধরা পড়লে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তা সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে৷ যেমন মৌমাছিদের কোনো রোগ হলে তা ধরা পড়ে৷ অনলাইন পদ্ধতিতে মৌমাছি পালককে বার্তা পাঠানো হয়, যাতে তিনি দ্রুত উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন৷ এছাড়াও নতুন একটি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ বিশেয়ারিং ওয়েবসাইটের সহ প্রতিষ্ঠাতা নিল্স গ্যার্বার বলেন, ‘‘প্রথম দিকে মানুষকে একটু বোঝাতে হয়৷ বিশেষ করে বাইরে থেকে কেউ এসে বলে যে আমি তোমার মৌমাছিগুলি চাই, তখন শুরুতে মনে সংশয় হয় বৈকি৷''
নিল্স গ্যার্বার মৌমাছিদের ১০০টি বসতি জার্মানির উত্তরে নিয়ে এসেছেন৷ এক মৌমাছি পালনকারী সেগুলি তাঁকে দিয়েছিলেন৷ মৌমাছিগুলিকে আপেল গাছ পরাগিত করার কাজে লাগানো হচ্ছে৷ গ্যার্বার গোটা জার্মানিতে চাষিদের কাছে মৌমাছি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন৷ মৌমাছিদের বিলুপ্তির প্রবণতা রুখতে তিনি এভাবে অবদান রাখছেন৷ চাষিরা সরাসরি তাঁর ওয়েবসাইটে মৌমাছির চাহিদার কথা জানাতে পারেন৷
এক অ্যালগোরিদম তখন নথিভুক্ত মৌমাছি পালনকারীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে সেই সব বসতির সন্ধান দেয়, যেগুলি কাজে লাগানো সম্ভব৷ গ্রিসেল্ডিস ডালমান নামের এক চাষি তাঁর ফলের গাছের জন্য একশো মৌমাছি উপনিবেশের বরাত দিয়েছেন৷ ভাড়া করা মৌমাছি কাজে লাগানোর জন্য অবশ্য উপযুক্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন৷ ডালমান বলেন, ‘‘উদ্ভিদের সুরক্ষা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ খোলা মনে বিষয়টি বিবেচনা করতে হয়৷ এমন কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত নয়, যা মৌমাছিদের জন্য বিপজ্জনক৷ নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে বোঝাপড়া থাকতে হবে৷ দিনের বেলায় মৌমাছিদের ঝাঁককে বিরক্ত না করতে কিছু কাজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে৷''
জার্মানির উত্তরে বি-হিরো কোম্পানির প্রযুক্তির প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি৷ প্রক্রিয়াটি এখনো পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে৷ তার আওতায় ভাড়া করা মৌমাছির ক্ষেত্রে সাফল্যের প্রয়োজন৷ এই পরীক্ষার ব্যয় হিসেবে চাষিকে প্রায় ৬,০০০ ইউরো দিতে হচ্ছে৷ তার মধ্যে ১,৫০০ ইউরো দালাল সংস্থার কাছে চলে যাচ্ছে৷ গ্রিসেল্ডিস ডালমান বলেন, ‘‘আমাদের ভাগ্য ভালো ছিল, যে আমাদের একটি ভবন বাকিগুলির থেকে একটু দূরে অবস্থিত৷ তখন আমরা এই সুযোগ সদ্ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলাম৷ পরে দেখলাম, খুব ভালো কাজ হয়েছে৷''
দুই সপ্তাহের কাজের পর মৌমাছিগুলি ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ নিল্স গ্যার্বার বলেন, ‘‘ভাগ্য ভালো, যে এখনো পর্যন্ত আমরা সব মৌমাছি অক্ষত অবস্থায় আনতে ও ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি৷''
মৌমাছি ভাড়া দেবার এমন ব্যবসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ জার্মানির শখের মৌমাছি পালনকারীদের সাহায্যে গাছপালা পরাগিত করা সম্ভব হচ্ছে৷
মিলিটাডেস শ্মিট/এসবি