ম্যার্কোজি
১৫ এপ্রিল ২০১২নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইউরো সংকট৷ ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজিকে সব ধরণের সাহায্য এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ রসিকতা করে দুই নেতাকে একসঙ্গে ‘ম্যার্কোজি' বলা হচ্ছে৷
ফেব্রুয়ারি মাসে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সেই সাক্ষাৎকারে ম্যার্কেল সরাসরি এবং বেশ স্পষ্ট করেই বলেন যে, নিকোলা সার্কোজির নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সব ধরণের সাহায্য এবং সহযোগিতা তিনি করবেন৷ এর লক্ষ্য ছিল জার্মানির সাফল্যের মডেলটি ফ্রান্সের আরো কাছে নিয়ে যাওয়া৷ বিশেষ করে বিভিন্ন ধরণের সংস্কারের সাহায্যে ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা কীভাবে ম্যার্কেল সামলেছেন, তা দেখানো এবং শেখানো৷ কথাগুলো জানান ‘জার্মান কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেসনস'-এর ক্লেয়ার দেমেসমে৷ তিনি বললেন, ‘‘দেখুন, জার্মানি কিন্তু যা করতে চেয়েছে তা পেরেছে৷ এটা খুবই কষ্টকর ছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা গেছে৷ কিন্তু আমরা যখন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেই তা ঠিকভাবে করার চেষ্টা করি৷ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তা করি৷ এটা দায়িত্বজ্ঞানের প্রশ্ন৷ কোন কাজ কতোটা গুরুত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে তা ঠিক করার, সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়৷''
বিভিন্ন ধরণের সংস্কারের কথাও নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নিকোলা সার্কোজি বলেছেন৷ জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্রোডার বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলে ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ সেই একই পথে এগোচ্ছেন সার্কোজি৷ এ প্রসঙ্গে ক্লেয়ার দেমেসমে জানান,‘‘ইউরোপে একটি আধুনিক বামপন্থী শিবির রয়েছে৷ এদের চিন্তা-ভাবনা অন্য রকম৷ এই দলটি বিভিন্ন ধরণের সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পিছপা হবে না৷ কিন্তু ফ্রান্সে যে বামপন্থী দলটি রয়েছে সেই দলটির চিন্তা-চেতনা অনেকটা সেকেলে৷ হ্যাঁ, আমি সমাজতন্ত্রী দল এবং ফ্রঁসোয়া ওলঁদ'এর কথা বলছি৷ আর তাই নিকোলা সার্কোজি সেই দলটি বিভিন্নভাবে আক্রমণের চেষ্টা করেছেন৷''
কিন্তু তারপরেও নিকোলা সার্কোজির কৌশল যেন কাজ করছে না৷ যদিও ফ্রান্সের মানুষরা জানেন যে, জার্মানি বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়ে সাহায্য করছে আর তাছাড়া জার্মানিতে অর্থনৈতিক মন্দার কোনো প্রভাব পড়েনি৷ কিন্তু তারপরেও ‘জার্মানির মডেল'-এ তারা যেন ঠিক মেনে নিতে পারছে না৷ ক্লেয়ার দেমেসমে আরো জানান, ‘‘একথা ঠিক যে ফ্রান্সের মানুষরা কোনোভাবেই এই মুহূর্তে কোনো মডেল অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়৷ সেটা যতো ভালো মডলেই হোক না কেন৷ আর বিশেষ করে তা যদি জোর করে চাপিয়ে দেয়ার মতো হয় বা আশেপাশের দেশ থেকে হয় - তাহলে তো কথাই নেই! ফ্রান্সের মানুষরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে চায়৷ তারা তাদের সার্বভৌমত্ব কিছুতেই হারাতে চায় না৷ অন্য কোনো দেশ বা অন্য কোনো রাজনীতিক তাদের নির্বাচনে কোনো ধরণের প্রভাব বিস্তার করুক, তা তারা একেবারেই পছন্দ করছে না বা করবে না৷ সার্বভৌমত্ব ফরাসিদের জন্য শুধু একটি শব্দ নয়৷ এর গুরুত্ব অপরিসীম৷ প্রতিটি নির্বাচনেই দেখা গেছে যে, এই শব্দটি ব্যবহার করছে প্রতিটি প্রার্থী৷ তাই প্রতিটি ভোটার যদি কোনভাবে টের পেয়ে যায় যে তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই তাহলে তারা আর যাই হোক কিছুতেই সন্তোষ প্রকাশ করবে না৷''
একই কথা বলেন ফ্রি ইউনিভার্সিটি বার্লিনের এতিয়েন ফ্রঁসোয়া৷ তিনি বিশ্বাস করেন যে, ম্যার্কেলের সাহায্য, প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাস হিতে বিপরীত হবে৷ সার্কোজি যদি ম্যার্কেলের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাহলে তিনি ভোট হারাতে পারেন৷ তিনি জানালেন, ‘‘সার্কোজি এসবের মধ্যে দিয়ে কোনো অবস্থাতেই বেশি ভোট পাবেন না৷ বরং এর উল্টোটা হবে৷ এর মধ্যে অনেকে হয়তো ধরে নিতে পারে যে, সার্কোজি নির্বাচনে হয়তো হেরেই গেছে৷ তবে সবাই অপেক্ষা করছে প্রথম রাউন্ডের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর৷ সেখানে কী হয়, কে এগিয়ে থাকে সেটাই হল দেখার বিষয়৷ তবে একটি বিষয় পরিষ্কার – তা হল, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সাহায্য এবং প্রতিশ্রুতি নিকোলা সার্কোজিকে বিজয়ীর মুকুটটি পরাতে সক্ষম হবে না৷''
এছাড়া নিকোলা সার্কোজি শেঙেন দেশগুলোর সঙ্গে যে চুক্তি রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন৷ এর ফলে অনেক ফরাসিই বিরক্ত হয়েছে৷ তারা ঝুঁকে পড়ছে অন্য দলগুলোর দিকে৷ এরপর ঘটলো তুলুজের ঘটনা৷ সেই ঘটনার সুযোগ নিলেন সার্কোজি৷ পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন স্কুলের বাচ্চাদের৷ সহানুভূতি জিতলেন অনেকেরই৷ দেশের নিরাপত্তাকে স্থান দিলেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে৷ এবার শুধু অপেক্ষার পালা৷
প্রতিবেদন: ডাফনে গ্রাটভোল/মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন