ক্ষমতাকেন্দ্রে পালাবদল
৩০ অক্টোবর ২০১৮প্রায় ১৮ বছর পর জার্মানির সিডিইউ দলের প্রধান হিসেবে বিদায় নিচ্ছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তবে চ্যান্সেলর হিসেবে কার্যকাল শেষ করতে চান তিনি৷ যদিও নির্ধারিত ২০২১ সাল পর্যন্ত মহাজোট সরকার টিকে থাকবে, অনেকেই এমন সম্ভাবনা দেখছেন না৷ কারণ, দুর্বল শরিক হিসেবে এসপিডি অদূর ভবিষ্যতে মহাজোট ত্যাগ করতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে না পারলে আগাম নির্বাচন ডাকতে হবে৷
আপাতত সিডিইউ দলের আগামী নেতা কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ম্যার্কেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আনেগ্রেট ক্রাম্প কারেনবাউয়ার এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান প্রার্থী হতে চান৷ সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো প্রাক্তন নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস-ও আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেটের নামও শোনা যাচ্ছে৷ তবে শেষ পর্যন্ত কে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন পাবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ রীতি অনুযায়ী সেই ব্যক্তি আগামী নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হতে পারেন৷ ফলে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ অবশ্য ম্যার্কেল নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে সোমবার বলেন, এই দুই পদে এক ব্যক্তি না থাকার ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি সচেতন রয়েছেন৷ কারণ, এই দুই ব্যক্তির মধ্যে মতের অমিল হলে সরকার ও দল, দুই পক্ষই দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ তিনি নিজের উত্তরসুরি বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়ায় কোনোরকম হস্তক্ষেপ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷
ম্যার্কেল আচমকা দলের শীর্ষ নেত্রী হিসেবে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করায় বাকি দলগুলি বেকায়দায় পড়েছে৷ বিশেষ করে সরকারের শরিক বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার বাড়তি চাপের মুখে পড়ছেন৷ সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষতির জন্য সাম্প্রতিক কালে তাঁর ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন' আচরণকে অনেকেই দায়ী করছেন৷ দুই সপ্তাহ আগে রাজ্য নির্বাচনে দলের ভরাডুবির দায় মেনে নিয়ে তাঁকেও শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এসপিডি দলের নেতা আন্দ্রেয়া নালেসও একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়ের ফলে চাপের মুখে রয়েছেন৷ বিরোধী সবুজ দল ম্যার্কেল-এর অর্জন ও তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে৷ তবে উদারপন্থি এফডিপি দল, বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে' ও উগ্র দক্ষিণপন্থি এএফডি চ্যান্সেলর হিসেবেও ম্যার্কেলের পদত্যাগের ডাক দিয়েছে৷
এমন পরিস্থিতিতে জার্মানি আন্তর্জাতিক আঙিনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কতটা পালন করতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষ করে ব্রেক্সিট ও ইটালিকে ঘিরে বর্তমান সংকটের মুখে ইউরোপে জার্মানির নেতৃত্ব যখন বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে, এমন এক সময়ে সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন৷ ‘লেম ডাক' সরকারপ্রধান হিসেবে ম্যার্কেল দুর্বল হয়ে পড়লে কী হবে, সেই প্রশ্নের জবাবে ম্যার্কেল নিজে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আঙিনায় এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ তাঁর মতে, এমন নেতারাও ভালোভাবে দেশ শাসন করে চলেছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)