যশোর রোডের গাছ থাকছে?
২৫ জানুয়ারি ২০১৮এ কাজের জন্য আপাতত ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে৷ সরকারি ঘোষণায় স্বস্তি ফিরেছে গাছ রক্ষায় আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তারা তাদের স্বস্তির কথা জানিয়েছেন৷
সড়ক বিভাগ সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, বেনাপোলের ওপারে ভারতীয় অংশের যে সড়কে গাছ রেখে সম্প্রসারণ করা হয়েছে, তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এই সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে৷ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশোধিত এ প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ৷
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ৩২৯ কোটি টাকা এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়৷ কলকাতা ঘুরে এসে প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে৷ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই লেনের প্রশস্ততা বাড়ানোর কথা থাকলেও গাছ রেখেই তা চার লেন করা যায় কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে৷
প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছেন৷ সেটি নিজের ফেসবুক পাতায় শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের আদলে গাছ না কেটেই যশোর রোড বলে পরিচিত যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ বেনাপোলের ওপারে ভারতীয় অংশের যে সড়কে গাছ রেখে সম্প্রসারণ করা হয়েছে, তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এই সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে৷ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশোধিত এ প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ৷''
রায়হান সুলতানা তমা এই সংক্রান্ত সংবাদটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘আন্দোলনে যে কাজ হয়, এটা তারই প্রমাণ৷ সব আন্দোলনকারীদের অভিবাদন৷''
খবরটি পড়ে মন ভালো হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ঋতুপর্ণা দেবমনির৷ তিনি ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘খুব ছোটবেলায় মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘বৃষ্টির ঠিকানা' গল্পের বইয়ে যশোর রোডের কথা পড়েছি৷ তখন খুব কৌতূহল নিয়ে পড়েছিলাম অ্যালেন গিন্সবার্গ এর কবিতাটা৷ আমার মা তার পুরো পরিবার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে শরণার্থী শিবিরে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারা যশোর রোড দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন কিনা জানি না৷ কিন্তু যশোর রোডের কথা শুনলেই আমার তাদের কাছে শোনা মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো মনে পড়ে৷''
যশোর রোডের গাছগুলো না কাটার সংবাদে বেশিরভাগ মানুষই খুশি হয়েছেন৷ তবে এর বিরোধিতা করেছেন অল্প কয়েকজন মানুষ৷ তাদের মধ্যে একজন আহসান হাবিব৷ তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘যশোর রোডের গাছ রাখা না রাখা সরকারের ব্যাপার৷ কিন্তু আমি মনে করি এই জরাঝীর্ণ গাছ কেটে চার থেকে ছয় লেনের রাস্তা জায়গা রেখে তারপর নতুন গাছ লাগানো উচিত৷ তাতে প্রায় ৬০ হাজার গাছ লাগানো সম্ভব৷ আমার মতে এই উন্নয়ন ও যোগাযোগের জন্য এই জরাঝীর্ণ গাছ কাটলে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতির থেকে লাভই বেশি৷ তবে গাছগুলি কাটার পর যখন গাছ লাগানো হবে তখন অবশ্যই ফলজ বনজ এবং ঔষধি গাছ লাগিয়ে এর প্রতিবেশ সৃষ্টি করতে হবে শুধু বনজ গাছ লাগালে পরিবেশ প্রতিবেশ সৃষ্টি হয় না৷ এখন ২১০০ গাছ কাটলে সাময়িক ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে ঐ রাস্তায় প্রতি ৩ মিটার অন্তর অন্তর গাছ লাগালে ১ কিলোমিটারে ৩৩৩ টি গাছ লাগানো যাবে৷''
উল্লেখ্য, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য চলতি বছর ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়৷ এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ৬ জানুয়ারি যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তিনজন সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসকসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় যশোর রোড (যশোর-বেনাপোল) মহাসড়ক প্রশস্তকরণে ২ হাজার ৩১২টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ এরপরপরই পরিবেশবাদী ও স্থানীয়রা গাছ রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামেন৷ গাছ কাটার পক্ষেও কর্মসূচি পালন করে কয়েকটি সংগঠন৷
বিষয়টি আদালতে গড়ালে গত ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট শতবর্ষী গাছগুলো না কাটার জন্য ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ