নববর্ষের উৎসব যখন আতঙ্ক
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪৩১ জানুয়ারি চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনের আনন্দে মেতে ওঠে চীন৷ এ বছর এ উৎসবের আগে বেইজিংয়ের ১৩ হাজার ২০০ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে জরিপ চালায় ডাজু ডটকম৷ চাকরির বিজ্ঞাপন বিষয়ক এই ওয়েবসাইটটির চালানো জরিপ থেকে জানা গেছে, উৎসবের আনন্দ পরিবারের অন্যদের সাঙ্গে ভাগাভাগি করতে বেইজিংয়ের অবস্থাপন্ন কিংবা মধ্যবিত্তরাও যখন ঘরমুখো হয়, তখন আর্থিক দুরবস্থার জন্য বেইজিংয়ে থাকতে বাধ্য হয় শত শত মানুষ৷
চান্দ্র বৎসর বা বসন্ত উদযাপনের সময় চীনারা পরিবারের সদস্যদের কিছু না কিছু উপহার দিয়ে থাকেন৷ বড়দের উপহার দিতে না পারলেও, ছোটদের হাতে লাল একটি খাম অন্তত তুলে দেয়া খুব পুরোনো নিয়ম৷ খামে পুরে দিতে হয় টাকা, অর্থাৎ চীনের মুদ্রায় ইয়েন৷ চীনা ভাষায় লাল ওই খামকে বলা হয় ‘হোঙ্গাবো'৷ এই হোঙ্গাবোর ভয়েই বেইজিং ছেড়ে বাড়ি যাননি অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষ৷
সামান্য আয়ে নিজেদের জীবনটাই কোনোরকমে চলে, উৎসবের সময় বাচ্চাদের হাতে ইয়েনভর্তি হোঙ্গাবো তুলে দেয়ার সাধ্য থাকলে তো! এই অক্ষমতার জন্যই এবার বেইজিং থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে হেনান প্রদেশে নিজের বাড়িতে যেতে পারেননি তিয়ান৷ লজ্জায় শুধু ডাক নামটিই প্রকাশ করার অনুরোধ করে বেইজিংয়ের এই গৃহ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানান, মাসে মাত্র সাড়ে তিন হাজার ইয়েন আয় তাঁর, তাই উৎসবের সময় ভাতিজা, ভাতিজিদের কচি কচি মুখগুলো মনে পড়লেও তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর সামর্থ নেই বলে এবার আর তিনি বাড়ি যাননি৷
বরং বেইজিংয়ে থেকে বাড়তি কিছু টাকা আয় করতে চেয়েছেন তিনি৷ তিয়ান সেই টাকা জমিয়ে গ্রীষ্মের সময় বাড়ি যাবেন৷ এতে দুটো সুবিধা, প্রথমত বাড়তি কিছু আয় হলো, দ্বিতীয়ত হোঙ্গাবোর চোখ রাঙানি থেকে দূরে থাকাও গেল!
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, নির্মাণ শ্রমিক কিংবা গৃহকর্মীর কাজ করে জীবনধারণ করার জন্য গ্রাম থেকে বেইজিংয়ে আসা মানুষদের এক তৃতীয়াংশই এবারের বসন্ত উৎসবে বাড়ি যেতে পারেননি৷ জরিপে অংশ নেয়া ১৩ হাজার ২০০ মানুষের মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগই বাড়িমুখো হননি স্বল্প আয়ের কারণে৷ উৎসবের আনন্দ থেকে দূরে, কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় যাঁরা নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের এক পঞ্চমাংশই জানিয়েছেন যে, এ সময় কাজ করে পরবর্তীতে আরেকটু ভালো থাকতে চেয়েছেন তাঁরা৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি, এপি)